বাঙালির ধর্ম মানব ধর্ম-২

মশিউর রহমান মশু
Published : 17 Dec 2016, 04:49 PM
Updated : 17 Dec 2016, 04:49 PM

পৃথিবীতে মূলত: দু-ধরনের মানুষ দেখা যায়। এক বিশ্বাসী আর এক অবিশ্বাসী।

বিশ্বাসী মানে আস্তিক যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে। অবিশ্বাসী মানে নাস্তিক যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে না।

(অনেক নাস্তিক আছে যারা অনেক আস্তিক অপেক্ষা অনেক গুনে সৎ এবং নীতিবান। এটা একদল পণ্ডিতদের জন্য ফ্যাশন কারণ তারা নিজেকে বিশ্বাস করে কিন্তু ঈশ্বর বিশ্বাস করেনা! আসলে আমি মনেকরি নিজেকে বিশ্বাস করা মানেই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা।)

আস্তিকদের মধ্যে কয়েকটি ভাগ আছে যেমন-
১. একাত্মবাদী বা এক স্রষ্টায় বিশ্বাসী
২. দ্বিত্ববাদী বা দুই ঈশ্বরে বিশ্বাসী
৩. বহুত্ববাদী বা বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী
আমার মত অল্প ও মাঝারীদের জন্য সহজ সরল পথ লাভের জন্য আস্তিক হওয়া ভাল। তবে আপনি যে মতের হউন না কেন সততায় কিন্তু আপনার মূল লক্ষ্য। পৃথিবীতে এত মত এত পথ সৃষ্টি হয়েছে ; স্বর্গের লোভ এবং নরকের ভয় দেখানো হয়েছে, কারণ একজন ব্যক্তি যেন সততার সহিত তার জীবন আতিবাহিত করে।

আস্তিক বা নাস্তিক যাই হউন না কেন, আপনার আমার সবার মূল লক্ষ্য একটায় সততা বা সদ্ গুণ অর্জন করা। একজন ব্যক্তি যদি সৎ হয় তাহলে কে স্রষ্টা বা ঈশ্বরের পুত্র, কে স্রষ্টা বা ঈশ্বরের বন্ধু বা কে ভগবান; এতো কিছু ভাবার দরকার নাই।

তবে এটাও সত্য, যে সৎ সে এমনি নিজগুণেই সৎ ।সে আস্তিক না নাস্তিক তা দেখার বা ভাবার বিষয় না। কারণ সে তার জীবন আচারে সৎ। আস্তিক ও নাস্তিক আমাদের সবার মূল লক্ষ্য সদ্ গুণ অর্জন করা।

আস্তিকদের মধ্যে আরও দুইটা ভাগ আছে-
১. নিরাকার বিশ্বাসী
২. আকার বিশ্বাসী

আস্তিকদের মধ্যে একদল বিশ্বাস করে স্রষ্টার আকার নাই, তিনি নিরাকার। আবার আর এক দল বিশ্বাস করে স্রষ্টার আকার আছে। তাহলে এই বার নিরাকার আর আকারের হিসাব নিয়ে ভাবা যাক………

***স্রষ্টা বা আল্লাহ বা ঈশ্বর তন্ত্র ***

স্রষ্টা বা আল্লাহ বা ঈশ্বর এক । নিরাকার।
অবশ্যই তার আকার আছে। আমরা সকল সৃষ্টি তার এক একটি আকার। আমরা সকল সৃষ্টি প্রত্যেকেই আলাদা স্বতন্ত্র। কারও সাথে কারও মিল নাই। কি জীব, কি জড়!

সবারই স্বতন্ত্র আকার আছে। স্বতন্ত্র সত্তা আছে।
শত ভাগ মিল কারও সাথে কারও নাই। বাঘের সাথে ভালুকের মিল নাই, ছাগলের সাথে গরুর মিল নাই। এমন কি একটি ছাগলের সাথে অন্য ছাগলের মিল নাই। একটি গরুর সাথে অন্য একটি গরুর মিল নাই। এমনকি একটি গরুর যে দুইটি শিং, তার একটি শিং এর সাথে অপরটির শতভাগ মিল নাই। প্রত্যেকটা সৃষ্টি স্বতন্ত্র এবং আলাদা। একক এবং অনন্য। সবায় বা প্রত্যেকটা জিনিস এক স্রষ্টার আকার বা রূপ ঘোষণা করছে।

আমরা সকল সৃষ্টি প্রত্যেকেই আলাদা স্বতন্ত্র।
বট গছের সাথে কাঁঠাল গাছের মিল নাই। লিচু গাছের সাথে আম গাছের মিল নাই——-। এমন কি, কোন একটি গাছের একটি পাতার সাথে আর একটি পাতার মিল নাই। প্রত্যেকেই আলাদা স্বতন্ত্র- একই গাছের একটি ফলের সাথে অন্য ফলের মিল নাই। একটি ফলের অনেকগুলি বীজের মধ্যে একটি বীজের সাথে অন্য অপরটির মিল নাই। সবায় বা প্রত্যেকটা জিনিস এক স্রষ্টার আকার বা রূপ ঘোষণা করছে।

আমরা সকল সৃষ্টি প্রত্যেকেই আলাদা স্বতন্ত্র।
একই কারখানাতে তৈরি, একই ছাঁচে উৎপাদিত একটি দ্রব্যের সাথে অন্য দ্রব্যের একেবারে শত ভাগ মিল নাই। সকল সৃষ্টি জীব বা জড় কারও সাথে কারও মিল নাই। সবায় স্বতন্ত্র। সবায় বা প্রত্যেকটা জিনিস এক স্রষ্টার আকার বা রূপ ঘোষণা করছে।

আল্লাহ বা ঈশ্বরের এত সব আকারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আকার "মানুষ"। অবশ্যই সৎ মানুষ। একজন সৎ মানুষের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বর বা আল্লাহ তার ঐশ্বর্যয়ের প্রকাশ ঘটান।

আমাদের সবার উচিত যার যার স্থান থেকে সকল প্রকার সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সকল মানুষকে এক জাত ভেবে ভালোবাসা। সকল মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকলেই ব্যবহারিক জীবনে সৎ থাকা সম্ভব। …………………….(জয় হউক মানব ধর্মের)

-মশিউর রহমান

ফেইসবুক
https://web.facebook.com/mashiur.rahman.7771?_rdr#