RAB কি ‘ভাড়াটে গুণ্ডা’ হিসেবে কাজ করছে?

পলাশ প্রিয়ম
Published : 23 Sept 2011, 05:21 AM
Updated : 23 Sept 2011, 05:21 AM

এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB) প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা কারণে একইসঙ্গে নন্দিত ও নিন্দিত হয়ে আসছে। জঙ্গিসহ সন্ত্রাস দমনে তাদের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কেউ কেউ। তবে র‌্যাব সদস্যদের কর্মকাণ্ড বর্তমানে সন্দেহাতীতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাদের 'ক্রসফায়ার' বা অধুনা 'বন্দুকযুদ্ধের' গল্প এখন আর কেউ বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না। সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন এর নেপথ্যে কী ঘটনা ঘটে। তবে র‌্যাবের এই 'অভিযানিক কার্যক্রম' শুধু চিহ্নিত-ঘৃণিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেই ঘটলে হয়তো পরিস্থতি এমন হতো না। অনেক নিরীহ-নিরপরাধ মানুষই যে র‌্যাবের হাতে নিহত হয়েছেন, তা এখন প্রমানিত। শুধু নামের মিলের কারণে যাচাই-বাছাই না করে বাপ্পীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা উচ্চপর্যায়ের তদন্তেও প্রমান হয়েছে। একইরকম ঘটনার শিকার ঝালকাঠির কলেজছাত্র লিমনের কাহিনি তো এখন সবারই জানা। এসবের বাইরেও রয়েছে জানা-অজানা আরো অনেক ঘটনা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, কিছু মানুষ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের পরিবার জানিয়েছে। বিপরীতে র‌্যাব তাদের গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেনি। সেইসব মানুষের এমনকি লাশের খোঁজও মিলছে না বছরের পর বছর। র‌্যাবের কর্তাব্যক্তিরা গণমাধ্যমের কাছে এ সংক্রান্ত দায় অস্বীকার করেছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিরা 'অপহৃত' হয়েছেন বলে ধারণার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের খুঁজে পেতে বা 'গ্রেফতার' রহস্যের কিনারা করতে র‌্যাবের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর নিখোঁজ মানুষের তালিকায় কিছু অত্যন্ত সাধারণ মানুষও রয়েছেন। তাদের 'অপহরণ' বা 'গুম' করার কোন কারণই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ স্বজনদের স্পষ্ট অভিযোগ র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট ব্যটালিয়নের নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধ। অভিযোগকারীরা বলছেন, র‌্যাব এখন মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তিতে 'ভাড়াটে গুন্ডা' হিসেবে কাজ করছে। প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে টাকার বিনিময়ে র‌্যাবকে কাজে লাগাচ্ছে একটি মহল। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকলেও কিছু যায় আসে না। পেশাগত পরিচয় ব্যবহার করে অসাধু র‌্যাব সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তিকে 'গ্রেফতারের' পর গুম করছে। তাই তাদের লাশও মিলছে না। এই পথে আসা টাকার ভাগ সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পর্যন্ত পৌছায় বলে এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেন না। সুনির্দিষ্ট প্রমান না থাকলেও এই অভিযোগের পাল্লাই দিনদিন ভারী হচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো-এ সংক্রান্ত সব অভিযোগ শুধু র‌্যাবের বিরুদ্ধেই। থানা পুলিশ, ডিবি, সিআইডি, এসবি বা আইন প্রয়োগকারী অন্য কোন সংস্থার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।
কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে 'গ্রেফতারের' পর গত দেড় বছর ধরে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। র‌্যাব সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করেন বলে অভিযোগ দলীয় নেতা-কর্মী ও তার পরিবারের। দু' বছর আগে লালমাটিয়ার বাসা থেকে যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেনকে র‌্যাব গ্রেফতার করে বলে তার স্ত্রী দাবি করেন। আজ অবধি তিনিও নিখোঁজ রয়েছেন। একইভাবে খোঁজ মেলেনি আড়াই বছর আগে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে গ্রেফতারকৃত রাজধানীর ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পদক তুষার ইসলাম টিটুর। এছাড়া র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম, রাজধানীর ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী সুজন, জহির রায়হান হিরণের মতো আরও অনেকেরই সন্ধান পেতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের স্বজনরা। কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রেফতারের পর 'ক্রসফায়ারের' ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।

২১ সেপ্টেম্বর রাতে একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের টক-শো অনুষ্ঠানে একজন মানবাধিকার নেত্রী এ প্রসঙ্গে বললেন, দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর কয়েকজনের লাশ বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। এসময় দেখা গেছে, মৃতের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা। অর্থাৎ তাদের অনেক আগেই হত্যা করা হয়। আমার মনে হয় তিনি আরো একটি কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন, হত্যার পর লাশগুলো মরচুয়ারির মতো কোন স্থানে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এ কারণেই লাশগুলো ভীষণ ঠান্ডা ছিল। আমার অনুমান, তবে ঘটনাচক্রে এমন হওয়া অসম্ভব বলে মনে হয় না। র‌্যাবের বিরুদ্ধে এখন দেশী-বিদেশী অনেক মানবাধিকার সংগঠনই সোচ্চার। র‌্যাবকে বিলুপ্তির দাবি পর্যন্ত তোলা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, র‌্যাবের সব সদস্য নিশ্চয়ই বিপথগামী হতে পারেন না। তবে যেসব অসাধু সদস্য র‌্যাবকে কলঙ্কিত এবং যেসব ঘটনা র‌্যাবের ভুমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, সেসব নিয়ে কার্যকর পদপে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। তা না হলে হয়তো বিলুপ্তিই হবে র‌্যাবের নিয়তি।