কৃষ্ণচূড়ার অগ্নিবর্ণে ফাগুন এসেছে

মাসুম রানা
Published : 13 Feb 2017, 03:53 AM
Updated : 13 Feb 2017, 03:53 AM

ফাগুন মানে কোকিলের কুহু কুহুতে ঋতুরাজের আগমন। ফাগুন মানে আলতা পায়ে রমণীর খোঁপায় নতুন ফুলের ছোঁয়া। ফাগুন মানে পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার অগ্নিবর্ণে প্রকৃতির পূর্ণ যৌবন।

পাতাঝরা শীতের শেষ বিদায়, একগুচ্ছ সবুজ ধান গাছের চারা আর গাছের ডগায় কচি পাতার আলোড়ন, পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ, মৌ বনে গুনগুন গান আপনাকে মাতিয়ে তুলবে গন্ধরাজের উদাস ঘ্রাণে।

একটা সময় ছিল ১৩ই ফেব্রুয়ারি বা ১লা ফাল্গুন আসলেই বসন্ত শুরু মনে রাখার টাইম ছিল না। স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রকৃতির পরিবর্তন চোখে পরা মানেই বসন্ত বা ফাল্গুন ছিল। স্কুলে ঘটা করে তেমন কোনো অনুষ্ঠান হতো না। ক্লাসের মেয়েগুলোর মধ্যেও তেমন কোনো আমিষের লক্ষণ ছিল না যে বসন্ত উদযাপন করবে। তবে হ্যাঁ, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই ভাষা দিবস পালন করা নিয়ে সবার মধ্যেই একটা আমেজ বিরাজ করতো।

স্কুল থেকে ফেরার পথে শুধু কাল্পনিক ফ্রেমে প্রকৃতির সৌন্দর্য বন্দী করতাম। আহ! কেনো যে তখন ক্যামেরার সহজলভ্যতা ছিলনা। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আবার গোধূলী বিকালে পুকুর পাড় গিয়ে সূর্যাস্ত দেখা, পাখিদের নীড়ে ফেরা দিয়ে রাত্রি নেমে আসা।

ক্লাস নাইন-টেন আমি হোস্টেলে ছিলাম। রাতে খাবারে পরই হোস্টেলের বাইরে সবাই মিলে চা খেতে যেতাম। এখনো মনে আছে আমি রং চায়ের পোকা ছিলাম। রেডি টি নামের একটা চা ছিল। খারাপ ছিল না, বেটার দেন দুধ চা। যাক চায়ের গল্পতে না যাই। সবাই দোকানের ভিতরে বসলেও আমি বাইরে বসতাম। হিম হিম বসন্ত বাতাসের সাথে রং চায়ের স্বাদ কেমন হতে পারে ফ্রেন্ডসদের বুঝানো তখন অনেক কঠিন ছিল।

ঢাকায় চলে আসলাম, মতিঝিল টি এন্ড টি কলেজ। দুই বছরের ছোট্ট কলেজ লাইফ। বেইলী রোডের পিঠা ঘরের পাশের রোড দিয়ে একটু সামনেই আমরা একাউন্টিং প্রাইভেট পড়তাম। বন্ধুরা ডিসাইড করলো এই সাপ্তাহে সবাই আসবে কিন্তু স্যারের বাসায় যাবে নাহ। কারন ওইদিন ১লা ফাল্গুন!! মেয়েরা এক এক জন বায়না ধরলো খোঁপার ফুল কিনে দিতে হবে আর আমার মাথায় গ্রামে যাওয়ার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কত দিন গ্রামে যাই না, এই সময়টাই গ্রামের বেস্ট টাইম।

নাহ! শেষ পর্যন্ত গ্রামে যেতে পারলাম না। বন্ধুদের সাথে বেইলী রোডেই আসলাম। আরে বাহ! গ্রামের পাখির শব্দ আর এইখানের পাখির শব্দের অর্থ দেখি দুই রকম! ফুলের অলংকারে রমণীদের এতো সুন্দর দেখায় তা আমার প্রথম দেখা। মোবাইলের ভিজিএ ক্যামেরার ফটো কোয়ালিটি ভাল না হলেও স্মৃতি ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল।

ড্যাফোডিলে পড়ার সময় থেকেই রবীন্দ্র সরোবরে বসন্ত উৎসব দেখছি। ঢাকার মধ্যে এর চেয়ে প্রাণবন্ত বসন্ত বরণ অন্য কোথাও নাই। একটা সময় পিঠা উৎসব হতো এখন তা হয় না। যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে বসন্তের ভরা যৌবন, ফাল্গুনের ঝলমল ফাল্গুনী পূর্নিমা, পলাশ-শিমুলের রক্তিম সকাল, ধানের শীষে শীতের শেষ শিশিরবিন্দু ছোঁয়ার জন্য ঢাকার বাইরে চলে যান।

পাবলো নেরুদা একটা কথা বলেছিলেন, 'সব ফুল কেটে ফেলতে পার, তবু বসন্তের আগমন আটকাতে পারবে না"। আর আমি বলবো কৃত্রিম উদযাপন আর কনসার্ট করে বসন্তের প্রকৃত যৌবন পাওয়া যাবে না। সকাল হবে, নীল ভ্রমরা হাসবে। প্রভাতে অগ্নিবর্ণ সূর্য মামার সাথে সবার হাসি ফুটক।

~ শুভ বসন্ত ~