মরে গিয়েও শান্তি পেল না রাজন, রাকিব!

আমিনুল হক পলাশ
Published : 11 August 2015, 03:48 AM
Updated : 11 August 2015, 03:48 AM

সিলেটের রাজন হত্যাকান্ড নিয়ে দেশব্যাপী মানুষ সোচ্চার হয়েছিলো। অনলাইন ও অফলাইনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলো সচেতন জনগন। সকলের দাবির মুখে সরকার তথা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। অপরাধীরা দ্রুত ধরা পড়েছে। এমনকি মূল আসামি বিদেশে পালিয়ে গিয়েও আইনের চোখ ফাঁকি দিতে পারে নি। সৌদীতে ধরা পড়েছে। আসামীরা সবাই স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আশা করা যায় দ্রুত বিচার নিস্পত্তি হয়ে অপরাধীরা সর্বোচ্চ সাজা পাবে। এখন আমাদের দায়িত্ব নিয়মিত এই বিচারের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া যেন আইনের ফাঁক গলে অপরাধীরা পার পেয়ে না যায়।

এতটুকু লিখে শেষ করতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু খবরের পিছনেও খবর থাকে। রাজন হত্যাকান্ডকে পুঁজি রীতিমতো বাণিজ্য শুরু হয়ে গিয়েছে। তার বাড়িতে স্থায়ী মঞ্চ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। নিয়মিত বিভিন্ন লোক দেখানো প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ হচ্ছে। বিপুল অঙ্কের আর্থিক সহায়তা উঠানো হচ্ছে। নির্মম হলেও সত্য যে, পুত্রশোক ভুলে রাজনের পরিবারও নতুন জমি, নতুন বাড়ি, ব্যাঙ্ক একাউন্ট এসব নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই সাথে তার বাড়িতে সমবেদনা জানাতে আসা মানুষদের আপ্যায়ন তো আছেই। মৃত রাজন এখন ব্যবসার মূলধনে পরিণত হয়েছে।

পৈশাচিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে নির্মম ভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে খুলনার রাকিব। দুবেলা দু মুঠো ভাত খাবার জন্য যাকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে গ্যারেজে কাজ করতে হতো। এলাকাবাসী এই ঘটনার মূল হোতাদের গণপিটুনী দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। পুলিশও এখন পর্যন্ত কার্যকর ভাবে তদন্ত কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রেও আশা করি অপরাধীরা সর্বোচ্চ সাজা পাবে।

দুঃখজনক হলেও সত্যি এটা নিয়েও বাণিজ্য হচ্ছে। গতকাল তিনট্রাক ভাড়াটে লোক দিয়ে ঢাকায় রাকিব হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মিছিল হতে দেখলাম। প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও হয়েছে। যে রাকিব অর্থাভাবে পড়াশোনা বাদ দিয়ে কিশোর বয়সেই শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলো, জীবিত থাকতে একটিবার যার খোঁজ নেয়নি এমন অনেকে আজ বড় দরদী হয়ে উঠেছে। স্বীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে তারাই লোক দেখানো প্রোগ্রাম করছে, নিশ্চিতভাবেই বুঝা যাচ্ছে এখানেও আর্থিক লেনদেন শুরু হয়ে গিয়েছে।

শুধুমাত্র ব্যবসায়িক মানসিকতার কারণে অনেক শুভ উদ্যোগের করুন পরিণতি দেখেছি চোখের সামনে। এই দুটি ঘটনা তার সর্বশেষ উদাহরন। যেকোন ঘটনাকে পুঁজি করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে মেতে উঠা লোকের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে এই সমাজে। জীবিত মানুষ অপেক্ষা লাশের দাম এই দেশে সবসময় বেশি হয়। লাশ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে আমাদের বিন্দুমাত্র বুক কাঁপে না। এসব দেখে না ফেরার দেশে থাকা মানুষগুলো কি নিদারুন কস্টই না পায়। বেঁচে থাকতে এই সমাজে তাদের যোগ্য জায়গা হয়নি, মরে গিয়েও তারা শুধুমাত্র ব্যবসার উপকরনই থেকে গেলো।

রাজন, রাকিব মৃত্যুর পূর্বে অমানুষিক যন্ত্রনা ভোগ করে গিয়েছে। আর তাদের এই নির্মম ঘটনাকে পুঁজি করে ব্যবসা ফেঁদে তাদের আত্মাকে কস্ট দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ধিক্কার এই মুনাফালোভী অমানুষদের!

মাফ করে দিস রাজন, মাফ করে দিস রাকিব। মরে গিয়েও তোরা শান্তি পেলি না।