বিকাশের কারা মুক্তি ও দুর্ভাবনা/ নতুন প্রজন্মের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার

প্রবাসী
Published : 16 Dec 2012, 02:12 PM
Updated : 16 Dec 2012, 02:12 PM

অতি সম্প্রতি দেশের প্রধান প্রধান দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে একটি সংবাদ শিরোনাম বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংবাদটি হল স্বনাম খ্যাত বা কুখ্যাত/শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাসকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার ঘটনা। এ ঘটনাটায় সাধারণ জনগন থেকে খোদ পুলিশ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা পর্যন্ত স্তম্ভিত, হতবাক। ঐ সন্ত্রাসীর মুক্তির সংবাদে আমরা হয়েছি চিন্তিত – বিস্মিত। খবরে প্রকাশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে বিকাশকে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে গত শুক্রবার খুব সকালে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে বিকাশকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে একজন পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িতে তুলে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ধরনের শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিন পেলে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার আগে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কারা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেভাবেই বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চপর্যায় থেকে বিকাশকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশনা থাকায় কারা প্রশাসনও নীরব থাকে।"

বিভিন্ন মামলায় দীর্ঘ ১৫ বছর কারাভোগের পর গত শুক্রবার সকালে জামিনে মুক্তি পায় বিকাশ। কাশিমপুর কারাগার-২ থেকে জামিনে প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে বেরিয়ে যায় সে। ১৫ বছর কারা ভোগ করলেও থেমে থাকেনি তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সে তার অনুগতদের নির্দেশনা দিত জেলখানা থেকেই।

বিকাশের জেল জীবনের শুরু ১৯৯৭ থেকে। সে সময় মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। বিকাশের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতা জরিপ, আগারগাঁওয়ে জোড়া খুনসহ ৫টি হত্যা মামলাসহ ১৬টি মামলা রয়েছে। এর আগে বিকাশ ২০০৯ সালের জুনে কাশিমপুর কারাগার-২ থেকে জামিনে মুক্তি পায়। ওই সময় জেলগেটের সামনে থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানা পুলিশ আবার তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু এবার আর তাকে পুনগ্রেপ্তারের স্বীকার হতে হয়নি, প্রশাসনের আশীর্বাদে।
এবার দেখা যাক দেশের প্রধান প্রধান দৈনিকগুলোতে বিকাশকে নিয়ে সংবাদ শিরোনাম কেমন ছিল।

১৫/১২/২০১২ ইং তারিখে

এর পর আজকে অর্থাৎ ১৬ই দিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ঐ বিকাশ সম্পর্কে পত্রিকাগুলোর শিরোনাম এরূপঃ

অনলাইনে সংবাদগুলো পরার পর এর মন্তব্যগুলো পরলেই বুঝা যাবে পাঠক তথা সাধারণ জনগণ এই সন্ত্রাসীর মুক্তির খবরে কেমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এমন ও মনে করা হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশে গেল অবরোধে বিশ্বজিৎএর খুনের ঘটনাটা ছাত্রলীগ কর্মীরা সঠিক ভাবে সুসম্পন্ন করতে না পারায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় ভিষণ নাখোশ হয়েছেন; তিনি আছেন বিভিন্ন মহলের কঠিন চাপের মুখে। আর সেই চাপের মুখে নুনের ছিটা দিতেই বিকাশের এই গোপনীয় জামিন(!)।

ঐ পুচকে নেতারা (!) হয়তো ভুলেই গিয়েছিল মিডিয়া নামের শত্রুরা (!!) উত পেতে আছে ক্যামেরা নিয়ে। ছাত্রলীগের বিশ্বজিৎ মিশনের মূল উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে দিয়েছে ফটো সাংবাদিকগণ। তাঁদের কারনেই ঐ মিশনের ফলটা সুমিষ্ট না হয়ে হয়ে উঠেছে অতিশয় তিক্ত। আর এ কারনেই মনে হয় মন্ত্রী মহোদয় বুঝতে পারছেন এই সব মাথা গরম পুঁচকে কর্মীদের দ্বারা আর যাই হোক সঠিক বা আশানুরূপ ফলাফল আশা করা যাবে না। অতিশয় গিরিঙ্গি বা পেজগীর কাজ ওদের দ্বারা সম্ভব নয়। এদের উপর নির্ভর করা মানেই হল হাঁটে হাড়ি ভাঙ্গা। তাই চাই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাউকে, আর তাই উনি খুঁজে বের করেছেন বিকাশ নামক অভিজ্ঞ সন্ত্রাসীকে। এ জন্যই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে গোপনে, আশু মিশন সঙ্গোপনে সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে।

কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এ ক্ষেত্রেও মখা সাহেব ব্যর্থতার পরিচয় দিতে পারেন বেরসিক মিডিয়ার অতি বাড়াবাড়ির কারণে। এত গোপনীয়তার পরও মিডিয়া ওয়ালারা এত সব খবর কি করে পায়? এ নিয়ে মখা সাহেব মনে হয় ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন। তাঁর এমন দুশ্চিন্তা সহসা কাটবে বলে মনে হয় না।

একটি মাত্র উপায়ে তিনি দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে পারেন আর সেটি হল সন্ত্রাসীকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখা। এদের কোন দল নেই। এদেরকে কোন দলে ফেলে সে ভাবে তাদের সাথে আচরণ করতে গেলে বিপত্তি বাড়বে বৈ কমবে না। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের গুরু দায়িত্ব আপনার উপর। সন্ত্রাসীর মুক্তির সংবাদে আইন শৃঙ্খলার অবনতির যে আশঙ্কায় দেশের সাধারণ মানুষ আপনিও কিন্তু কোন ভাবেই আশঙ্কা মুক্ত থাকতে পারবেন না। কারন কোন অঘটন ঘটলে তার দায় আপনার উপরই বর্তাবে। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে আপনার কাছে জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা টুকুই আমাদের চাওয়া।

মনে রাখবেন বিকাশ নামের ঐ সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দিয়ে আবার ধরার মধ্যে কৃতিত্ব খোজার চেয়ে ওকে আটকে রেখে ঐ কৃতিত্বটুকু না নেয়াই শ্রেয়তর।

বিজয় দিবসের শ্লোগান হোক পূর্ব প্রজন্মের, জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রক্তের ঋণ শোধের অঙ্গীকার। দেশকে খুদা, দারিদ্র, অনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ আর ত্রাসের হোলি খেলা থেকে মুক্ত করে সত্যিকারের উন্নয়নের প্রচেষ্টা হোক আজকের প্রজন্মের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।

তারিখঃ ১৬/১২/২০১২ ইং।