উন্মুক্ত খনি নিয়ে শুধু প্রতিশ্রুতিভঙ্গ নয়, লুটপাট চলছে

প্রবীর বিধান
Published : 6 Nov 2012, 06:33 PM
Updated : 6 Nov 2012, 06:33 PM

উন্মুক্ত কয়লা খনি ও এশিয়া এনার্জিকে বাংলাদেশ থেকে তাড়ানোসহ ৬দফা দাবিতে আগস্ট মাসজুড়ে আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২৬ তারিখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালায় আন্দোলনকারীদের উপর যাদের মধ্যে এলাকার ছেলে-মেয়ে-বুড়ো সবার পাশাপাশি সারা দেশ থেকে সমব্যাথীরাও ছিলেন। আমিন, সালেকিন ও তরিকুল প্রাণ হারালেন। তখনকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সমঝোতায় আসতে রাজী হলো ৩০ তারিখে। রাজশাহীর মেয়র মিজানুর রহমান মিনুকে পাঠালেন খালেদা, চুক্তি হলো। কথা ছিল বাংলাদেশ কখনো উন্মুক্ত খনি হবেনা, এশিয়া এনার্জিকে বাংলাদেশ থেকে তাড়ানো হবে, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা দেবে সরকার, এবং আরো তিনটি দাবি পূরণ করবে।

সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনপূর্ব প্রচারনার অংশ হিসেবে এবং ফুলবাড়ির আন্দোলনকে নিয়ে ভোটের রাজনীতি করার অভিপ্রায়ে সেখানকার সরকারি কলেজ মাঠে ১৪দলের সমাবেশে বক্তব্য রাখলেন, যা ছিল পুরোপুরি আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষনার মত। প্রথম আলোর ৫ই সেপ্টেম্বরের পত্রিকা অনুযায়ী, তিনি বলেছিলেন, "জোট সরকার ফুলবাড়ি হত্যাকান্ডের ঘটনায় ফুলবাড়ির মানুষের সাথে করা চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে এর পরিনাম ভয়াবহ হবে। আর এর দায়দায়িত্ব নিতে হবে জোট সরকারকে। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল ফুলবাড়ির জনগনের সাথে আছে।"

তিনি বলেন দেশের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে ফুলবাড়িবাসী যে আত্মত্যাগ করেছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের জন্য তিনি ফুলবাড়িসহ সংশ্লিষ্ট চার উপজেলার নারী-পুরুষদের ধন্যবাদ জানান।

এমনকি তিনি বলেছিলেন ক্ষমতায় গেলে ফুলবাড়ি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করবেন!!!

কিন্তু বিধিবাম। ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায় ২০১০ সালের ৭ই এপ্রিল জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের এক সভায় তিনি বললেন উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার ব্যাপারে চিন্তা করতে। যদিও তিনি ফুলবাড়ির কথা বলেননি, বলেছেন বড়পুকুরিয়া খনিকেই (বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কাজ চলছে) রুপান্তর করে ফেলা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে। উল্লেখ্য, এলাকা দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। পাশাপাশি তিনি বলেছেন আগে ক্ষতিপূরণ দিয়ে স্থানীয়দের জমি অধিগ্রহন করতে হবে ও পরিবেশের কথা মাথায় রাখতে হবে এবং এর নানা দিক নিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন।

তারপর থেকেই শুরু হলো সরকারের তোড়জোড়। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের শেয়ার মার্কেটে এখনও এই খনির কথা বলে টাকা কামিয়ে যাচ্ছে এশিয়া এনার্জির মাদার কোম্পানী জিসিএম। সম্প্রতি সরকারের তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কমিটি জার্মানী ঘুরে এসে এবং ভারতের উন্মুক্ত কয়লা খনির উদাহরন দিয়ে জানালেন আমাদের ফুলবাড়ি ও বড়পুকুরিয়াতে এই পদ্ধতিই ব্যবহার করা উচিত। উইকিলিকসের মাধ্যমে জানা যায় যে, আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদুত মরিয়ার্টি ২০০৯ সালে এক বৈঠকে হাসিনার জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহীকে চাপ দিয়েছিলেন এশিয়া এনার্জির প্রস্তাব মেনে নিতে এবং ইতিবাচক আশ্বাস পেয়েছিলেন।

গত সপ্তাহে জানা গেল এশিয়া এনার্জি তাদের আগের প্রস্তাবনা কিছুটা পরিবর্তন করে সরকারের আনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আর এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় দিনাজপুর ও ফুলবাড়ি প্রশাসনকে চিঠি পাঠিয়েছে এশিয়া এনার্জির পর্যবেক্ষন টীমকে সহায়তা করার জন্য। চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানিটি পূর্ববর্তী অনুসন্ধানের কার্যকারিতা, কৃষি সম্ভাব্যতা, জনসংখ্যা, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা, পরিবেশগত উন্নয়নসহ সমগ্র প্রকল্প সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে চায়। খনিজ অনুসন্ধান লাইসেন্স ও খনন লিজ থাকায় তাঁদের এসব কাজ করার অধিকার আছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-২-এর সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ ফারুক-উজ-জামান স্বাক্ষরিত চিঠি দুটি গত ১৪ অক্টোবর দিনাজপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পৌর মেয়রের কাছে পৌঁছায়।

একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, খনিজ সম্পদ আহরণের অনুমোদন সরকার চূড়ান্ত না করলেও প্রচলিত আইন এবং লাইসেন্সের আওতায় এশিয়া এনার্জি শুধু খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত প্রাক-মূল্যায়ন, পরিকল্পনা, প্রকল্প বিশ্লেষণের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগামী দুই বছর জরিপকাজ চালাবে। এই জরিপ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে।

তার মানে এসব কর্মকান্ড প্রতিহত করতে চাইলে জনগনের উপর আবার খড়গহস্ত হবে বর্তমানে শেখ হাসিনার তত্বাবধানে থাকা পেটোয়া বাহিনী!

আমি ধিক্কার জানাই।