হাসিনা’র বয়ান মার্চ ১৪, ২০১২

প্রবীর বিধান
Published : 16 March 2012, 02:11 AM
Updated : 16 March 2012, 02:11 AM

খালেদার বয়ানের পর হাসিনারটা মিললো না!

নানাভাবে বাধা দেয়ার পরেও যখন বিএনপি একটা বড় সমাবেশ করে ফেললো, তাও আবার কোনরকম "নাশকতা-বোমাবাজি" ছাড়া তখন মঞ্চে উঠে বাস্তবতা হারিয়ে ফেললেন হাসিনা। গত কয়েকদিন ধরে যেসব কথা মনে পুষে রেখেছিলেন (মানে নাশকতা হলে যা বলতেন) সেগুলোই বেরিয়ে এসেছে স্বভাবসিদ্ধ সরকারি দলের নেতার ভঙ্গিতে।

এমন খোঁচা খালেদাও দিতেন প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে। আর তারই ঝাল মেটাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। এ দেশের রাজনীতিটা হয়ে গেছে আসলে এই দুই "মহান নারী"র তর্ক-মল্লযুদ্ধের মাঠ, তাদের দলের নেতা-সমর্থকরা বিচারক, আর দর্শক হলো অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী আর আম-পাবলিকরা। যাই ঘটুক না কেন যুদ্ধ করাটাই যেহেতু যোদ্ধার কাজ, তাই সবচেয়ে ক্ষমতাবান যোদ্ধা (মানে যিনি সরকারি দলে থাকেন) কিছু ছেড়ে কথা বলেন না, ফলে মাঝে মাঝে পুরান কথা উগড়ে বলেন আর সাথে কিছু নতুন চুটকি ছেড়ে দেন বাজারে যা ছুটে যায় দলের সমর্থকদের রক্তের শিরার মধ্য দিয়ে তৃনমূল পর্যায়ে, আর আবার পাবলিকের কান ঝালাপালা হয়।

দুঃখজনক যে, খালেদা জিয়ার বক্তব্যের ২দিন পর ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা দখল করে ১৪দল সমাবেশ করলো (এ আর নতুন কি?) অথচ "দিন বদলের কথা" যারা বলে তাদের তো অন্তত নতুন কিছু করে দেখানোটা দরকার ছিল (অন্তত মুখরক্ষা করতে)। যাই হোক, উনারা হয়তো এই ডিজিটাল যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে পারছেন না। তাই একটু দেরি হচ্ছে। তবে ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে এদেশের সবকিছু ঝকঝকা-ফকফকা হয়ে যাবে আওয়ামী লীগ যদি একটানা ক্ষমতায় থাকতে পারে। পুরনো রোগ তো আর এত সহজে ভালো হয়না।

সেই কবে থেকে ঝগড়া-ঝাঁটি চলছে। মাঝে মধ্যে কমলেও থামার কোন লক্ষন দেখতে পাচ্ছিনা। কিছুদন আগে খালেদা যেদিন বললেন তার দল অতীত থেকে শিক্ষা নেবে, তারপর আর তাকে সম্ভবত হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে কিছু বলতে শুনিনি। শুধু সরকারের নানা সিদ্ধান্ত-নীতির সমালোচনা করেছেন আর ব্যর্থ বলেছেন হাসিনার সরকারকে। মনে হয় প্রধানমন্ত্রী সহ্য করতে পারছেন না যা তার যুদ্ধের একমাত্র প্রতিযোগী এভাবে হার মানতে পারে। এমনও হতে পারে এটা খালেদার কোন চাল, এই ভেবে হাসিনা তার তীর্যক বান ছেড়েই যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে খালেদার বিরুদ্ধে ২টি, আর তার ছেলেদের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি মামলার কাজ পুরোদমে চলায় হয়তো কিছুটা দমে গেলেন খালেদা।

