সমুদ্রে বিলাস

প্রদীপ রায়
Published : 21 August 2019, 01:07 PM
Updated : 21 August 2019, 01:07 PM

আমি বেড়াতে খুব একটা পছন্দ করতাম না। এর পেছনে কারণ অনেক। অর্থনৈতিক কারণ যেমন আছে, তেমনি আছে কার সাথে যাচ্ছি সেটাও নির্ধারণ করা। রবি ঠাকুরের 'একলা চলো রে' নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি অবশ্যই একলা সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে পারি না। আমার ভ্রমণে অনাগ্রহের আরও অনেক কারণ বলতে পারি, তবে সবচেয়ে বড় কারণটি মনে হয় ভ্রমণের চেয়ে ভ্রমণ কাহিনী বেশি ভালো লাগা।

শাহরিয়ার কবিরে সাওয়ার হয়ে আমি 'বল্টিক থেকে বার্লিন' দেখেছি, রবি ঠাকুরের কৃপায় 'জাপান যাত্রী' হয়েছি। কিন্তু অনেক পরে, এই দিন পনেরো আগে সেইন্ট মার্টিন ঘুরে আসার পর মনে হচ্ছে অন্যের দেখায় নিজের কল্পনার চোখ না জুড়িয়ে, অন্যের উপলব্ধিতে পুলকিত না হয়ে সামর্থ্যানুযায়ী নিজ চোখে জগতটাকে দেখা উচিৎ।

সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেমনভাবে পালামৌ দেখেছেন, দেখে যা উপলব্ধি করেছেন, আমার চোখে আমি তা অন্যভাবে দেখতে পারি, উপলব্ধিটাও অন্যরকম হতে পারে।

আর না, আমার মত যারা আছে তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, মুজতবা সাহেবদের 'দেশে বিদেশে' টাইপ মনোমুগ্ধকর 'জায়গায়' তাদের দীপ্তোজ্জ্বল কথনশৈলীর যানে চড়ে না দেখে,উপলব্ধি না করে, মুগ্ধ না হয়ে আমাদের সবার বাস্তবে, স্বশরীরে, দেশে-বিদেশে ঘুরে উপলব্ধিবোধ জাগ্রত করে মুগ্ধতার খোঁজ করা উচিৎ।

সেইন্ট মার্টিনে আমি মাত্র দু'দিন থেকেছি। এই দু'দিনে সেখানকার মানুষদের সাথে মেশার পর, কথা বলার পর আমার উপলব্ধি থেকে বলতে ইচ্ছে করছে আমাদের এই মূল ভূখণ্ডের বাঙালিদের সেইন্ট মার্টিন নামের ৮ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট দ্বীপের বাঙালিদের কাছে গিয়ে শিখে আসা উচিৎ মানুষের সাথে কীভাবে ভালো আচরণ করতে হয়। দেখে আসা উচিৎ মানুষের সাথে ভালো আচরণ করাটা কতোটা গর্বের আর সুখের হতে পারে।

ভূবনকে তো আগে থেকেই জানি। শরীফ, রিয়াদ, রানা –অসাধারণ রসবোধ সম্পন্ন খুব ভালো এই ছেলেদের সাথে সেইন্ট মার্টিন ভ্রমণটা যেমনটা আশা করেছিলাম সেটা তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দময় হয়েছে। রাতে সবাই মিলে চাঁদের সাথে ছবি তোলা, সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ, এই সময়টার কথা আমার সুখস্মৃতিতে অনেকদিন থাকবে।

মনে থাকবে উখিয়ার রাস্তাধরে বাসের জানালা দিয়ে দেখা মিয়ানমার থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা মানুষদের পাহাড়ের ঢালে বানানো ঘরগুলোর কথা। টেকনাফে রোহিঙ্গা শিশুদের শূন্য চোখে ভিক্ষা করার দৃশ্য। এরা অনেকেই নিজ চোখে তাদের বাবা-মাকে নৃশংসভাবে মেরে ফেলতে দেখেছে।

ছেঁড়া দ্বীপে গিয়ে মনে হয়েছে সুন্দর জায়গাগুলো আসলে কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখে, রোহিঙ্গা শিশুদের সাথে মিশে মনে হয়েছে জীবনটা অনেক অনেক সুন্দর; না পাওয়াগুলো, হতাশাগুলো, দুঃখগুলো সব অযৌক্তিক; জীবন নিয়ে ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ করাটা ঈশ্বরের সাথে প্রচণ্ড অন্যায়।