বাঙালি হিন্দুও না মুসলিমও না, বাঙালি শুধুই বাঙালি। আমাদের এই বাঙালি সত্ত্বা আর্য পূর্ব হতে আজকের এই পর্যন্ত যা একটা রূপান্তরিত সত্ত্বা। এই রূপান্তর প্রক্রিয়ার পথ-পরিক্রমায় আমরা কখনও অষ্ট্রিক বা দ্রাবিড় বা আর্য বা বৌদ্ধ বা মুসলিম সুফি বা কখনও রাজা রাম মোহন রায় এর ব্রাহ্মবাদের দ্বারা নিজেদের মননের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করেছি। কিন্তু আমরা বাঙ্গালি।
আজকে আমরা যারা নিজেদের শুধুই বাঙালি ভাবি, আমরা বিশ্বাস করি সকল মানুষ সমান। মানবতার উপরে কোন ধর্ম নাই। এই মানবতার-ধর্ম সকল মানুষের সম-অধিকারের কথা বলে। এই সম-অধিকারের সম-নীতির ভিত্তিতে আমাদের বাঙ্গালী রীতি-ঐতিহ্যগত সকল কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতিকে আরও সমুন্নত রাখতে একটি সংহতির প্রয়োজন। এই প্রয়োজন থেকেই ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। যার ফলপ্রসূত আজকের এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার নাম “বাংলাদেশ”।
একটি রাষ্ট্রের জীবন আচরণ ও রীতি-নীতির সংক্ষিপ্ত বিধিবদ্ধ রূপ হল ঐ রাষ্ট্রের সংবিধান। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধান। বাঙ্গালী জীবন আচরণ ও রীতি-নীতির সংরক্ষক, একই সাথে রাষ্ট্রীয় সকল আইনের অভিভাবকও বাংলাদেশ সংবিধান। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধান কতখানি বাঙালীর সেই মহান চেতনাকে লালন করছে? যে মহান চেতনায় ৫২ এবং ৭১, যে মহান চেতনা মানবতার-ধর্ম ও সম-অধিকারের কথা বলে, সেখান থেকে আজ আমরা কতখানি দূরে বা কাছে যেটা ভাবার বিষয় এবং সেই মহান চেতনাকে শতভাগ প্রস্ফুটিত করার লক্ষ্যে কাজ করা জরুরী।
আমরা যারা নিজেদের শুধুই বাঙ্গালি ভাবি তারা চাই বাংলাদেশের সংবিধান হবে পারস্পরিক ও সার্বজনীন। কেউ যদি তার নিজস্ব সম্প্রদায়ের জীবনাচার নিয়ম কানুন মানতে চায়, সে সেটা করতে পারে; এটা তার ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু তা যদি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবে তা রদ করা হবে। এবং তা রাষ্ট্রীয় আইনের দ্বারায় রদ করা হবে। এরই ফলপ্রসূত বাল্য বিবাহ, হিল্লা বিবাহ রদ করা হয়েছে…………কিন্তু আমরা এখনও অনেক কিছু পারি নাই। যেমন পারি নাই আমাদের সংবিধানকে শতভাগ পারস্পরিক ও সার্বজনীন করতে, তথা বিশেষ কোন রাষ্ট্র-ধর্ম মুক্ত করতে। পারি নাই নারী-পুরুষের সম অধিকার সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করতে (এই ক্ষেত্রে মুসলিম থেকে হিন্দু সম্প্রদায় অনেক পিছনে পরে আছে)। পারি নাই ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমাতে।
বাঙালী হিন্দুও না মুসলিমও না বা অন্য কোন কিছুও না, বাঙালি শুধুই বাঙালি। বাঙালির ধর্ম মানব ধর্ম।
মশিউর রহমান
ফেইসবুক আইডি
https://web.facebook.com/mashiur.rahman.7771#
মোনেম অপু বলেছেনঃ
“বাঙালি হিন্দুও না মুসলিমও না, বাঙালি শুধুই বাঙালি।”
“বাঙালী হিন্দুও না মুসলিমও না বা অন্য কোন কিছুও না, বাঙালি শুধুই বাঙালি। বাঙালির ধর্ম মানব ধর্ম।”
উপরের বাক্যদুটোর প্রথমটি দিয়ে আপনি লেখাটি শুরু করেছেন এবং দ্বিতীয়টি দিয়ে শেষ করেছেন। মাঝখানে আবার লিখেছেন:
“আজকে আমরা যারা নিজেদের শুধুই বাঙালি ভাবি…”
এখন আমি তো একটা বিপাকে পড়লাম। আমি মুসলিম হয়েও কি আপনার মতো “শুধুই” বাঙালীদের অন্তর্ভূক্ত হতে পারবো? এবং পারলে সেটা কিভাবে সম্ভব হবে? যদি সম্ভব হয় তবে কি আমি বলতে পারবো না যে, আমি এমন বাঙালী যে কি না ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে থাকে। “শুধুই” বাঙালির ধর্ম যেভাবে মানব ধর্ম, সেভাবে “শুধুুই” ব্রিটিশের ধর্মও তো একই মানব ধর্ম হওয়া উচিত। যদি এটি ঠিক হয় তবে বাঙালী মানব ধর্মাবলম্বী ও ব্রিটিশ মানব ধর্মাবলম্বী তো একই ধর্মের অনুসারী হয়। সে ক্ষেত্রে “শুধুই” বাঙালী না হয়ে “শুধুই” মানুষ হলেই বা সমস্যা কোথায়? এটা বলাও তো অসম্ভব না যে, মানুষ মানুষই, সে মুসলিমও না, হিন্দুও না, বাঙালীও না, ব্রিটিশও না। বাঙালীর জন্য বাঙালী ধর্ম বাদ দিয়ে মানব ধর্মে লাফ দেয়ার প্রয়োজনই বা কেন হচ্ছে? আর মানব ধর্মই যদি আমি গ্রহণ করি তবে বাঙালী পরিচয়ে আমাকে নেমে আসতেই বা হবে কেন?
আপনি সংহতি চাচ্ছেন। কিন্তু যেভাবে “বাঙালী” ধারণাটিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন তাতে আপনার সাথে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধদের দূরত্ব আরও বাড়বে। তারা আপনার কথার যে অর্থ বুঝবেন তা অনুসারে “বাঙালী” হবার জন্য তো তাদের ধর্ম ছাড়তে চাইবেন না আবার বাঙালী হবার দাবীও ছাড়বেন না।
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
অপু ভাই, আমিও এমনি ভেবেছিলাম। আপনার মন্তব্যের সাথে একমত।
মশিউর রহমান মশু বলেছেনঃ
বাঙালির ধর্ম মানব ধর্ম -২ তে আপনি একা একা উত্তর ও আরও কিছু প্রশ্নে উৎস পাবেন। আশা করি সাথেই থাকবেন। তবে যদি ব্লগ সঞ্চালক সাহেব লেখাটি প্রকাশ করেন।
মশিউর রহমান মশু বলেছেনঃ
ধন্যবাদ অপু ভাই। 😯