বিএনপি কোনদিন কোন ভালো কাজ করেনি, খালেদা, তার দুই ছেলে আর দলের সবাই চুরি-চামারি করেছে, সুতরাং এদের যেন পাবলিক ভোট না দেয় সে লক্ষ্যে বিরোধী দলের নেত্রী ও অন্যান্যদের নামে (এমনকি জিয়ার নামে) কতবেশি খারাপ কথা বলা যায় সেটা পরীক্ষা করে দেখছেন হাসিনা। বাজার যাচাই করছেন আর কতদিন কোন বিষয় নিয়ে বললে তার দলের সমর্থকরা শিহরিত হবে এবং রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারবে, যেন কোনমতেই জনগনের সহমর্মিতা পেয়ে বিএনপি আগামীবার ক্ষমতায় আসতে না পারে।

মনে হচ্ছে এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আমারও মাথা খারাপ হওয়ার দশা। আসল কাজটাই ভুলে যাচ্ছি।

উদ্ধৃতিঃ প্রথম আলো
* বুধবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট এলাকায় ১৪ দল আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও বিরোধী দলের দাবি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলেননি। বরং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সবিস্তার বর্ণনা ছিল তাঁর বক্তৃতায়। কিন্তু মুন্সিগঞ্জে লঞ্চ-দূর্ঘটনায় যে এতগুলো মানুষ মারা গেল সে ব্যাপারে একটা শব্দও উচ্চারন করেননি নেত্রী বা অন্য কোন বক্তা।

১, "আগামীতে অবশ্যই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার বিষয়টি প্রমাণ করেছি।" প্রতিক্রিয়াঃ "জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে" এই কথাটা শুনে একটু উষ্ঠা খাইলাম। যতদূর মনে পড়ে উনি ইতিমধ্যেই তা নিশ্চিত করেছেন এই মর্মে গুটিকয়েকবার বক্তব্য দিয়েছেন। কোন কথাটা বিশ্বাস করবো? উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও সংসদীয় আসনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সেখানে ভয়ানক দাঙ্গা-খুনাখুনি না হলেও মোটামুটি সন্তোষজনক। কিন্তু এসব নির্বাচন দিয়ে তো আর অভিষ্ট লক্ষ্য অর্থ্যাৎ রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া যায় না। তাই এই আশায় আমি আশাবাদী হতে পারলাম না বলে দুঃখিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

২, "দুই নম্বর পথে বাংলাদেশে আর কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। যতই চেষ্টা করুন, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ভুলে যান।" পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, 'পাকিস্তানের প্রতি দরদ থাকলে সেখানে চলে যান। বাংলার মাটি কলুষিত করবেন না।' প্রতিক্রিয়াঃ বিদেশী পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে হাসিনার এই বক্তব্য কতটা সত্য তা প্রমান না করেই বলে দিলেন ধুম করে! তার মানে কি তদন্ত না করেও শুধু অভিযোগ আসলেই কাউকে দায়ি করা যায়? পাবলিকের কথা নাহয় বাদই দিলাম, তাই বলে জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে? ধুর আসলে উনি তো এমনই, এ আর নতুন কি! কদিন আগে লন্ডনের ইকোনোমিস্ট বলেছে নির্বাচনের আগে হাসিনা ভারতের কাছ থেকে বস্তা ভরে টাকা নিয়েছিলেন।

৩, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন শুরু হয়েছে, তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী ঢাকা অচলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাদের রক্ষার জন্য আন্দোলনের নামে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ খুন করার কাজে তিনি লিপ্ত। তবে তিনি রাজাকারদের বাঁচাতে পারবেন না। জাতির পিতার হত্যাকারীদেরও তিনি রক্ষা করতে পারেননি। প্রতিক্রিয়াঃ ঢাকা অচলের ঘোষনার সময় আওয়ামী লীগ এখনকার কত পাল্টা কর্মসূচি দেয়নি কেন? এখন খালেদা দেশ ঘুরে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন দেখে উনার টেনশন বেড়ে গেছে? ডিসেম্বরের ১৮ তারিখের তান্ডবের বিষয়ে জামাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও সরকারি দল শুধু বিএনপিকেই দূষছে। অথচ গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে খবর নিয়ে প্রমান করে দিলেই হয় কারা কারা সেই ঘটনার পেছনে ছিল। রাজনীতি করতে গেলে অনেক কিছুই করা লাগে, বিশেষ করে মিত্র দলের অনেক আবদার-অনুযোগ শুনতে হয়। কিন্তু তাই বলে খালেদা তো আর সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দাবি করে কোন কর্মসূচি দেননি। রাজাকারদের ও বংবন্ধুর খুনিদের আওয়ামী লীগের লোকজন থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, এরশাদও বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছে অতীতে। আর এখন চেষ্টা হচ্ছে খালেদার আশেপাশের লোকদের বুদ্ধিতে। হাসিনা নিজেও তো ১৯৯৭-এর পর বিচারের কাজটা শুরু করতে পারেননি। আর এতদিন পরে যাও বা শুরু করলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অদক্ষতার কারনে সেই বিচার এখন প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

