বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি, তাই হিন্দু-বৌদ্ধ-আদিবাসীদের উপর আক্রমণ, দেশান্তর থামেনি

প্রবীর বিধান
Published : 17 Sept 2015, 01:51 PM
Updated : 17 Sept 2015, 01:51 PM

আগের-পরের ঘটনা সব বাদ, আমি এখানে শুধু ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কথা বলতে এসেছি। বিএনপি-জামায়াত সরকার সেসব ঘটনার বিচার করেনি, কারন তাদের লোকজনই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছিল। নির্বাচনের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী সপ্তাহে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনী পুতুলের মতো চেয়ে চেয়ে দেখেছে কিভাবে হিন্দু ও আওয়ামীলীগ সমর্থকদের খুন করা হয়েছে, হিন্দু নারী-শিশুদের ধর্ষণ করা হয়েছে, বাড়ি-দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, লুট করা হয়েছে তাদের সম্পদ। দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটেছে বিস্তর।

২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে এসবের তদন্ত করতে একটা কমিশন করলো ২৭শে ডিসেম্বরে। প্রায় ৪০টি জেলায় অনুসন্ধান করে সেই কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিলো ২০১১ সালের ২৪শে এপ্রিল। কমিশন ৩,৬২৫টি ঘটনার সত্যতা পায়, যার মধ্যে ৩৫৫টি খুন এবং ৩,০০০-এর উপর ধর্ষণ, অগ্নি-সংযোগ ও লুটের ঘটনা ছিল। এসব ঘটেছিল পহেলা অক্টোবর ২০০১ থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ২০০২-এর মধ্যে। কমিশন আরো জানায় ২০০৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আরো প্রায় ১৪,০০০ সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ি বিএনপি-জামায়াত সরকারের কমপক্ষে ২৫জন মন্ত্রী-এমপি এবং ২৬,৩৫২জন নেতা-কর্মী এসব ঘটনায় জড়িত ছিল। কিশোরী পূর্ণিমার কথা হয়তো সবারই মনে আছে। এর বাইরে আরেকটা ঘটনা জানানো জরুরিঃ ভোলার লালমোহন এলাকার তিনটি হিন্দু গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা এমনকি শারিরীক প্রতিবন্ধীদেরকেও ধর্ষণ করা হয়েছিল ২০০১ সালের অক্টোবরে।

২০১২ সালের শুরুতে মন্ত্রনালয় অতিরিক্ত সচিব মাইনুদ্দীন খন্দকারের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে যাদের দায়িত্ব ছিল কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উপায় বের করা। প্রধান সুপারিশগুলো হলো প্রতিটি ঘটনায় মামলা করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেয়া। এই কমিটিও তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। পরবর্তীতে ২০১২-২০১৩ সালে পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা ১৪৫টি মামলা করেন। কিছু মামলায় অভিযোগ দাখিল হলেও মূল আসামীদের বাদ দেয়া হয়। কিছু মামলা ঠিকমতো করা হলেও পরে আর অগ্রগতি নেই…কিন্তু এই পর্যন্তই!

গতবছরের শুরুতে আশার আলো দেখা যাচ্ছিলো কারন হাইকোর্ট সেই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করার আদেশ দেয়। সরকার পহেলা এপ্রিলে গেজেটের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এরপর ১০ই এপ্রিল হাইকোর্ট দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সরকারকে একমাসের সময় দেয়। কিন্তু সেই এক মাস এখনো শেষ হয়নি।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি, তাই হিন্দু-বৌদ্ধ-আদিবাসীদের উপর যখন-তখন আক্রমন, খুন-ধর্ষণ, জমি দখল, জোরপূর্বক দেশান্তর কোন কিছুই থেমে থাকেনি…

সম্প্রতি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছে সরকারি দলের এমপি থেকে শুরু করে মন্ত্রীরাও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, জায়গা-জমি, দেবোত্তর গির্জা ও বিহারের সম্পত্তি জবর দখল করছে! অভিযোগ আছে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অর্পিত সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে হিন্দুদের কাছে ঘুষ চাইছে। আবার আমলারা এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে! এমতাবস্থায় ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দুদের সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণা একদিকে নির্যাতিতদের জন্য কিছুটা স্বস্তির হলেও বাংলাদেশ সরকার ও দেশের শান্তিকামী মানুষের জন্য তা লজ্জার। বিজেপি বলেছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নির্যাতিত অমুসলিমদের তারা ভারতের নাগরিকত্ব দিবে।