পদ্মাসেতুঃ যারা প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সারা দিয়ে চাঁদা দিয়েছে তাঁরা সংগৃহীত চাঁদার পরিমাণ জানতে চায়

প্রবাসী
Published : 17 Sept 2012, 04:08 PM
Updated : 17 Sept 2012, 04:08 PM

পদ্মা সেতু হবে, হতেই হবে। বাংলার মানুষ দু'দিন পরে হলেও পদ্মা সেতু দেখবে – আমি হলফ করে বলতে পারি। পদ্মাসেতু বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ছিল। এই সেতুটা নিয়ে যারপর নাই আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। এই সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমানে এক মন্ত্রী সাবেক হয়েছেন। যদিও তিনি এতে দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছেন ও করছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে কিছুটা সন্দেহের বীজ উপ্ত হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

খবরটা বেশ কিছুদিন দেশের পত্রপত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয়েছিল। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া মারফত আমরা জানতে পারি বিশ্বব্যাংক বেশ কয়েকটি শর্তের উপর ঝুলিয়ে রেখেছে তাদের অর্থ ছাড়ের বিষয়টা। মনে হচ্ছেনা তারা শর্তগুলো পূরণ ছাড়া অর্থ ছাড় করবে পদ্মাসেতু প্রকল্পে।

পদ্মাসেতু বিষয়ে বাংলাদেশ বনাম বিশ্বব্যাংক যখন মুখোমুখি অবস্থানে। বাংলাদেশ সরকারকে শত অনুনয় বিনয় করেও যখন বাগে আনতে পারছে না সেই মুহূর্তে আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ধমনির রক্ত উষ্ণ হয়ে উঠল। তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মত করেই ঘোষণা করলেন, পদ্মা সেতু হবে – এবং তা আমাদের নিজস্ব অর্থেই হবে। আমদের মনে আশার আলো ঝিলিক দিয়ে উঠল। কেউ কেউ গণিতের পাণ্ডিত্য দেখিয়ে (তাদের মঝে আমিও ছিলাম) যোগ-বিয়োগ, গুন-ভাগের মত সহজ সরল হিসাব কষে দেখিয়ে দিলেন এটা কোন ব্যাপারই না। এই টাকা আমাদের স্কুলের বাচ্চা ছেলেমেয়েরা তাদের টিফিনের টাকা (টিফিন না খেয়ে) জমা দিলেই সংগ্রহ হয়ে যাবে। প্রধান মন্ত্রীর ডাকে সারা দিয়ে কয়েকটি স্কুলের বাচ্চা পোলাপান তাদের একদিনের টিফিনের টাকা (অবশ্য যাদের টিফিন খাওয়ার সামর্থ্য আছে) জমা দিল প্রধান মন্ত্রীর পদ্মা সেতু ফান্ডে। বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, যার যার মত করে জমা দিতে থাকল যে যেমন পারে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী। পদ্মাসেতু চাঁদা ফান্ডের জন্য তৈরি হতে থাকলো চাঁদা উত্তোলন কমিটি। যাদের হাত থেকে বাদ পরল না রিক্সা-ভ্যান চালক, গাড়ির ড্রাইভার-হেলপার, কৃষক-শ্রমিক কেউ। গৃহিণীরা তাদের একদিনের বাজার বন্ধ রাখলেন প্রধান মন্ত্রীর পদ্মা সেতু তহবিলের জন্য। আমরা আমাদের দেশপ্রেম দেখিয়ে দিতে পেরে ধন্য হতে থাকলাম।

আমরা পদ্মাসেতু বিষয়ে নতুন আশার আলো দেখলাম আর মনের অজান্তেই মনে মনে একটা স্বপ্নও বুনতে লাগলাম যে এবার আমরা বিশ্বব্যাংক নামক মহাদুর্নীতি গ্রস্থ সংস্থাকে আচ্ছামত নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারব কিংবা অন্তত তারা দেখবে যে তারা পদ্মা সেতুর টাকা ছাড় না করে মহা ভূল করেছে। টাকাটা ছাড় করলে অন্তত কিছুটা সুদ তারা পেত, এখন তো তাদের আম-ছালা দু'টোই হারানোর যোগার হল।