৪, "থলের বিড়াল বেরিয়ে গেছে। একসময় বিএনপির নেত্রী কথায় কথায় বলতেন, আমরা নাকি দেশ বিক্রি করি। এত দিন তিনি বিদেশি দালাল খুঁজে বেরিয়েছেন। এখন পরাজিত শক্তির কাছ থেকে পাঁচ কোটি রুপি নিয়েছেন। তিনি পরাজিত শক্তির দালালি করেন। জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি করে বোমা হামলা করেন।" প্রতিক্রিয়াঃ বিপদে পড়লে রাজনীতিবিদেরা সবাই ধরনা দেন বিদেশীদের কাছে। পাকিস্তানের টাকার বিষয়টা প্রমান করে তারপর বললে মনে হয় ভালো হত। যাই হোক, যুদ্ধ আর ভালোবাসায় নাকি কোন কিছুই অপরাধ না (আমি এটা মানি না)। এবার ক্ষমতায় আসার পর হাসিনা ইতিমধ্যে আমেরিকাপন্থী অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন তবে সেগুলো কি তার নির্বাচনপূর্ব ওয়াদা ছিল নাকি উপদেষ্টা-কাম-পুত্রের কারনে করতে হয়েছে সেটা বিবেচ্য বিষয়। কোন জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দল জঙ্গীদের সৃষ্টি জঙ্গীদের সৃষ্টি করতেই পারেনা। বরং জঙ্গী সংগঠনগুলো বড় দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাহায্য নিয়ে টিএক থাকে এবং প্রয়োজনমত অপারেশন করে। যেমন কেউ চাইলে মার্চের ১২ তারিখের জনসভায় হিজবুত-তাহরীর বা এরকম কাউকে দিয়ে একটা "নাশকতা" করাতে পারতেন টাকা ও অন্যান্য সুবিধার প্রতিশ্রুতিতে। অথবা যেসব বিজ্ঞ (!) গোয়েন্দারা এমন একটা ভয়ানক খবর দিলেন তাদের দিয়েও করাতে পারতেন।

৫, বিএনপির নেত্রী সাংবিধানিক পন্থা পছন্দ করেন না। তাঁর স্বামী ১৮টা ক্যু করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করেছেন। গণতন্ত্র হরণ করেছেন। তিনিও স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি হুদা, রশীদকে সংসদে আনেন। ওই খুনিদের তিনি বাঁচাতে চেয়েছিলেন। প্রতিক্রিয়াঃ শুরু হইলো গুষ্ঠি-উদ্ধার কর্মসূচি। যেহেতু জিয়া সামরিক স্বৈরাচার ছিলেন সুতরাং খালেদাও অমনি। (রাষ্ট্র পরিচালনা সহজ করতে বংবন্ধু বাকশাল বাহিনী করেছিলেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়, যখন একরকম "জরুরি অবস্থা" জারি ছিল রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও গনমাধ্যমের উপর)।

