উড়োজাহাজের আদবকেতা

জেসমিন হোসেন
Published : 4 Dec 2017, 00:49 AM
Updated : 4 Dec 2017, 00:49 AM

যারা মধ্যপ্রাচ্য হয়ে বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেন, প্রায়শই তাদের বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিক ভাইদের বিমানে আচরণ নিয়ে অভিযোগের অন্ত থাকে না। কথা কিন্তু সত্য- প্লেন টেইক অফ বা ল্যান্ডিঙের সময় উঠে দাঁড়িয়ে মালামাল টানাটানি করা, কেবিন ক্রুদের কথা না শোনা, টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলা, নিষেধ সত্ত্বেও এয়ার হোস্টেসের ছবি তোলা (আমার সর্বশেষ ভ্রমণে দেখা)।

ইউরোপ বা অন্য মহাদেশের ভালো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট গুলোতে তো সবসময় অ্যানাউন্স করে যে তাদের কেবিনক্রুরা আর কয়টি ভাষায় পারদর্শী। সচরাচর কেবিন ক্রুরা যে দেশ থেকে বিমানটি উড্ডয়ন করছে সে দেশের ভাষা এবং যেখানে যাচ্ছে সেখানকার ভাষা বলতে পারেন। ঢাকাগামী মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটগুলিতে কখনোই শুনি নাই- 'এই ফ্লাইটের ক্রু বাংলা ভাষা জানেন।' অথচ প্রায় ৯৯% যাত্রীই বাংলাদেশী! হয়ত বাংলা ভাষায় নির্দেশনা থাকলে অধিকাংশ সমস্যাগুলো এড়ানো সম্ভব।

পাশের সিটে বসা দেশী ভাইটা যিনি  ৮ বছর ধরে আরব আমিরাতে  কাজ করছেন, যখন ইংরেজীতে লিখা ল্যান্ডিঙ কার্ডটি পূরণ করার অনুরোধ জানায়, তখন মনে প্রশ্ন আসে- এয়ার হোস্টেসের ইংরেজীতে ইনস্ট্রাকশন উনারা কতখানি বুঝতে পারছেন। কোন এক এয়ারলাইন্সের টয়লেটে ফ্লাশ বাটনের উপরে বাংলায় লিখা দেখেছিলাম -'এখানে দাবান'। আমার নিজেরই একটু সময় লেগেছিল এর মানে বের করতে! উন্নত দেশের সবাই যে বিমান ভ্রমণে অভ্যস্ত এমনটা কিন্তু নয়। ইংরেজী ভাষী অনেককেই দেখেছি বিমানে টয়লেট ব্যবহারে বিড়ম্বনায় পড়তে কিম্বা নিজের আসন ছেড়ে অন্যের আসনে বসে থাকতে।

প্রায়ই দেখা যায় প্লেন রানওয়েতে চলা শুরু করেছে কিন্তু কেউ কেউ বারবার এয়ার হোস্টেসের অনুরোধ অমান্য করে মোবাইল ফোনে কথা বলেই যাচ্ছেন। তাদের হয়ত ধারণাই নেই আপাত দৃষ্টে নিরীহ এ কাজটি পুরো বিমানটিকে কতবড় ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। ঢাকাগামী মধ্যপ্রাচ্যের বিমানগুলোতে অনেক সময় একই এলাকায় কর্মরত অনেক বাংলাদেশী দেশে ফেরেন (বিশেষ করে ঈদের আগে)। বিমানের ভেতর একটা উৎসবের আবহ বিরাজ করে। প্যাসেজ আটকে তারা অন্য রো'তে বসা পরিচিত যাত্রীর সাথে গল্প করতে থাকেন। এতে শুধু এয়ার হোস্টেস এবং বাকী যাত্রীদের চলাচলেই বিঘ্ন ঘটে না, প্লেনের সেইফটি ইস্যুর ব্যাপারও থাকে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের শ্রমিক বোনেরাও কাজ করছেন। আমার ধারণা তাদের অসুবিধাটা অন্য যাত্রীদের তুলনায় একটু বেশি। সংকোচের কারণে অসুবিধা হলেও কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেন না। ভাষার জন্য মহিলা কেবিন ক্রুদের তো নয়ই। মধ্যবয়সী একজন ভদ্রমহিলা আমার পাশের সিটেই ভ্রমণ করছিলেন। গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করছেন, দেশে এসেছিলেন বেশ ক'বছর পর, এখন কাজে ফেরার পালা। তাকে দেখলাম গোলমরিচের ছোট প্যাকেটটা ছিড়তে। চায়ের কাপে ঢালার আগেই তাড়াতাড়ি বললাম এটা কিন্তু চিনির প্যাকেট না! প্রায় একই রকম দেখতে আর ইংরেজীতে লিখা, তাই বুঝতে পারেননি।

বিমানের ভেতর কেমন আচরণ করা উচিৎ, কিভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়, কোন সাইনের কি মানে সর্বোপরি  "প্লেন জার্নির এটিকেট" নিয়ে বাংলায় ১০/১৫ মিনিটের একটা ডকুমেন্টারী কেন যে সরকার তৈরী করে না! বোর্ডিঙের আগে অপেক্ষা করার সময়টাতে দেখানো হলে অন্তত ৮০ ভাগ বিদেশগামী যাত্রী উপকৃত হতো। আর বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও যাদের রেমিটেন্সে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ে তাদেরও 'ক্ষ্যাত' ট্যাগ খেতে হতো না!