সৃষ্টির আদি কালে মানুষ ছিল বনে জঙ্গলে, পাহাড়ের গুহায়। শক্তির প্রধান উৎস ‘আগুন’ আবিষ্কারের পর থেকেই মানব সভ্যতার দ্রুত উন্নতি সাথিত হতে থাকে। মানুষ পশুপাখির মাংস কাঁচা খাওয়ার পরিবর্তে পুড়িয়ে খেতে আরম্ভ করে। আগুনের শক্তি ব্যবহার করে তারা হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শিখে। মানুষের মাঝে মানবিকতার প্রসার ঘটতে থাকে। আস্তে আস্তে মানুষের মাঝে লজ্জাবোধ জন্ম নেয়। মানুষ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেতে থাকে তাঁদের লজ্জাস্থান আবৃত করতে। সভ্যতার প্রসারের সাথে সাথে মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে থাকে। ধরণীতে ঘটতে থাকে একের পর এক বিপ্লব। মানুষ পদ ব্রজের পরিবর্তে সওয়ারি হয় ঘোড়া বা গাধার পিঠে। ধীরে ধীরে মানুষের আরোহণ ঘটে উড়োজাহাজ ও রকেটে। সেই সাথে মানুষ নগ্নতা থেকে পোশাক পরতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সেই পোশাকেও আসতে থাকে নানা প্রকার বৈচিত্র্য। মানুষ পোশাকে পরিপাটি হয়ে রুচিশীল হয়।
রুচিশীল পোশাকে আবৃত মানুষ সত্যি রুচিশীল। তবে সেই পোশাক দেখে মানুষের পরিচয় বিচার করতে যাওয়া ও সঠিক হবে না। সৃষ্টির আদি থেকে আজ পর্যন্ত পুরুষের পোশাকে সংকরন মনে হয় সঠিক পথেই আছে। কিন্তু বিচ্যুতি ঘটেছে সভ্য(!) দেশের নারীর পোশাকে। সভ্য দেশগুলোর নারীর পোশাকের কেন এই বিচ্যুতি? জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত দেশের নারী ও পুরুষের পোশাকে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। একজন পুরুষ সেখানে পরিধান করে স্যুট-প্যান্ট অপরদিকে নারীরা পরিধান করে মিনিস্কার্ট বা তার চেয়েও সংক্ষিপ্ত পোশাক। কিন্তু কেন? উত্তর অনেকের মত আমারও জানা নাই। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় উন্নত বিশ্বের নারীরা স্বাধীনতার নামে নিজেদেরকে নিয়ে যাচ্ছে সেই আদিম যুগের দিকে। যে আদিমতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে আমাদেরে পূর্বপুরুষেরা সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু আজ তাঁদের উত্তরপুরুষ এই আমরা ক্রমশ ধাবিত হচ্ছি সেই আদিম যুগে দিকে।


সম্প্রতি ইয়েমেনের বিপ্লবী জননী, নোবেল শান্তি পুরুস্কার বিজয়ী তাওয়াক্কুল কে পশ্চিমা সাংবাদিকরা তার হিজাব পারা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছিলেন “আপনার বুদ্ধিমত্তা ও শিক্ষাদীক্ষার সঙ্গে আপনার পোশাক কতটা সঙ্গতিপূর্ণ? এটা কি পশ্চাদ্গামিতা নয়?” উত্তরে তিনি বলেছিলেন। “আদিম যুগের মানুষ থাকত প্রায় নগ্ন হয়ে। মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পোশাক পারা শুরু করে। আজ আমি যে পোশাক পরেছি আর যা হয়েছি তা মানুষের অর্জিত ধ্যানধারণা আর সভ্যতার প্রমান। এটা পশ্চাদ্গামিতা নয় মোটেই। পোশাক পরিচ্ছদের আবরন অপসারণই বরং সেই আদিম যুগে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা। আর সেটাই পশ্চাদ্গামিতা”।

পরিশেষে আমাদের মা-বোনদের এটুকু বলতে চাই ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করার পূর্ণ অধিকার আপনাদের আছে। শালীন পোশাক পড়েও সেই স্বাধীনতা আপনারা ভোগ করতে পারবেন। বরং অশালীন পোশাকই আপনাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার অর্জনের পথে প্রধান বাঁধা। নারীর স্বাধিকার আন্দোলনকে বেগবান করতে প্রয়োজন সকল নারীর সমান অংশগ্রহণ। কিন্তু আপনাদের সেই আন্দোলনে অশালীন পোশাক পরিহিতদের আধিক্য থাকলে অনেক নারীই স্বপ্রণোদিত হয়ে সেখানে অংশ গ্রহন করবে বলে মনে হয় না। নারী, আপনারা মা, আপনারা বোন। জাতির উন্নতির জন্য আপনাদের সমান অংশগ্রহণ অতিব জরুরী। প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজে চাই আপনাদের সমান অংশগ্রহণ। তবে সেটা বাহ্যিক আবরণে (পোশাকে) মোটেই পশ্চাদ্গামিতার দ্বারা নয়। আমি বলছি না হিজাব বা কালো বোরখায় আপনাদেরকে আপাদমস্তক আবৃত করে রাখতে, এটা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির সাথে যেমন সঙ্গতিপূর্ণ নয় ঠিক তেমনি মিনিস্কার্ট বা ইউরোপীয় ঘরানার পোশাকও এখানে বেমানান। আমরা চাইনা পোশাক পরিচ্ছদে আপনারা ইউরোপীয় সংস্কৃতি অবলম্বন করতে গিয়ে পশ্চাদ্গামি হন।
তারিখঃ ০৮/১০/২০১২ ইং, রিয়াদ থেকে।
নতুন প্রজন্ম বলেছেনঃ
@প্রবাসী, ধন্যবাদ ভাল লেখার জন্য ।
পিয়ারা আরজুমান্দ বলেছেনঃ
যে ছবিগুলো দেয়া আছে সেগুলোতো হিজাব ও কালো বোরখায় আপাদমস্তক আবৃত করে রাখবার ছড়াছড়ি, কোনটাতেই দেশীয় সংস্কৃতির চিহ্ন মাত্র নেই। মিনিস্কার্ট পোশাকের সাথে সাথে হিজাব বা কালো বোরখাও পরিত্যজ্য হওয়া উচিৎ নয় কি? নাকি সব যুক্তিই মানছি, কিন্তু তাল গাছটা আমার!