৬, 'আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি করি না। ২০০১ সালের পর নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে। জনসভা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রত্যেকের গায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি বলে তাদের সমাবেশে বাধা দেইনি। কেবল বোমাবাজি না করার শর্ত দেওয়া ছিল।' প্রতিক্রিয়াঃ ডাহা মিথ্যা কথা। এর আগে যে কথাগুলো তিনি বললেন যেকোন মনোবিজ্ঞানী শুনেই বলে দিতে পারবেন এই ভদ্রমহিলা মানসিক চাপে আছেন। তাই অন্যকে ছোট করতে অতীত ইতিহাস টেনে এনে নতুন প্রজন্মকে জানাচ্ছেন। উনি এ বিষয়ে একটা বই লিখে ফেললে ভালো হয়, তাহলে কেউ ইতিহাস বিকৃত করলে ধরা পড়ে যাবে। উনি আরো বললেন সমাবেশে নাকি বাধা দেয়া হয়নি, তার মানে কি এই যে সমাবেশস্থলে পুলিশ লাঠিপেটা-টিয়ারগ্যাস ইত্যাদি ব্যবহার করেনি! কিন্তু তার এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রশাসনিক কর্মকর্তা-পুলিশ-দলীয় লোকেরা যে সারা দেশের গ্রাম পর্যায়ে সকল বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বাধা দিয়েছে সেগুলো কি? পত্রিকা-টিভি সবাই বলেছে, দেখিয়েছে সেসব। উনার বিটিভি অবশ্য এসব বদনামের ধারের কাছ দিয়েও যায়নি।

৭, 'বিএনপি-জামায়াত আইন বিভাগ, বিচার বিভাগসহ সবকিছু ধ্বংস করেছিল। প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। প্রাইভেট টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছিল। ১৬ জন সাংবাদিক হত্যা করা হয়। প্রতিক্রিয়াঃ যতদূর মনে পড়ে এখনকার চেয়ে বেশি দলীয়করন হয়নি বিএনপি আমলে। অতি গুরুত্বপূর্ণ দলীয় বা রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সরকার এখন পর্যন্ত আদালতকে ব্যবহার করে চলেছে। প্রশাসনের দলীয়করনে আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোন সরকারকে ছাড়িয়ে যাবে এবার। তার একজন উপদেষ্টা ২০০৯ সালের শুরুর দিকে বলেছিলেন, "নিজেদের লোক না নিলে আমরা সরকার চালাবো কিভাবে?" তাই তো! টিভি স্টেশনে গোয়েন্দা তৎপরতা ও বন্ধের ঘটনা তো ১২ তারিখেই আমরা দেখলাম। আর সাংবাদিক হত্যা? চলছে, চলবে, যতদিন না সাংবাদিকরা সবাই একযোগে সরকারি দলের সমর্থক হয়ে উঠতে পারবে।

৮, বিরোধীদলীয় নেতার একটাই লক্ষ্য ছিল, অর্থসম্পদ বানানো আর তা পাচার করা। তাঁদের অর্থ পাচারের মামলা যুক্তরাষ্ট্রে প্রমাণিত হয়েছে। সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কর্মকর্তা দেশে এসে মানি লন্ডারিং মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। তিনি কী জবাব দেবেন?' প্রতিক্রিয়াঃ সরকার চাইলে মরে যাওয়া মামলাকেও আবার আদালতে এনে দাঁড় করাতে পারে। তারই একটা নমুনা দেখালেন হাসিনা। যাই হোক, উনি যে ১৩টি মামলাতে খালাস পেয়েছেন সেগুলো যে গায়েব করে দেয়া হয়েছে এমন তো নয়! এগুলো তো গেল আগের মামলা, এইবার ক্ষমতায় এসে উনি, তার পরিবারের সদস্যরা ও দলের হোমড়া-চোমড়ারা যা করছেন সেগুলোর ময়নাতদন্ত আমরা দেখতে পাবো আগামী বার অন্য কেউ আসলে। তত্ববধায়ক ব্যবস্থা না থাকাতে উনি একটু স্বস্তি পেয়েছেন এই ভেবে যে, অন্তত নির্বাচনের আগে কেউ বিরক্ত করতে পারবেনা।

৯, বিএনপির নেত্রী ক্ষমতায় থাকাকালে বিদ্যুৎ দেননি। কেবল খাম্বা দিয়েছেন। প্রতিক্রিয়াঃ এই মিথ্যাচারটা উনি করে আসছে সেই ২০০৯ সাল থেকে, যখনই বিদ্যুত ঘাটতি-লোডশেডি হয়, উনি বলে বসেন বিএনপি কিছু করেনি তাই এই অবস্থা। আসলে সেই আমলে ১৩৪৫মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ হয় জাতীয় গ্রীডে। আমার কাছে প্রমান আছে। খাম্বা নিয়ে অর্থ আত্মস্যাত করেছে বটে বিএনপি, কিন্তু আপনারা এসে তড়িঘড়ি করে বিদ্যুত উৎপাদন করতে গিয়ে অর্থনীতি আর পাবলিকের পকেটের যে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন তার কি হবে?

