কুইক রেন্টালঃ পাক প্রধানমন্ত্রীর জন্য কারাগার অপেক্ষমান – আমাদের “ইনডেমনিটি” সংশ্লিষ্টদেরকে রক্ষা করতে পারবে তো?

প্রবাসী
Published : 16 Jan 2013, 01:38 PM
Updated : 16 Jan 2013, 01:38 PM

বলা হয়ে থাকে দেশের অর্থনীতির মস্ত বড় বিষ ফোঁড়া এই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গুকারী এই বিষফোঁড়া দেশের অর্থনীতিকে নিয়ে গেছে ভঙ্গুর অবস্থানে। যদিও আমার মত কোটি খানেক খেটে খাওয়া প্রবাসীর উপার্জিত আর পাঠানো রেমিট্যান্সের উপর ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ রেকর্ড গড়েছে। কথা হল মাথা মোটা পাকিরা মনে করেছিল এই কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টে শুধু লাভ আর লাভ। বুঝতেই পারেনি অখ্যাত কোন এক মুহাম্মদ তাহিরুল কাদরি নামের কেউ এ নিয়ে উচ্চ বাচ্চ করতে পারে। ওরা মনে করেছিল সুযোগ এসেছে কামিয়ে নিই। ওরা না বুঝে এই প্লান্টে ব্যক্তিগত লাভ দেখেই ঐ প্রকল্প চালু করেছিল, ফায়দাও হাসিল হয়েছিল। কিন্তু বাদ সাধল জনগণ – বিশেষ করে মুহাম্মদ তাহিরুল কাদরি নামক এক অখ্যাত কানাডা প্রত্যাগত রাজনিতিতে রহস্যময় এক ধর্মীয় নেতা। উল্লেখ্য তিনি 'মিনহাজুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল' (এমকিউআই) নামে এক সংগঠন গড়ে তুলে শুরু করেছেন দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন। মূলত তাঁর দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের ফলেই পাকি প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রেপ্তারের জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। পাকিতে কি হল না হল সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। তবে এটা যে এ উপমহাদেশের রাজনীতিতে কিছুটা হলেও প্রভাব পরবে তা বলাই বাহুল্য। সেটা সময়ই বলে দেবে।

আমার কথা হল বাংলাদেশে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের পূর্বেই দেশের মহান সংসদে বসে মাননীয় (!!!) সংসদ সদস্যগণ একটা আইন পাস করলেন যে এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে কোন ধরনের উচ্চ বাচ্চ কেউ করতে পারবে না। প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন এই ইনডেমনিটি? মাননীয়(!!) সংসদ সদস্যগণ কি আইন পাস করলেন তা নিয়ে কথা বলা আমার মত আম জনতার কাজ নয় সেটা আমি জানি। কারন আমারা উনাদের মহান সংসদে ভোট দিয়ে পাঠিয়েছি আমাদের সেবা(!!) (নাকি দলিত-মথিত) করার জন্যই। আমরা সাধারণ জনগণ সেটা ভালকরেই জানি তারা আমাদের খুব ভাল করেই সেবা নামের দলিত-মথিত করবেন। তারা জনগনের সেবক(!!), আর সেবা (দলিত-মথিত) করাই তাঁদের কম্ম। তারা ভোটের পূর্বে আমাদেকে নানা প্রাকার স্তুতি বাক্য শুনান, এই দেবেন, ঐ দেবেন, দেশ উন্নয়নের বন্যায় ভাসাবেন, দশ টাকা কেজি চাল, বিনা মূল্যে সার দিয়ে কৃষকের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবেন ইত্যাদি ইত্যাদি।। তাঁদের ক্ষমতায় আরোহণের পর দেখি চালের দাম যা ছিল তাই বা তারও বেশী। কৃষকের সার প্রাপ্তি বিনা মূল্যে তো নয়ই মেলে (ক্ষেত্র বিশেষে মেলেও না সময় মত) উচ্চ মূল্যে আর উৎপাদিত ধান বাজারে বিকোয় উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে। এসব আমরা সবাই জানি, তাই এসব বলার জন্যও আমার এই লেখা নয়।

