জায়গামত না পৌঁছালে ঢিল ছুঁড়ে লাভ কী!

প্রবীর বিধান
Published : 29 Oct 2012, 01:59 PM
Updated : 29 Oct 2012, 01:59 PM

সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমারে আবার সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় আমাদের দেশে ও বিদেশে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ হচ্ছে রোহিঙ্গাদের উপর সংখ্যালঘু বৌদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের। গত জুনে যখন সংঘর্ষ ছড়ালো তখনও প্রতিবাদ হয়েছে, আমরা ব্লগে, ফেসবুগে লিখেছি, কেউ কেউ মিছিল, মানববন্ধন, সেমিনার করেছে। এবারও হচ্ছে।

কিন্তু গতকদিনে কয়েকটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে মনে হলো উনারা ভুল জায়গায় কুঠারাঘাত করছেন, মানুষকে সচেতন করে সম্প্রীতি বাড়ানোর মাধ্যমে দলের শক্তি বাড়ানো বাদ দিয়ে উনারা বিভেদ তৈরি করছেন — রাগ, ক্ষোভ আর হিংসা প্রকাশের মাধ্যমে। কেউ বা বিষয়টাকে অন্যদেশের বা অন্য ধর্মের সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যাচ্ছেন, বা তটটা গভীরে যাচ্ছেন না। আত্মকেন্দ্রীক মানুষদের এখানে হিসেবে ধরা হয়নি।

এসব না করে এইসব শিক্ষিত মানুষগুলো যদি প্রযুক্তিকে ঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে মানে ইংরেজী ব্লগ লেখা, মায়ানমার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে নিয়মিত হাজার হাজার ইমেইল পাঠানো, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা ইত্যাদি কাজে সময় দিতেন তাহলে আগ্রাসী দানবীয় শাসকগোষ্ঠী কিছুটা হলেও ভয় পেত।

এই নিন, ৩টা ইমেইল ঠিকানা দিচ্ছি। আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে নিয়ে ইংরেজীতে স্পষ্ট-কড়া ভাষায় ইমেইল করুন। যত বেশী করবেন তত বেশী চাপ প্রয়োগ করা হবে। (পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়-mofa.aung@mptmail.net.mm, ধর্ম মন্ত্রনালয়-religious affairs social-wel-myan@mptmail.net.mm, ঢাকার দূতাবাস-mynembdk@Dhaka.net)

কিছু সহজ – পুরান কথা:

এই পৃথিবীতে ৭০০ কোটির উপর মানুষ (আরো কয়েক শত কোটি অন্যান্য প্রাণি ও আমাদের পরিবেশের অন্যান্য উপাদান), অসংখ্য ধর্ম, কয়েক হাজার তাদের ভাষা, নানান জায়গায় তাদের বসবাস। আমাদের জানামতে এই বিশাল ব্রহ্মান্ডে এই পৃথিবীতেই শুধু প্রাণ আছে।

সকল প্রাণিদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ আছে মৌলিক বিষয় নিয়ে। খুনাখুনি পর্যন্ত আছে কিছু মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে, যেমন খাদ্য, বসবাসের জায়গা ও যৌন ক্ষুধা।

প্রায় সব প্রাণিদের মধ্যেই কমপক্ষে দুইটি গোত্র দৃশ্যমান — শাসকদল ও শোষিত শ্রেণী। আরেকটি আছে দালালচক্র।

শোষিতদের মধ্যে কেউ কেউ দু:সাহসিক হন, তবে তাদের সংখ্যা কম। বেশিরভাগই মেনে নেন সব অত্যাচার, নির্যাতন, খুন, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রতারনা…

বিপ্লবীদের সংখ্যা কম হলেও এরাই জানান দেয় সচেতনতার, এরাই উব্দুদ্ধ করে শোষিত জনগোষ্ঠীকে। ফলে বিপ্লবীরা কখনো মরেনা। এরা নি:শেষ হয়ে যায় না।

