নিজের বোকামি দেখলে হাসি পায়

পথের পথিক
Published : 31 Jan 2012, 07:46 AM
Updated : 31 Jan 2012, 07:46 AM

এই লেখা শুরু করতে বসেছি ফেসবুকে শেয়ারবাজারের এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর আত্ম্যহত্যার ঘটনার পোস্টটি দেখে। খুব ছোটবেলায় যখন মাত্র আওয়ামীলীগ, বিএনপি চিনতে শুরু করেছি, তখন আমার মনে প্রশ্ন ছিল একটা রাজনৈতিক দল যাদের দেশের স্বধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার ঐতিহ্য আছে তাদের সামনে দাঁড়ানোর মত রাজনৈতিক দল তো আর এই দেশে নেই- অভিজ্ঞতা হোক, আর সাংগঠনিক কাঠামো হোক যে দিক দিয়েই বলেন আসলে কি নিয়ে বিএনপি, আওয়ামীলীগ এর সাথে টেক্কা দেয়, আর কিভাবেই বা এত ভোট পায় তা নিয়ে আমার কৌতুহলের অন্ত ছিল না। এটি ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেকার কথা। দুই নেত্রী তখন নির্বাচনী প্রচারনায় চরম ব্যস্ত। আমিও পেপার পত্রিকায় তাদের প্রচার প্রচারনার খবরে নিয়মিত চোখ রাখি। ভেবেই পাই না কিভাবে বিএনপির জনসভায় এত মানুষ হয়!

নির্বাচন হল, শেখ হাসিনা হেরে গেলেন। আমি এক ছোট্ট বালক (৯-১০ বছর বয়স হবে তখন, পিতার চাকরির সুবাদে ঢাকা সুনামগঞ্জে থাকি) কেন জানি বলতে পারি না এই ভদ্রমহিলার পরাজিত হওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আশ্চর্য এক সহানুভূতি কাজ করছিল তাঁর প্রতি ( বড় কারো সাথে এই অনুভূতি ভাগাভাগিও করতে পারতাম না, অল্প বয়সেই পেকে গিয়েছি এই অপবাদে ঝাড়ি খাওয়ার ভয়ে)। এরপর বিএনপির ৫ বছর সময় ধরে দুর্নীতির ইতিহাস তো আর কারো অজানা নয়। আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম এই মহিলা কবে আবার প্রধান্মন্ত্রী হবেন। তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাথে আমার কোন স্বার্থ জড়িত নয় সে কথা বলাই বাহুল্য।

এবার তিনি এলেন, মহাসমারোহে। বছর তিনেক হল। আমি এখন আগের চেয়ে বড়। শৈশব থেকে কৈশোর পেড়িয়ে আমি এখন টগবগে যুবক। বিএনপির সাফল্যের পটভূমি আর রহস্য দুটোই আমার কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। এখন আর অন্ধ সহানুভূতি কাজ করে না মুজিব কন্যার প্রতি। আমার মত অনেকেরই করে না। প্রচন্ড হাসি পায় মাঝে মাঝে, সেই বয়সের বোকামির কথা চিন্তা করে।

যুদ্ধরত নয় এমন দুটি দেশের সীমান্তে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে নির্বিচারে কেবল একই দেশের মানুষের প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা মনে হয় বাংলাদেশ, ভারতের মধ্যকার সীমান্তেই সবচেয়ে বেশী। দুনিয়ার অন্যতম রক্তাক্ত এক সীমান্তের দুই পাড়ের দুটি দেশ কিভাবে বন্ধু হয় তা আমার মাথায় ধরে না।

আমি আপনার কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে আপনার ব্যবহারের জন্য অবকাঠামো বানিয়ে দিবো, কিন্তু কেন? ধরে না আমার মাথায়।
একটু বেশীই মনে হয় বোকা আমি, মাননীয় অর্থ উপদেষ্টার মত অত উচ্চ শিক্ষিত মানুষ যেখানে বুঝেন ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিটের বিনিময়ে টাকা নেওয়া অভদ্রতা , আমি কিন্তু এর মধ্যে অভদ্রতার লেশমাত্র খুঁজে পাই না।

যেখানে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে নদী বাচানো সরকারের ওয়াদা ছিলো, সেখানে তিতাস কে মেরে ভারতকে ট্রানজিটের রাস্তা বানিয়ে দেয়ার শানে নুজূল আমি বুঝি না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মনে একটা ধারনা বোধ হয় জন্মেছে তাকে ক্ষমতায় এনেছে ছাত্রলীগ, ভারত আর শেয়ারবাজারের ডাকাতগুলো (নাম উল্লেখ নাই করলাম)। দেশের দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ শেয়ারবাজারে আপনার দলের দাতাদের দ্বারা লুণ্ঠিত, আপনি সেই মানুষদের স্বার্থ রক্ষায় কোন কাজ না করে, দরবেশের বেশধারী ডাকাতের পাশে দাড়াচ্ছেন। পরকালে আপনার পিতার সাথে দেখা হলে পরে কোন মুখ নিয়ে তাকে এসব বলবেন ভেবে পাই না।

কেউ যদি ভারতের সাথে বাংলাদেশের তুলনামুলক আলোচনায় যান, তাহলে কংগ্রেস আর আওয়ামীলীগ কে এক কাতারে দেখা যায় তাদের নিজ নিজ দেশের ইতিহাসের পাতায়। দুটি দলই নিজ নিজ দেশের স্বধীনতা সংগ্রামে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু এর পরের ইতিহাস পুরোপুরি উল্টো। কংগ্রেস যেখানে স্বধীনতা পরবর্তী ভারতকে তখন টানা তিন দশক শাসন করেছে সেখানে আওয়ামীলীগ এর জন্য সেই সময় মাত্র ৪ বছর। আওয়ামীলীগ এর ব্যর্থতাই আসলে স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে দেয় ( এই জনপ্রিয়তাকে আওয়ামীলীগ স্বীকার করতে বাধ্য হয় ৯৬ সালে জামাআতে ইসলামীর সাথে যুগপৎ রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে)।সারা ভারতে কংগ্রেসের সুশাসনের কারণে বিজেপি পুরো ভারত জুড়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে, সেখানে বলতে গেলে একই রকম আদর্শ নিয়ে গড়ে
ওঠা বিএনপি র জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। তাঁর মানে বিএনপি যে জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রচার করতে চায় তাঁর প্রতি আস্থা রাখার মত মানুষ নেহায়েত কম না। অথচ হওয়া উচিৎ ছিল উল্টোটা।

গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির পাশে বিএনপির 'দেশ বাচাও, মানুষ বাচাও' স্লোগান দেখে বড় ম্যাড়ম্যাড়ে মনে হয়েছিল। আর এখন এর যথার্থতা পরিষ্কার।