উচ্চতর হিসাব বিজ্ঞান নাটক টি ভাল লেগেছে, বিশেষ করে আজাদ আবুল কালাম এর অসাধারণ অভিনয়। নিশোও ভালো করেছেন, তবে এই চরিত্রটি ভালো করার মতো আরো অনেকেই নাট্য জগতে আছে। কিন্তু আজাদ আবুল কালাম এর অভিনয় দেখে মনে হয়, এই চরিত্রটি তার চেয়ে ভালো আর কেউ করতে পারতো না।
দুই কলিগ, একজন ঘুষ খায় আর একজন ঘুষ খায় না। মানুষের ভেতরকার নীতিবোধ প্রয়োজনের সময় অত্যন্ত নির্মমভাবে বদলে যায়। "মাঝে মাঝে প্রয়োজন টাই এতো সত্য হয়ে যায় যে, সত্যতার প্রয়োজনীয় তা হারায়।"
নাটকের গল্পে উঠে এসেছে মধ্যবিত্তের একটা সেন্টিমেন্ট, যেটা আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বা নিজেও এখনো মধ্যবিত্ত তাদের মনের মাঝে খামচে ধরে। আমাদের আদর্শ আমাদের বিবেক বোধ এমনই যে আমরা চাইলেও কোন বাটপারি করতে পারি না। এই জন্যই ঘুষ খোরের সন্তানদের লাইফস্টাইল দেখি আর আফসোস করি।
যদিও বিরক্ত হয়ে, রাগে দুঃখে একটু বাটপারি করতেও চাই, আমাদের আদর্শ আমাদের পিতা-মাতার চেহারা আমাদের চোখের সামনে চলে আসে।
নাটকটিতে শেষে উপরওয়ালা আর কেয়ামতের একটা দোহাই দেয়া হয়েছে। কি আর বলব? বললেই তো একদল লোক আমার ফাঁসি চাইবে, কোপ দিতে চাইবে।
যাদের বিবেকবোধ আছে, আসলে কি তাদের কোন দোহাইয়ের প্রয়োজন আছে অন্যায় করা থেকে বিরত থাকতে?
নাটকে আজাদ আবুল কালাম এর মুখে একটি ডায়লগ ছিল, "একটা হিসাব কিন্তু, আমি আরিফ ভাই মেলাতে পারছি না। ওর মতো (পিয়ন, রহমতের মতো) সৎ, ধার্মিক ছেলের মায়ের চিকিৎসা আমার মতো ঘুষখোরের টাকায় কেন করতে হবে?"
এই প্রশ্নটা আসলে একক কোন প্রশ্ন না, এই প্রশ্ন অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার এই সমাজ ব্যাবস্থার কাছে। এই প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্র ব্যাবস্থার কাছে, যেখানে দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসার জন্য একজন মানুষ কে জনে জনে হাত পাততে হয়। যেখানে একজন ধার্মিক সৎ, দরিদ্র মানুষ কে মাথা নত করতে হয় অসৎ অর্থের মালিকের কাছে।
নাটকের একটি গানের দৃশ্যায়ন খুব ভালো লেগেছে, "আজ সহজ কথাটা হোক সহজে বলা"।
আর ভালো লাগেনি নাদিয়ার ডায়লগ ডেলিভারি, কন্ঠস্বর, উচ্চারণ। বিশেষ করে অফিস থেকে বাদাম কিনে ফেরার পথে দুজনের টেলিপ্যাথিক মূলক কথোপকথনে। নিশোর আবৃত্তি ভালো লেগেছে, নাদিয়ার কণ্ঠ আর বলার স্টাইল আরো ভালো হতে পারতো।
রচনা – আইভানহো মুকিত
পরিচালনা- ময়ূখ বারী
সবাই কে ধন্যবাদ।