আর সেকারনেই সমমনা শাসকদল ও তাদের ভৃত্যসদৃশ দালালেরা প্রতিনিয়িত যা খুশি তা করতে পারেনা, আর করে ফেল্লেও পরে কখনো না কখনো শাস্তির মুখোমুখি পড়তে হয়।

বিপ্লবের কারনে শাসকেরা পিছু হটে। শুধুমাত্র বিপ্লবের ভয়েই শাসকেরা নূন্যতম জনকল্যানকর কাজ করতে বাধ্য হয়।

নইলে এরা লুটেপুটে খেয়ে ফেলত সব, কোটি কোটি মানুষ অসুস্থ হয়ে, না খেতে পেয়ে, আর সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মারা যেত।

যুগে যুগে সেইসব বিপ্লবীরা পৃথিবীর নানাপ্রান্তে দূর্বলদের পক্ষে কাজ করেছেন, ছিনিয়ে এনেছেন বিজয়।

কখনো কখনো বিপ্লব ধরাশায়ী হয়েছে শাসকের অস্ত্র, টাকা আর ধূর্ততার কাছে। কখনো বা বিপ্লবের সুফল পাওয়া যায়নি বিপ্লবীদের মধ্যে বিভেদ, ভুল বোঝাবুঝি আর কারো কারো মীরজাফর বনে যাবার কারনে।

ইতিহাস বিচার করলে দেখা যায় সেটাও কমপক্ষে দুইভাবে লেখা হয়।

কষ্টের বিষয় এই যে, যুগের সাথে সাথে মানুষ নানা দিকে অনেক উন্নয়ন করলেও মূল বিষয় মানে সম্প্রীতি বাড়ানোর বিষয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে, প্রেমের বড় অভাব দেখা যাচ্ছে। বাড়ছে ঘৃনা, মতানৈক্য, বিবাদ আর প্রতারনা।

মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে দ্রুত!

যাদের মাথায় উগ্রতা আছে, আছে পাগলামি তারাই শাসকদলের মাথা। এদের কাছে সুবিচার আশা করা বোকামি।

কিন্তু এরা কি কখনো সাধারন মানুষের কাতারে আসবে? আসে?

না।

আর তাই বিপ্লবীরা জেগে থাকে যুগে যুগে। তাদের প্রতিবাদী কন্ঠ শত বাধার মুখে থেমে যায়না।

শাসন ব্যবস্থায় যতটুকু আচরনগত ও পরিকল্পনার পরিবর্তন আমরা দেখি তার যোগান দেয় বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ।

এই বিপ্লবী জনতার মধ্যে আধুনিক যুগে এসে দেখা যাচ্ছে বিভেদ, তর্ক আর অন্যের প্রতি ঘৃনাবোধ। এটা কারো কাম্য নয়, কেননা এতে করে ক্ষতিটা হয় সেইসব বিপ্লবী জনতা আর শোষিতদের কষ্ট আরো বাড়ে। আর তাই, সবচেয়ে দায়িত্ববান যারা তাদের কাজ হবে বিপ্লবীদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার গুরুদায়িত্বটি নেয়া।

পাশাপাশি শাসকদলের বা দালালদের অনুসারি বা অনুচরদের সনাক্ত করে জনগনের মধ্যে তাকে স্পষ্ট করে চিনিয়ে দিতে হবে যেন সবাই তাকে এড়িয়ে চলে বা কোন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়।

শুধু নেতাগোছের নয়, বিপ্লবের সাথে জড়িত সবারই উচিত হবে কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে বিপ্লবের গতি বদল হচ্ছে কিনা বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে দিক পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষন করা।

তাছাড়া জায়গামতো আঘাতটা পড়ছে কিনা সেটা দেখা জরুরি।

নয়তো বিপ্লবের ফলাফল আশানুরূপ না হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।