যেমনটা শিরোনামে বলেছি, ""কুইক রেন্টাল পাকিতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য কারাগার অপেক্ষমাণ – আমাদের "ইনডেমনিটি" সংশ্লিষ্টদের কে রক্ষা করতে পারবে তো?"" গতকাল পাক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রাপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আমাদের দেশপ্রেমিক সরকার এই কুইক রেন্টালের ধুম্রজালের ভেতরে যে খাটি মধু আছে তা আচ করতে পেরেছিলেন বা জেনেছিলেন এখান থেকে খাটি মধু আহরণ করা খুবই সহজ। আর তাই তারা সব ধরনের ঝুকি থেকে মুক্ত থাকতেই ইনডেমনিটি পাস করে নিলেন যে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে পারবে না। আর এর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে সে কেমন খেতাবে ভূষিত হবেন তা আমাদের মহামান্য উপদেষ্টা মিঃ তৌফিক সাহেব (বীর বিক্রম) বলেই দিয়েছিলেন যে "কুইক রেন্টালের বিরুদ্ধে যে কথা বলবে সে হয় অজ্ঞ/মূর্খ, নয়তো দেশদ্রোহী" তাই এর বিরুদ্ধে কিছু বলে দেশ দ্রোহী হতে চাইনা; অজ্ঞ বা মূর্খ এই আমি এর চেয়ে বেশী নীচে নামতে নারাজ।

যে কথাটা বলতে চাচ্ছি তা হল এই ইনডেমনিটি আমাদের বিদ্যুৎ মন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টাদের শেষ রক্ষা করতে পারবে তো? আজ ক্ষমতায় আছেন বলে উনারা ইনডেমনিটি নামক এক ঢাল সামনে রেখে যে ভাবে খুশি লুটে পুটে খাচ্ছেন। তো ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয় এটা আমারা খুব ভাল করেই জানি – ক্ষমতাসীনদের মধ্য থেকেই আজ অনেকে আগাম বলে দিচ্ছেন আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নাও আসতে পারে। এই যখন অবস্থা তখন আওয়ামী লীগ পরের নির্বাচনে ক্ষমতা হারালে, যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা কি এই ইনডেমনিটি লোপ করে এর বিরুদ্ধে জনগণকে কথা বলার অধিকার দেবেন না? যদি তাই হয় তবে উনাদের পরিনতি কি পাক প্রধানমন্ত্রীর মতই হওয়ার আশঙ্কা থাকে না?

এই কুইক রেন্টাল আমাদের অর্থনীতির যে কি ভীষণ ক্ষতি করে চলছে তা আমাদের অর্থমন্ত্রী মহোদয়ও স্বীকার করে কিছুদিন পূর্বে বলেছিলেন এটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। তো তিনি যেহেতু বুঝতেই পেরেছিলেন এটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত তবে এত দিনেও এই ভুলটা সংশোধনের চেষ্টা করছেন না কেন? সংশোধনের ব্যবস্থা করলে তো জনগণ কিছুটা হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারতো আর সরকারের পক্ষেও এর দায় মুক্তির একটা পথ খোলা থাকত। আমরা ভাল কিছুর আশায় অনেক সময় না বুঝে ভুল করি কিন্তু যখন বুঝতে পারি এটা ভুল তখন আমারা তৎক্ষণাৎ সেই ভুল থেকে সরে আশার প্রচেষ্টা করি অধিকতর লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে। কিন্তু আমাদের সরকার কেন ভুল হয়েছে বুঝতে পেরেও আজো এই গলার কাঁটা বহন করে চলছে? জনগনের গলায় এমন কাঁটা বিধিয়ে দিয়ে তা নামানোর জন্য আজ পর্যন্ত বিড়ালটাও খুঁজছেন না কেন? নাকি তারা গ্রাম্য মোড়লের মত উভয় পক্ষ থেকেই ফায়দা হাসিল করে আঁখের গচাচ্ছেন? প্রশ্নটা কিন্তু দিবালোকের মত সত্য।।

অখ্যাত এক ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ তাহিরুল কাদরি যদি পাক প্রধানমন্ত্রীকে এই কুইক রেন্টালের জন্য সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের নির্দেশের ব্যবস্থা করতে পারেন তবে ষোল কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলার মাটিতে এক জনও যে আমাদের দেশের কুইক রেন্টাল দুর্নীতির প্রশ্ন তুলে সোচ্চার হাবেন না তার কি কোন গ্যারান্টি আছে??

ছবিটি Weekly Bliz থেকে সংগৃহীত।

তারিখঃ ১৬/০১/২০১৩ রিয়াদ, থেকে।