কর্তৃপক্ষ, দয়া করে গরীবের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন

প্রবীর বিধান
Published : 11 Nov 2012, 03:21 PM
Updated : 11 Nov 2012, 03:21 PM

সীমিত আয়ের মানুষেরা স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি ভাবেনা যতক্ষন না বড় কোন সমস্যায় পড়েন। টাকা-পয়সা খরচ আর কাজ করতে না পারার ভয়ে। আবার নীতিনির্ধারক ও ক্ষমতাবান, আর স্বচ্ছল মানুষরা জনগনের স্বাস্থ্যসুবিধার বিষয়টাকে নিয়েও মাথা ঘামান না যতক্ষন না পর্যন্ত তাদের খামখেয়ালীপনার বিরুদ্ধে সুবিধাবঞ্চিতরা প্রতিবাদ করেন।

এই দুয়ের মাঝখানে আছে মিডিয়া, শুধু এরাই পারে সাধারনের সমস্যাগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে, সরকারকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে। কিন্তু বিধিবাম!

বেশিরভাগ রিপোর্টাররা একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বা এলাকার অনেককিছুই জানেন। কিন্তু বার্তা সম্পাদকেরাই বরং স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্ব দেন না। ফলে রিপোর্টারেরা খবর সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দিলেও মূল পাতা বা পৃষ্ঠা সম্পাদকদদের উদাসীনতায় পর্যবসিত হয় সেসব প্রতিবেদন। যেমন ধরুন, পত্রিকায় স্বাস্থ্য পাতা বের হয় সপ্তাহে ১দিন, আর সামনের বা পেছনের পাতায় স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয় মাসে বড়জোর ৪টি।

আবার টিভিতে স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান হয় সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১দিন, বিভিন্ন দিবসে দুই একটি বিশেষ প্রতিবেদন হয়, আর মাসে গড়ে ২/৩টি বিশেষ প্রতিবেদন হয় এইখাতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে।

আবার মিডিয়ার উদাসীনতার কারনটিও খুব বাস্তব। পত্রিকা ও টিভি দুটি মাধ্যমই খুব ব্যয়সাপেক্ষ, ফলে জনস্বাস্থ্য নিয়ে আর্থিকভাবে অলাভজনক প্রতিবেদন প্রকাশ মালিক বা সম্পাদকেরা করতে চায় না। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ওষুধ বা এধরনের কোম্পানীর পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রকাশে তাদের নীতি খুবই উদার। এই বিজ্ঞাপনের উপর ভিত্তি করেই মিডিয়ার কর্মীদের বেতন-ভাতা দেয়া হয়।

যদিও এ ধরনের সেবামূলক কাজ যারা করে তারা সমাজে ও গরীব মানুষের কাছে খুবই সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়। তবুও নগদ অর্থের লোভে বা কিপটামির কারনে মিডিয়াগুলো স্বাস্থ্যখাতকে আরো জনবান্ধব করায় কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছেনা। কিছু স্বচ্ছল মানুষ যে নিজ উদ্যোগে গরীবদের সাহায্য করছে তা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত, কিন্তু সেটা কি যথেষ্ট?

এদিকে মন্ত্রনালয় বছরে মাত্র কয়েকটি দিবস পালন করে, ৫ বছরে ১০টা সিট বাড়ায় সরকারি হাসপাতালে, ডাক্তারদের বেতন বাড়ায় টিপে টিপে, কর্মচারিদের অবস্থা আর কি বলবো। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য সরকারদলীয় নেতারা বুক ফুলিয়ে বিভিন্ন দিবসে ফিরিস্তি দেন তারা কত চেষ্টা করছেন সারা বছর! বছরে ২/১টা চোখে পড়ার মত কাজ দেখিয়ে বাহবা নেবার এই প্রচেষ্টা সব সরকারের মধ্যেই দেখা যায়।

আবার দেশে-বিদেশে দেখানোর জন্য প্রতি অর্থবছরে দুই তিনটা ওষুধ কোম্পানী, কিছু ক্লিনিক, ভুয়া ডাক্তার ইত্যাদিকে ধরে জরিমানা করে।

কিন্তু আবার শত শত ওষুধ কোম্পানী, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দিতে থাকে বছর বছর।

কিন্তু ভাই, মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা তো বছরে ২/১ দিন আসেনা। যখন-তখন আসতে পারে। বিশেষ করে গরিব মানুষ যারা নোংরা-ঘিঞ্জি এলাকায় বসবাস করে তাদের স্বাস্থ্যসমস্যা হয় অনেক বেশি। তার উপর শিক্ষার প্রসার খুব বেশি না হওয়ায় গরীব মানুষদের মধ্যে স্বাস্থ-সচেতনতা খুব একটা দেখা যায়না।

মূল সমস্যাটি হলো সরকার স্বাস্থ্যখাতকে মানবিকভাবে না দেখে দাতাসংস্থা ও ব্যবস্যায়ীদের কথা মেনে নীতি নির্ধারন করে অসচ্ছল জনগনকে আরো বেশি নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।
এর ফলে দেখা যায়, ভালো স্বাস্থ্যসুবিধা পাওয়া যায় শহরের দামী ক্লিনিক আর প্রাইভেট হাসপাতালে, আর অপরদিকে কম্পাউন্ডার দিয়ে চলে গ্রামের মানুষদের কোনরকমে টিকিয়ে রাখা, হুট-হাট জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম বেড়ে যায়, আর কোটিপতি রাজনীতিবিদরা একটু হাত পা ব্যাথা হলেই উড়ে যান ভারত, ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুর।

যদিও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ি সরকারেরই দায়িত্ব জনগনের ৫টি মৌলিক অধিকারের একটি এই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার, তথাপি বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হয় সরকার, তথা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে প্রচন্ড খামখেয়ালী।