স্মৃতিতে সালমান

আমিনুল হক পলাশ
Published : 6 Sept 2015, 10:05 AM
Updated : 6 Sept 2015, 10:05 AM

১৯৯৩- ১৯৯৬ মাত্র চারটি বছর। ২৬ টি- হ্যাঁ, মাত্র ২৬ টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এই অল্প সময়েই অধিষ্ঠিত হয়েছেন জনপ্রিয়তা এবং সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে, পরিণত হয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবেচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রে। তাঁর হিরন্ময় দ্যুতিতে ভাস্বর হয়েছে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র। এতো অল্প সময়ে মানুষের মনোজগতে এতো দৃঢ় অবস্থান পৃথিবী তে খুব অল্প মানুষই তৈরী করতে পেরেছে।

হ্যাঁ, আমি সালমান শাহর কথা বলছি। আমি একজন মহানায়কের কথা বলছি। আমি একজন সুপারস্টারের কথা বলছি, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল চলচ্চিত্র জগতের ক্ষুদ্র গন্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র দেশব্যাপী। আজ ৬ সেপ্টেম্বর। সারা দেশের অগণিত ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ১৯৯৬ সালের এই দিন সালমান শাহ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে বেশ কয়েকজন ভক্ত আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল। এ থেকেই বোঝা যায় ভক্তদের আবেগের কত উচ্চ শিখরে অসীন ছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্রে অনতিক্রম্য ঔজ্জল্য ছড়ানোর পাশাপাশি উনার সবচেয়ে বড় অবদান হল তিনি নিজেকে এদেশের তরুণদের কাছে ফ্যাশন এবং স্টাইল এর আইকন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। ভাবতে অবাক লাগে আমরা এখন পর্যন্ত যে ফ্যাশন ফলো করি তার বেশিরভাগই এসেছিল সালমান শাহর হাত ধরে, তাও প্রায় দুই দশক আগে। জিন্স, টি শার্ট, সানগ্লাস, হুডিওয়ালা গেঞ্জী, জ্যাকেট, বাইক চালানো, কান ফোড়া করা, মাথার রুমাল বাঁধা, ক্যাপ উলটা করে পড়া, লম্বা চুল রাখা সহ আরও কত যে নিত্য নতুন স্টাইল সালমান জনপ্রিয় করেছেন তা গুনে শেষ করা যাবে না। তাঁর অভিনীত 'নয়ন' নাটকে দেখানো হাত টেবিলে রেখে পাঁচ আংগুলের ফাকে ফাকে ছুড়ি চালানো প্র্যাকটিস করতে গিয়ে কত তরুনের হাত যে রক্তাক্ত হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। চলচ্চিত্র জীবনের চারটি বছর হ্যামিলনের বাশিওয়ালার মতোই উনি তাঁর ভক্তদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখছিলেন।
বাংলা চলচ্চিত্র আকাশের ধূমকেতুর মত আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁর। চলেও গিয়েছেন অকালেই। 'ভিনি ভিডি ভিসি' প্রবাদের এত ভালো উদাহরণ সালমান ছাড়া আর কেউ আর হতে পারেনা। যতদিন বাংলা চলচ্চিত্র থাকবে ততদিনই সালমান বেঁচে থাকবেন অগুনিত ভক্তের স্মৃতির পাতায়। নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, এমন একজন নায়ক আমরা আর কখনোই পাব না।
সালমান, তোমার একটি সিনেমার গান এর সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, আকাশের যে ঠিকানায় তুমি থাক না কেন, সেই ঠিকানায়ই আমরা চিঠি লিখে যাব কারণ আমাদের, "ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছ তুমি হৃদয়জুড়ে"।