বহিষ্কৃত হলে পরবর্তী দুই মেয়াদে নির্বাচন করা যাবেনা (?)

প্রবাসী
Published : 9 Dec 2012, 11:31 AM
Updated : 9 Dec 2012, 11:31 AM

দল থেকে বহিষ্কৃত হলে পরবর্তী দুই মেয়াদে নির্বাচন করা যাবেনা বলে নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে মতামত দিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। ব্লগারগন এ ব্যাপারে তাঁদের সুচিন্তিতমতামতসহ ব্লগ পোষ্ট করেছে কিনা আমার জানা নেই। সময়ের কারনে সব পোষ্ট পরতে পারিনা। তবে যতগুলো পোষ্টে চোখ বুলানো সম্ভব হয়েছে তাতে এই বিষয়টা এ কয়দিনে আমার চোখে পরেনি।

আওয়ামীলীগের সদস্যবৃন্দ কি বিবেচনায় এমন মতামত প্রকাশ করলেন তা বোধগম্য নয়। স্বৈরাচার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লেবাসে যে ব্যক্তিতন্ত্র বা ব্যক্তি তোষণ তন্ত্র আমরা দেখছি তা আদৌ গণতন্ত্র কিনা তা পর্যবেক্ষক বা সুধীজন ভাল বলতে পারবেন। তবে আমার কাছে এটা স্রেফ একটা গণতন্ত্রের নামে মূর্খের নেত্রী তোষণতন্ত্র ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। মাঝে মাঝে রাজনীতিবিদদের কিছু কিছু আচরণ দেখে মনে হয় তাঁদের সাধারণ জ্ঞানটুকুও লোপ পেয়েছে। যদি তা না হবে তা হলে কি করে এমন জাঁদরেল নেতা (!!!) সমৃদ্ধ একটা প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে এরূপ আত্মঘাতী মতমত রাখতে পারলেন? জানি তাঁদের এমন মতামত ধোপে টিকবে না। কিংবা হতে পারে নির্বাচন সংক্রান্ত এমন একটি আইনই রয়েছে অভাগা এই জনগনের কপালে। ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিরা যেহেতু এটা চাচ্ছেন তাই এমন আইন প্রণয়ন মনে হয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। হয়ত বা কিছু দিনের মধ্যেই আমরা দেখতে পাব নির্বাচন কমিশন সরকার দলীয় প্রতিনিধিদের এ মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে আইনের খসরা তৈরি করে সেই আইন প্রনয়নের জন্য সংসদে পাঠাচ্ছেন আর তা পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে কণ্ঠ ভোটে পাশ হয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন পাচ্ছে নতুন একটি আইন। যাতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকবে ""কোন ব্যক্তি যদি দল থেকে বহিষ্কৃত হন তবে তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুষ্ঠেয় পরবর্তী দুটি নির্বাচনে (স্থানীয় ও সংসদ) অংশগ্রহণের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন""।

এমন আইন হলে আমার মত হাভাতে জনগনের সমস্যাটা কোথায়? এমন প্রশ্ন সম্মানিত ব্লগারগণ করবেন জানি। না আমাদের কোন সমস্যা নেই। আমি জীবনে কভু নির্বাচন করবোও না সুতরাং বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়ও নেই। আর যদি নির্বাচন করিও সেখানে বহিস্কারের ভয়ও থাকবেনা (স্বতন্ত্ররে বহিস্কার করে সাধ্য কার!!)।

এমন আইন করতে চাওয়ার পেছনে আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্য কি? আসলে মূল প্রশ্ন এটাই। আর এর উত্তর পেতে হলে বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করা দরকার। এ নির্বাচনগুলোতে আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্রার্থীর ভরাডুবি তদস্থলে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয়ই কি আওয়ামীলীগকে এমন চিন্তায় ফেলেদিয়েছে? কথা হল বিদ্রোহী হলেও তো তাঁরা আওয়ামীলীগেরই (বিএনপির ও একজন বিদ্রোহী নির্বাচিত হয়েছেন দলীয় মতামতকে উপেক্ষা করে নির্বাচন করে)। এতে তো এটাই প্রমানিত হয় যে দলীয় নির্বাচকমণ্ডলীর সিদ্ধান্ত ভূল। তাঁরা নেত্রীর ইচ্ছাকে সমর্থন করে যাকে সমর্থন দিল আসলে সাধারণ জনগন তাকে চায় না। পক্ষান্তরে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে যিনি নির্বাচনে অংশগ্রহন করলেন তাঁকেই জনগন আসলে তাঁদের নেতা হিসেবে চায়। সে ই আসলে ঐ এলাকার প্রকৃত নেতা, জনগনের সাথেই তাঁর সম্পর্ক নেতাদের তোষণের চেয়ে। আর এটাই কি দলীয় প্রার্থী নির্বাচক মণ্ডলীর চিন্তার মূল কারন। তেনারা কি চিন্তিতি এজন্যই যে তাঁদের সমর্থিত প্রার্থী যেহেতু মূল্যহীন তাই তাঁদের মূল্য নিয়ে নেত্রীর মনে প্রশ্ন উঠতে পারে? আমার মনে হয় নেতাদের মূল আতংক এটাই। পক্ষান্তরে তাঁদের প্রস্তাবিত আইনে ঐ বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করতে না পারলে নেত্রী দেখতেও পারবে না ঐ বিদ্রোহীর জনপ্রিয়তা আছে কি নেই, এতে নেত্রীর কাছে জবাবদিহি করার কোন ব্যাপারও থাকবে না। সুবিধাভোগীরা আজীবন সুবিধা ভোগ করে যেতে পারবে।
আমাদের দেশে গণতন্ত্রের নামে যে ব্যক্তিতন্ত্র চলছে তাতে এমন আইন ঐ বিশেষ ব্যক্তিদেরকে অতিক্ষমতাধরে রূপান্তরিত করবে নিঃসন্দেহে। পক্ষান্তরে কিছুটা গ্রহণযোগ্য নেতা নিক্ষিপ্ত হবেন আস্তাকুঁড়ে। তাঁরা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে পুতুলে পরিনত হবেন।

বিষয়টাকে আমাদের স্মমানিত ব্লগার বৃন্দ কি ভাবে দেখছেন প্রত্যাশা আপনারা আপনাদের সুচিন্তিত মতামত দিবেন।

তারিখঃ ০৯/১২/২০১২ ইং রিয়াদ, সৌদি আরব থেকে।