যুদ্ধাপরাধীদের থামাতে হবে, দ্রুত

প্রবীর বিধান
Published : 9 Dec 2012, 03:54 PM
Updated : 9 Dec 2012, 03:54 PM

জামায়াত সেই ২০০৯ সাল থেকেই নানাভাবে এগুচ্ছে এই বিচার বন্ধ করতে। এদেশে তাদের সমর্থন/ভোট ৩০ লাখের বেশি না হলেও প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক "ক্ষমতা" অসীমের কাছাকাছি। সাথে আছে পাকিস্তানের জামায়াত, আইএসআই, সৌদি-আরব, আমেরিকা ও নানাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পৃষ্ঠপোষকরা যারা প্রতিনিয়ত টাকা-পয়সা, আইনি সহায়তা, বক্তব্য দিয়ে এই বিচারের "ভুল-ভ্রান্তি" বা একপেশে আচরন প্রমান করে একে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে।

এদের কাছ থেকে যৌক্তিক/নৈতিক/বৈধ কার্যক্রম আশা করা বোকামী। যে করেই হোক, এরা ঝামেলা পাকাবেই। উদ্দেশ্য একটাই—প্রমান করা যে এই বিচার স্বচ্ছ নয়, এই বিচারে টার্গেট করে মামলা হয়েছে এবং রায় দেয়ার আগে থেকেই সরকারের চাপ আছে।

এখন পর্যন্ত আমাদের ট্রাইবুন্যালের বিচারকেরা যে পরিমান নিরপেক্ষতা দেখাচ্ছে এবং জামিন দিচ্ছে বা আসামী ও আইনজীবীদের যেভাবে কথা বলতে দিচ্ছে তা নজীরবিহীন। রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার সুযোগ রেখেছে সরকার। সকল সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইনী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ সবকিছুই করা হচ্ছে যেন রায় কার্যকর হবার পরে বিচার নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের স্বচ্ছতার বিরোধী, আমি চাই আসামীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হোক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনির সামনে আমরা এদের পিটিয়ে-লাথি মেরে-খুঁচিয়ে মারতে চাই। যারাই এদের পক্ষে কথা বলবে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করা উচিত। এই স্বাধীন বাংলাদেশে কোন পাকিস্তানপন্থী-ভন্ড ইসলামিক শক্তি থাকতে পারবেনা। এরা মানুষ না, এরা জানোয়ার।

তবে সাংবাদিক হিসেবে আইন মেনে কথা বলা ও কাজ করতে আমি নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ।

মুক্তিযুদ্ধ আমি দেখিনি, কিন্তু কৃষক-শ্রমিক-জনতার মুখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নাস্তানাবুদ করার বীরত্বগাঁথা শুনেছি, শুনেছি কিভাবে টার্গেট করে মুক্তিযোদ্ধা-বুদ্ধিজীবী-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়রদের খুন করা হয়েছিল, ধর্ষিতাদের মুখে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় চামচাদের নৃশংস কর্মকান্ডের কথা শুনেছি, লুট-অগ্নিসংযোগের পর পালিয়ে বেড়ানো-ভারতে চলে যাওয়া পরিবারগুলোর দুর্দশার কথা শুনেছি, দেখেছি কিভাবে জামায়াত অখন্ডিত পাকিস্তানের জন্য প্রানপন চেষ্টা করেছে, কিভাবে শান্তিকমিটি-রাজাকার-আলবদর-আলশামস সৃষ্টি করা হয়েছিল, কিভাবে গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদ গং-রা সংগঠিত হয়ে পাকিস্তানের সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-স্বাধীনতাকামী নারী-পুরুষের উপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছিল।

আমার মনে পড়ে যুদ্ধের পর বাংলাদেশে এরা ছিল ঘৃণ্য-অস্পৃশ্য।

কিন্তু এখনও, স্বাধীনতার ৪১বছর পরে, এরা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সংখ্যায় এরা কম হলেও, সংগঠিত নেতা-কর্মী, অর্থ ও প্রশাসনিক প্রভাবের প্রাচুর্যের কারনে এরা এখন একটা বড় (কু)শক্তি হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধু মারা যাবার পর দালাল আইন বাতিল ও প্রায় ১০,০০০ বিচারাধীন রাজাকারকে ছেড়ে দেয়া হলেও এরা ছাড় পেয়ে বাংলাদেশেই থেকে যাবে, বহাল তবিয়তে রাজনীতি-ব্যবসা করবে এটা মেনে নেয়া যায়না। যেই দলই ক্ষমতায় আসুক – এরশাদ, খালেদা বা হাসিনা – এদের বিচারের দাবী এদেশের সকল সচেতন জনগনের, যারা "রাজনীতি করার কারনে কাউকে কোন ছাড় দেয়না"।

"মীরজাফরেরা" জামায়াত-শিবির-শান্তিকমিটি-রাজাকার-আলবদর-আলশামসের বিচার চাইবেনা এবং তাদের বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সেটাই স্বাভাবিক। মীরজাফরেরা যুগে যুগে পৃথিবীর ইতিহাস কলংকিত করেছে।

তবে এটাও ঠিক এই ট্রাইবুন্যালে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ আইনজীবী, তদন্ত কর্মকর্তা ও বিচারক নিয়োগের কারনে বিচারকাজে কিছু দূর্বলতা দেখা যাচ্ছে এবং তদন্ত ও মামলা পরিচালনায় লোকবল খুবই অপ্রতুল। যার ফলে আসামীপক্ষ আদালতে কিছু বাড়তি সুবিধা ভোগ করছে; আবার জামায়াতপন্থীদের দেশ-বিদেশে টাকার বিনিময়ে প্রচারনার বিরুদ্ধে সরকারের নির্দিষ্ট কোন সংস্থা/ব্যক্তি/মন্ত্রী দক্ষতার সাথে জবাব দিতে পারছেনা।

সর্বশেষ, ট্রাইবুন্যালের এক বিচারকের স্কাইপি ও ইমেইল একাউন্ট হ্যাক করে শিবিরের সাইবার বাহিনী-লন্ডনের ইকনোমিস্ট-আমার দেশ যে বেআইনি কাজ করেছে, তার বিরুদ্ধে সরকারের তরফ থেকে এখন নাগাদ কঠোর-যথার্থ কোন ব্যবস্থা এখনও নেয়া হয়নি। সরকারের কাছে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি, দয়া করে এই বিচারটা নিয়ে এরকম খামখেয়ালী করবেন না। শক্তহাতে এসব কার্যক্রম বন্ধ করুন, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী এই জানোয়ারদের বিচারের পক্ষে আছে, নিজেদের কোন বৈষয়িক স্বার্থ ছাড়াই।