মাহবুব বলেছেনঃ
পোশাক নিয়ে মানুষের রুচিটাকেই আমি সবার আগে স্থান দেব! তবে পোশাক যদি লজ্জা এবং শালীনতা নিবারণে ব্যর্থ হয় তাহলে পোশাক পরাটা অর্থহীন! তবে স্বল্প বসনা কিংবা আঁটসাঁট পোশাক পরার একটাই যুক্তি, সেটা হচ্ছে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করা! আর কেউ যদি সেটা করে খুশি থাকে, সেখানে আমার আপনার কারোরই কিছু বলার নেই! 😀
মাহি জামান বলেছেনঃ
লেখককে ধন্যবাদ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণার জন্য। তবে মানুষের পোষাক সংক্রান্ত যে বিবর্তণের ইতিহাস আপনি উল্লেখ করেছেন তা পুরোটাই ধারনা নির্ভর। পৃথিবীতে প্রথম মানুষ যখন আসেন তখন থেকেই তারা গাছের পাতা দিয়ে নিজেদের লজ্জা নিবারণ করতে জানতেন।
আধুনিক কালে পুরুষরা গলা থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঢেকে চলা ফেরা করলেও মেয়েদের পোশাক ক্রমশঃ ছোটই হচ্ছে। এর প্রকৃত রহস্য সত্যিই দুর্বোধ্য। তবে আমার ধারনা এক ধরনের বিকৃত মানসিকতা থেকেই এরা নিজেদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শন করে এবং পুরুষদের আকৃষ্ট করার জন্য এমনটি করে। অথচ উত্তেজিত পুরুষ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যখন উপভোগ করার জন্য সেই মেয়েটির দিকে হাত বাড়ায় তখন ভিন্নরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
বিঃ দ্রঃ নগ্নতা কোন সভ্যতা নয়। যদি তা হতো তাহলে বনের পশুরাই হতো সবচেয়ে সভ্য প্রানী। মানুষ নয়।
মজিবর বলেছেনঃ
ধন্যবাদ প্রবাসী ভাই সুন্দর একটি পোস্টের জন্য। পিয়ারা আপু প্রবাসীর লেখটা আপনি সম্পূর্ণ না পড়ে মন্তব্য করেছেন ছবি দেখে এটা কতটুকু যুক্তি আপনার বিষয়। ”পরিশেষে আমাদের মা-বোনদের এটুকু বলতে চাই ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করার পূর্ণ অধিকার আপনাদের আছে। শালীন পোশাক পড়েও সেই স্বাধীনতা আপনারা ভোগ করতে পারবেন।” এই বাক্যটি প্রবাসীর। এখানে কোনও নির্দিষ্ট পোশাক বলা হয়নাই নিশ্চয়। বেয়াদবি মার্জনীয় আপনারা স্বাধীনতার বা পূর্ণ অধিকারের ধোয়া তুলে নগ্ন বা অর্ধ নগ্ন অথবা টাইটফিট পোশাক পরিধান করে রাস্তায় বা চলাফেরা করবেন আর অন্য মানুষ তখন অন্য মনষ্ক হতেই পারে। আপনার যেমন পোশাকের অধিকার আছে তেমনি পুরুষের চক্ষু আছে মন আছে, হৃদয়ে বাসনা আছে ঠিক সেই ইচ্ছে শক্তিকে আপনি উগ্র করার অধিকার আপনার নাই। সবাই সহবাস করব এক্ষেত্রে সবাই সবার মন রক্ষা করে চলব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চলা ফেরা, চাল-চলনে একে ওপরকে সুন্দর আবরণ থাকবে এটা কী আপনি চান না। আর সেই লক্ষে যেতে হলে প্রতেকের এমন কোনও পোশাক কী অসম্ভব যে পোশাক না পরলে আমাদের চলা বা সামাজিকটা লখভ্রষ্ট হবে। মোটেই না।
মাহি জামান বলেছেনঃ
চমৎকার বলেছেন মজিবর ভাই।
মজিবর বলেছেনঃ
ধন্যবাদ মাহি জামান ভাই।