ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে আমরা কতটা সচেতন?

মাসুম রানা
Published : 26 July 2017, 06:51 PM
Updated : 26 July 2017, 06:51 PM

ঢাকা শেষ! ঢাকার প্রতিটা রাস্তা নদী হয়ে গেছে! ঢাকা আর ঢাকা নাই! দুই মেয়র খারাপ! উন্নয়নের নামে কিছুই করে নাই! যানজট! এই কথাগুলো শুনতে শুনতে অস্থির হয়ে উঠছি। গত কয়েকদিনে যেই পরিমান বৃষ্টিপাত হয়েছে এর পানি যদি যথাযথ ভাবে ড্রেন দিয়ে না সরতে পারে তাহলে তো রাস্তাগুলো নদী হবেই। আমি স্বীকার করি ঢাকার মেয়রদের আরো বেশি সচেতন হওয়ার দরকার ছিল। যে যে স্থানে ড্রেনেজের কাজ চলতেছে তা আরো দ্রত গতিতে শেষ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু ধীরগতির কাজে যেমন সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ তেমনি জলাবদ্ধতা এবং যানজট। ফ্লাইওভারের কাজের কথা নাই বললাম। ওইসব এলাকা এমনিতেই নদী হয়ে আছে। ফ্লাইওভার করে উপরে কিন্তু নিচের রাস্তাগুলো কেন নদী বানিয়ে রাখে তা একমাত্র প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়াররা বলতে পারবে।

এইবার আসি আমাদের কথায়। এই জলাবদ্ধতার জন্য আমরা কতটা দায়ী? আমাদের করনীয় কী? শুধু সরকার আর মেয়রকে দোষ দিয়ে যাচ্ছি, আমরা কি সরকার বা মেয়রদের কথা মানছি? আমরা কি আইন মানি? আমাদের উপর কি আইনের প্রয়োগ করা হয়? দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কি দায়িত্ব পালন করছে? নাহ! কেউ কিছুই মানছি না। শুধু একে ওপরের উপর দোষ দিয়ে যাচ্ছি।

বলুন তো, প্রতিদিন আপনার ব্যবহত ময়লা, প্লাস্টিক, পলিথিন এর মধ্যে কত পার্সেন্ট ডাস্টবিনে ফেলেন, কত পার্সেন্ট রাস্তায় ফেলেন? অনেকেই বলে সবাই ফেলে আমি একা এতটা সচেতন হয়ে কিছু হবে?  আমার জবাব, অবশ্যই হবে। পরিবর্তন এবং অভ্যাসটা একজন একজন করেই করতে হয়। তারপর দেখেন কয়েক বছর পর এর পার্সেন্টেজ কততে দাঁড়ায়।

আপনি স্টুডেন্ট, অথচ আপনি ক্লাসে শিখছেন একটা ক্লাসের বাহিরে এসে করছেন আরেকটা! আপনি নিজেই আপনার ক্যাম্পাসকে সুন্দর রাখতে পারেন না। ময়লা আবর্জনায় সব সিঁড়ি থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের ফুলের গাছের টবে পর্যন্ত ফেলে রাখেন। কেউ কিছু বললে, বলেন মামা (ক্লিনার) আছে পরিস্কার করার জন্য! হুম বলতে পারে তার সাথে ঢাকার জলাবদ্ধতার সম্পর্ক কোথায়?

সম্পর্ক আছে। এই আপনি যখন রিকশা করে ঘুরে বেড়ান তখন পানিটা খেয়ে বোতলটা রাস্তায় ফেলতে দ্বিধা বোধ করেন না। চিপস খেয়ে খালি প্যাকেটটা কোথায় ফেলতে হবে তা আপনি জানেন না। আমরা এখন উন্নত দেশে পরিনত হতে পারিনি। কিন্তু আপনি কিন্তু প্রতিনিয়ত উন্নত দেশের কার্যকলাপ ফলো করেন। তবে কেনো তা আপনার দেশের বা আপনার শহরের বেলায় নয়? ঢাকার ড্রেনগুলো কি আপনার ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের বোতল এবং প্যাকেটে ব্লক হয়ে যায় না?

প্রতিদিন সকাল হওয়ার আগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ক্লিনাররা ঢাকাকে চকচকে করে রাখে। বিশ্বাস না হলে একদিন ভোরে এই প্রাণের শহরটাকে একটু ঘুরে দেখেন। অথচ আমরা ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাই রাস্তায় ময়লা ফেলতে ফেলতে, ভার্সিটিতে বিদ্যা অর্জন করতে যাই রাস্তায় ময়লা ফেলতে ফেলতে। পরিবেশবাদী মিটিং করতে যাই রাস্তায় ময়লা ফেলতে ফেলতে! আমরা তো সবাই জমিদার! সবকিছুই দুই মেয়র করবে! আমার ভাষায় আমরা হচ্ছি এক টাইপের অভদ্র জমিদার।

ঢাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন মানুষ প্রবেশ করে, তারা বেশিরভাগই মফস্বল থেকে আসে। তাদের মধ্যে এখনো ওই অভ্যাসটা নাই। কিন্তু তারা যদি ঢাকায় প্রবেশ করে দেখে সবাই নির্দিষ্ট স্থানে (ডাস্টবিন) ময়লা ফেলে, যেখানেসেখানে ময়লা ফেললে পুলিশ জরিমানা করে। অথবা কেউ একজন ময়লা ফেললেই আরেকজন পাশ থেকে বলছে, ভাই-বোন প্লিজ ময়লাটা কষ্ট করে একটু ডাস্টবিনে ফেলুন, না হয় পুলিশ আপনাকে জরিমানা করবে। এটাও বলতে পারেন আমরা সবাই নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলি প্লিজ আপনিও ফেলুন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি মানুষ কখনোই বেখুশি হবে না। আমাদের দেশের একজন শ্রমিক উন্নত দেশে যেয়ে কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে সেই দেশের আইনকানুন এবং পরিবেশের সাথে খাপখাইয়ে নেয়।

আমরা কেনো আমাদের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারিনা? আমি একা করে কী হবে? আমি একা সচেতন হয়ে কী হবে? আমি একা রাস্তায় ময়লা ফেলা বন্ধ করলেই কি সব বদল হয়ে যাবে? অবশ্যই হবে! শুরুটা করুন। আর আমাদের দেশের পলিটিশিয়ান এবং ঠিকাদারদের প্রতি হাত জোড় অনুরোধ, প্লিজ আপনাদের ট্রেন্ডার থেকে যথাযথ প্রফিট করেই আমাদের প্রানের শহরের সকল প্রজেক্টগুলো দ্রুত শেষ করুন। না হয় ঢাকা মরে যাবে। আমাদের সকলের সচেতনতায়ই আমাদের ঢাকা বাঁচবে।

আপনি আমি সচেতন হলেই ঢাকা বাঁচবে। অবশ্যই এই জলাবদ্ধতা দূর হবে। যানজট দূর হয়ে। আলো আসবেই। আশাবাদী।