১০, চোরাই টাকা পাচার করেছেন। তাঁর লজ্জা থাকা উচিত। প্রতিক্রিয়াঃ বাংলাদেশ বিমানে করে সৌদি আরবে টাকার স্যুটকেস পাঠানোর গল্পটা আমিও শুনেছি। তবে "দিন বদলের রাজনীতি"র শেখ হাসিনা যদি একটু সাবধানী-স্মার্ট হয়ে কথগুলো বলতেন (মানে প্রমানসহ) তাহলে উনাকে আমি সালাম দিতাম। নইলে বলতে হয়—বিরোধীতার খাতিরে এমন অনেক কিছুই বলতে হয় রাজনীতিতে।

বাদ্যি-ঢোল

১, প্রধানমন্ত্রী গত তিন বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে অনেক প্রাইভেট টিভি চ্যানেল ও রেডিওর অনুমতি দিয়েছে। পত্রপত্রিকাসহ গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করলেও বাধা দেওয়া হয়নি। প্রতিক্রিয়াঃ গতবছরের রমজানে প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে এক ইফতারে উনি আফসোস করেছিলেন ১০টি টিভি চ্যানেলকে অনুমোদন দেয়ায়। কেননা সেগুলো খুললেই নাকি দেখা যায় খালি সরকারের সমালোচনা হয়। তবে তিনি কি একটি সাবধানবানী পৌঁছাতে চাইলেন কারো কাছে, কেননা উনার মানবিকতা-মনন-মেধা-সৃজনশীলতা দেখে আমার মনে হয়নি উনি ভিন্ন মতের বিষয়ে "সহিষ্ণু"?

২, গত তিন বছরে ৬৮ লাখ ৫১৬ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাড়ে চার লাখ মানুষের সরকারি চাকরি হয়েছে। ১০ শতাংশ দারিদ্র্য কমেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল হয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিক্রিয়াঃ প্রতিটি সরকার তাদের যদি কোন নির্বাচনী ইস্তেহার নাও থাকে তবুও ৫ বছরে অনেক কিছু করতে পারে। কারন সরকার পরিচালনার জন্য কার্যবিধি ও প্রয়োজনে সংবিধান ব্যবহার করে বুদ্ধি নেয়া যায় কি কি করতে হবে। আমার কথা হলো আপনার সরকার এমন কাজ কয়টা করেছে যা শুধুমাত্র আপনার সৃষ্টিশীল চিন্তার বহিঃপ্রকাশ, যা কেউ কখনো ভাবেনি আগে, এবং কেউ কখনো করার সাহস পায়নি। বড় কাজ যতগুলো করছে বা হাতে নিয়েছে এই সরকার, তার বেশিরভাগই মুখ থুবড়ে পড়েছে। এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তো চলবে কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ, গনফোরাম, ওয়ার্কার্স পার্টির মত দল, কেন আওয়ামী লীগ? সেই ১৯৪৯ সালে শুরু করে এখনেসে আপনারাও যদি হোঁচট খান তবে আমরা পাবলিক কাকে দেখে আশান্বিত হব???

৩, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয় বলে বিরোধীদলীয় নেত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপর রিজার্ভ আছে। তবে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না-ও থাকতে পারে।' প্রতিক্রিয়াঃ বোলারের ব্যক্তিগত দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে শেষ বলে একটা স্কয়ারকাট করার চেষ্টা, কিন্তু ব্যাটে-বলে হলোনা, কারন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যে সত্যিই নড়বড়ে তা আমরা আপনার বিশেষজ্ঞদের (মাল মুহিত-আতিউর) কাছেই শুনেছি। বেসরকারি (ভিন্নমতের-পথের ও অরাজনৈতিক) বিশেষজ্ঞদের কথা আর নাই বা বললাম। আর বিরোধী দলে থাকলে পকেট হালকা থাকতেই পারে! ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত উনার অবস্থাও তাই ছিল।

রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝা বড় ভার গো!