চার দিক থেকে টাকা আসতে থাকল স্রোতের মত। কিন্তু আমাদের সেই সেকেলে প্রবাদ "টাকা দেখলে কাঠের পুতুলও হাঁ করে" এটা তো আর মিথ্যে হতে পারেনা! তাই শুরু হল খেল। চারদিক থেকে শত সহস্ত্র বোয়াল মুখো মহা হাঁ আসতে থাকলো সেই টাকার দিকে। ইতিমধ্যে খবর বেরুলো কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই টাকা সংগ্রহকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটে গেছে।

টাকা নিয়ে খুন হওয়া আমাদের দেশের নিত্য ঘটনা। এটা ঘটতেই পারে, এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা চিন্তিত হচ্ছিও না। কিন্তু আমরা মহা চিন্তিত হয়ে পরলাম যখন দেখলাম সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা একাধারে জনগন থেকে টাকা সংগ্রহ করছে। অপরদিকে মালয়েশিয়া-চায়নার সাথে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছ এই সেতুতে অর্থ যোগান দিতে। সবচেয়ে জটিল যে বিষয়টি তা হল কর্তারা নাকি এখনো হাল ছাড়েননি বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ পেতে। নানা ভাবে নানা উপায়ে তাদের অনুরুধ করে যাচ্ছেন তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করতে। বর্তমানে নাকি দুজন জাঁদরেল উপদেষ্টা বিশ্ব ব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ নিয়ে গেছেন সেই দুর্নীতি গ্রস্থ বিশ্বব্যাংকের দরবারে।

সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার উল্লেখিত মহা দুর্নীতি গ্রস্থ একটা সংস্থার কাছে বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়েও কেন যাচ্ছেন? যদি জানেনই ওখানে যেতেই হবে তবে কেন আমাদের এমন আশার বাণী শুনালেন আর তাদেরকে উল্টা-পাল্টা কথা বলে বিশ্ববাসীকে হাসালেন?

না, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এসব প্রশ্ন আমার মত অতি সাধারণ মানুষের পক্ষে আপানাকে করার সাহস কোন দিনই হবে না বা এতটা স্পর্ধা ও আমার নাই। তবে আমি শুধু একটা প্রশ্ন করার স্পর্ধা দেখাচ্চি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী। কারন আমার মত বা আমার চাইতেও অতি সাধারণ প্রবাসীকে তার বহিঃগমনের সময় বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়নি ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না পদ্মা সেতুর চাঁদার রশিদ না দেখানো গেছে (এটা ছিল একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত, এই উত্পাত বর্তমানে বন্ধ আছে)। যদিও এটা অনৈতিক আর অমানবিক ছিল তাদেরকে পূর্বে অবহিত না করে এভাবে আটকে দিয়ে। কেন অনৈতিক / অমানবিক ছিল সেটা সম্ভবত সবাই বুঝতে পারছেন।

এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই স্পর্ধিত প্রশ্নটা করছি। প্রশ্নটা হলঃ আপনার পদ্মা সেতু ফান্ডে কত টাকা জমা পরেছে? জাতি কি সেই টাকার হিসেব কভু পাবে? দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের জানতে ইচ্ছে করে এপর্যন্ত উত্তোলিত টাকা আদৌ সরকারী কোষাগারে জমা হয়েছে কি? জমা হয়ে থাকলে এর সঠিক পরিমাণটা জানিয়ে বাধিত করিবেন? আমরা জনগণ আরও একটু হিসাব নিকেশ করে দেখতে চাই আমাদের দ্বারা সম্ভব কিনা এমন কাজে হাত দেওয়া, নাকি থামলে ভাল লাগে নীতি অবলম্বন করা?