কৃষক নাকি কোম্পানি: কৃষিবাণিজ্য কার জন্য?

প্রদীপ কুমার রায়
Published : 12 Oct 2011, 04:42 AM
Updated : 12 Oct 2011, 04:42 AM

কৃষিকে টেকসই করতে গেলে অবশ্যই কৃষিকে লাভজনক খাত হিসাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর সেটা করতে গেলেই কৃষিবাণিজ্যের প্রসংগ চলে আসে আলোচনায়। পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় কৃষিনীতির চূড়ান্ত খসড়া, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ অন্যান্য জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালাগুলোতে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের বিষয়টি জোড়ালোভাবে উঠে এসেছে সংগতকারণেই। কিন্তু দেশের কৃষকবৃন্দকে প্রস্তুত করা ছাড়াই বাণিজ্যিক কৃষি চালুর উদ্যোগ দেশের উন্নয়নে কতটা সংগত ভূমিকা রাখবে, মনেহয় সেটা একবার ভেবে দেখা প্রয়োজন।

যারা বাণিজ্যিক কৃষির পক্ষে জোড়ালো ভূমিকা রাখছেন, তারাও দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ও ছোট ও মাঝারী কৃষিখামারের ভূমিকাকে অস্বীকার করতে পারছেন না। জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে দারিদ্রতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস করতে হবে।

সেক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারী কৃষকবৃন্দ যাতে আর দরিদ্র না থাকে, সেদিকে মনোনিবেশ করতে হবে। এজন্য সরকারকে অবশ্যই প্রস্তুতিগ্রহণ করতে হবে। এই প্রস্তুতি ছাড়া যদি বাণিজ্যিক কৃষিকে জাতীয়ভাবে প্রণোদনা প্রদান করা হয়, তবে সেটা কৃষকের বিপক্ষে যাবে এবং তারা ক্রমাগত দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্রের তালিকাভুক্ত হতে বাধ্য হবে। সরকারকে বৃদ্ধি করতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, জাতীয় উন্নয়ন হবে ব্যাহত।

অন্যদিকে বাণিজ্যিক কৃষির সুফল ভোগ করবে কৃষিবাণিজ্যের সাথে জড়িত কোম্পানী। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করতে, যার ফলে শুরু হবে নৈরাজ্য, সহিংসতা। বিনষ্ট হতে শান্তি-শৃংখলা। শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় রাষ্ট্রীয় বাজেটের ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে, ব্যয় হ্রাস পাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ জনসেবাখাতগুলো হতে। ফলাফলে অপুষ্ঠি, নিরক্ষরতা, অমানবিকতা বৃদ্ধি পাবে সমান তালে।

পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করলে দেশের কৃষিকে টেকসই ও যুগোপযোগী হিসাবে গড়ে তুলতে হলে দেশের শিক্ষিত যুবসমাজকে কৃষি ও কৃষিবাণিজ্যের সাথে যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কৃষিতে শিক্ষিত যুবসমাজের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করার কার্যকর গ্রহন করা প্রয়োজন। সেজন্য সরকারকে যথোপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সেইসাথে বাণিজ্যিক কৃষি যাতে কৃষকের দারিদ্রতা হ্রাস করে ও যুবসমাজের কর্মসংস্থানের খাত হিসাবে গড়ে ওঠে; সেইজন্য বাণিজ্যিক কৃষি প্রচলের পূর্বে প্রতিযোগিতার নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

ইতিমধ্যে স্কয়ার, বিডি ফুডস, রহিম আফরোজ, মিনাবাজার, আড়ংসহ অনেকগুলো কোম্পানী কৃষিবাণিজ্যের সাথে জড়িত হয়েছে। ক্রমাগত এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষিবাণিজ্যের সাথে জড়িত কোম্পানীরা তাদের প্রয়োজনমতো কৃষিপণ্য উৎপাদন করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকের সাথে চুক্তি করছেন, শুরু হয়েছে কনট্রাক্ট ফার্মিং সিস্টেম। এর ফলে কারা লাভবান হচ্ছে, তা বিবেচনায় এনে প্রতিযোগিতার নীতি ঘোষণা করা প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত ঘটনাগুলোকে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, কৃষিবাণিজ্য শুধুমাত্র কৃষককে ক্ষতিগ্রস্থ করছে না, ক্ষতিগ্রস্থ করছে সর্বশ্রেনীর ভোক্তাদের। বাণিজ্যের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ রাষ্ট্রীয় নীতি, আইন-কাঠামোকে বৃদ্ধাংলি দেখানোর মতোও উদাহরণ তৈরী করেছে ইতিমধ্যে; যা সর্বশ্রেনীর ভোক্তা ও রাষ্ট্র পরিচালকদের জন্য আগামীতে হুমকি হিসাবে দেখা দেবে নিশ্চিতভাবেই।
এ অবস্থা হতে মুক্ত হতে হলে জাতীয় স্বার্থেই প্রতিযোগিতার নীতি ঘোষণা করা প্রয়োজন।