উইকিলিকসের বিরুদ্ধে আমেরিকার ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

প্রবীর বিধান
Published : 30 May 2012, 03:59 AM
Updated : 30 May 2012, 03:59 AM

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও মানুষের জানার অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে চলা উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা-প্রকাশক অষ্ট্রেলীয় বংশোদ্ভুত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে "গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে" এনে বিচার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

যদিও এখন পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত কোন তারবার্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি পাঠায়নি, তলে তলে তারা ঠিকই কাজ করছে।

উইকিলিকসকে পঙ্গু করে দেবার কূটবুদ্ধি বাস্তবায়নে মার্কিন গ্রান্ড জুরিরা একটি গোপন আদেশ প্রস্তুত করছে যার ফলে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা হবে। যুক্তরাজ্যের আদালতে অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে রায় গেলে তাকে সুইডেনে পাঠানো হবে এবং আমেরিকার আদালতের সেই গোপন আদেশের কারনে তাকে সুইডেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সহজ হবে।

উইকিলিকসে কর্মরত ও তাদের সহযোগী-সমর্থকদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে এরই মধ্যে মার্কিন আদালত থেকে গোপন আদেশ গেছে অনলাইন সেবাপ্রদানকারীদের কাছে। তাছাড়া প্রশাসনের চাপে আমাজন থেকে উইকিলিকসের সকল তথ্য মুছে দিয়ে দেয়া হয়েছে।

উইকিলিকসকে কাবু করতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা পেন্টাগন, সিআইএ ও এফবিআই এবং হিলারী ক্লিনটনের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। সাড়াজাগানো এই সংগঠনের সহযোগীদের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের কম্পিউটার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি জব্দ করা হচ্ছে; কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে গুপ্তচর বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টাও চলছে।

তাছাড়া ভিসা ও মাস্টারকার্ড অবৈধভাবে উইকিলিকসে অনুদান সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে এদবার ফলে সংগঠনটির প্রকাশনা প্রায় বন্ধ হবার মুখে। এছাড়াও পে-প্যাল, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও ব্যাংক অব আমেরিকাও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে সংস্থাটির সাথে।

গতকাল ২৯শে মে সহযোগীদের কাছে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব অভিযোগ বিস্তারিত লিখে জানায় উইকিলিকস। এই লেখকও তেমন একটি মেইল পেয়েছেন, যার অনুলিপি পাওয়া যাবে এখানে।

আজ বুধবার নির্ধারিত হবে যুক্তরাজ্য থেকে তাঁকে সুইডেনের কাছে হস্তান্তর করা হবে কি না, রায় দেবেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগে সুইডেন সরকার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। অ্যাসাঞ্জ তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রথম থেকে অস্বীকার করে আসছেন। তাঁর ভাষ্য, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সম্ভবত ২০১০ সাল থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের লাখ লাখ গোপন নথি প্রকাশ করে বিশ্বে হইচই ফেলে দেয় উইকিলিকস। এতে করে ফাঁস হয় বিভিন্ন দেশের রাজনীতি-সমরনীতিতে আমেরিকা সরকারের অনেক গোপন যোগাযোগ।

এরপর সুইডিশ কর্তৃপক্ষ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলে অ্যাসাঞ্জ সুইডেন থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। কিন্তু সুইডিশ সরকারের অনুরোধে ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ফলে যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তার হন অ্যাসাঞ্জ। গত ৫৪০ দিন যাবত তিনি গৃহবন্দী হয়ে আছেন।

উইকিলিকসের প্রকাশ করা তারবার্তাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কিত কয়েক হাজার ছিল, যেখান থেকে জানা গেছে বাংলাদেশের রাজনীতির নানা হালচাল নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের কার্যক্রম ও মতামত, এবং বহির্বিশ্বের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সাথে সম্পর্ক। প্রায় সবগুলো পত্রিকা লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার সূত্র ধরে ও সর্বশেষ গতবছরের আগস্টে বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রায় ২০০০ তারবার্তা প্রকাশ করে উইকিলিকস সাইটটি।

আজকে আদালত সুইডেনের অনুরোধ উপেক্ষা করলেও অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্য ছাড়তে হবে। তবে সুইডেন ও যুক্তরাজ্য সরকার উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে চেষ্টা করছে অ্যাসাঞ্জকে যেন আমেরিকার অনুরোধ অনুযায়ি সেদেশে পাঠানো যায়। কিন্তু গৃহবন্দী থাকায় যেকোন ঝুঁকি এড়াতে তিনি কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।

এরই মধ্যে মার্কিন সরকারের চাপে অষ্ট্রেলিয়া তার দেশের আইন সংশোধনে করেছে যেন অ্যাসাঞ্জকে নিজদেশে আনা যায়, তবে অবশ্যই তাকে শায়েস্তা করতে। তাছাড়া গিলার্ডের সরকার আইন সংশোধন করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ক্ষমতা বাড়িয়েছে যেন উইকিলিকস সমর্থকদের উপর নজরদারি করা যায়।

উল্লেখ্য, গতবছর সিডনী পিস ফাউন্ডেশন ব্যতিক্রমধর্মী ও সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে মানবাধিকার নিশ্চিতকল্পে কাজ করার জন্য সম্মানজনক সোনারপদক দেয় অ্যাসাঞ্জকে। এই অলাভজনক সংগঠনটি সিডনী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি অব সিডোনীর সহায়তায় পরিচালিত। এর আগে এই পুরষ্কার পেয়েছেন নেলসন মেন্ডেলা ও দালাই লামা।

পদক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অ্যাসাঞ্জকে ভূয়সী প্রশংসিত করা হয় মানুষের জানার অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে শত বছর ধরে চলে আসা সরকারি গোপনীয়তার সংস্কৃতিকে ভাঙ্গার জন্য।

আমেরিকার কোন কোন রাজনীতিবিদদের দাবি উইকিলিকসকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষনা দেয়া হোক, এমনকি কেউ কেউ আবার বিচার ছাড়াই অ্যাসাঞ্জের ফাঁসি চেয়েছে!

বাংলাদেশ সংক্রান্ত তারবার্তা ও প্রতিক্রিয়া পড়ুনঃ