মুক্তিযু্দ্ধের চেতনা মুছে যাচ্ছে

কাজী মাহমুদুর রহমান
Published : 22 March 2015, 09:48 AM
Updated : 22 March 2015, 09:48 AM

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাধারণ জনগনের মধ্যে ছড়ানোর ব্যপারে সরকার উদাসীন। বর্তমান সরকারের ধারনা তারা চিরদিনের তরে ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। যেমনটা ভেবেছিল ৭২ সালের পরের সরকার। দেখা যাচ্ছে বিটিভি সহ সবগুলো চ্যানেলের অধিকাংশ অনুষ্ঠান অমুক্তিযুদ্ধ চেতনায় পুষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের কারণে দেশটা আজ স্বাধীন, মুক্তিযুদ্ধের কারণে শূন্য রির্জাভ থেকে হাজার কোটি টাকা রির্জাভ, মুক্তিযুদ্ধের কারণে  বাংলার ছেলে-মেয়েরা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে স্থান করে দিচ্ছে। সেই মুক্তিযুদ্ধকে সরকার, রাষ্ট্র সহ সকলে ভুলতে বসেছি। স্বাধীনতার ৪৪ বছরের ২৫ বছরই ছিল অমুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রচরণা। বাংলার সেই তিক্ত সময়কে ব্লাক-পেরিওড হিসেবে সরকারের ঘোষনা দেয়া উচিৎ। পাশাপাশি প্রত্যেক গনমাধ্যমের সকল প্রচারনার ৭০% মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রচারণা চালানো উচিৎ। এ ব্যপারে একটা আইন সংসদে পাশ করা অতিব জরুরী। তাহলে হয়তো ব্লাক-পেরিওড-এর আঘাত বাংলাদেশের জন্য সহনীয় হবে। উক্ত ব্লাক-পেরিওড-এর কারণে দেশের যুব সমাজের বিশাল একটা অংশ মুক্তিযু্দ্ধ চেতনা থেকে বিমুখ। তারা জানেই না কত-শত প্রাণ ঝরেছিল মুক্তিযুদ্ধের জন্য। দেশটাতো হঠাৎ করে স্বাধীন হয় নাই। হাজার বছরের ত্যাগ-এর ফসল হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ, যার পরিনাম হলো বাংলাদেশ।

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রায় মুছে যাচ্ছে। হাজার বছরের এই চেতনা ও ইতিহাস মুছে গেলে মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা হবে। তাই আমাদের সকল প্রকার প্রচেষ্টার মাধ্যমে মুক্তি যুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস বাঁচিযে রাখতে হবে। এই প্রেক্ষিতে সরকার আইন করে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারেন :

–    বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে মুক্তিযু্দ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ও চলচিত্র প্রদর্শণের ব্যবস্থা করা ।

–    প্রত্যেক গনমাধ্যমের সকল প্রচারনার ৭০% মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক হতে হবে।

–    মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ঘটনা লিখে রাখার জন্য সরকারী আদেশ জারি করা।

–    মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা। এ ব্যপারে প্রত্যেক ইউনিয়নে অপেন ডাইরি/রেজিস্টার খোলা ও মুক্তি যুদ্ধের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা ।

–    প্রতিমাসে উক্ত রেজিস্টার থেকে ঘটনা নিয়ে থানা পর্যায়ে নূন্যতম ২০০ পৃষ্ঠা সম্বলিত অফসেট পেপারে বই ছাপানো। উক্ত বই সকলের মাঝে বিতরণ করা ।

–    প্রতিটা ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক যাদুঘর করা ও তা জাতীয় পর্যায়ে প্রচারনা চালানো।

–    প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা বিভাগের মোট গবেষণার ৫০% মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বাধ্যতামূলক করা ও এর জন্য সরকারী অনুদান প্রদান করা ।

–    প্রতিটা ব্যাংকের সিএসআর (কর্পোরেট সোসাল রেসপনসিবিলিটি)-র মোট ফান্ডের ৬০% মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক খরচ হতে হবে।

এক সময় আসবে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঘটনা আমাদের সকলের কাছে মহামূল্যবান হয়ে উঠবে। গবেষণার জন্য গবেষকরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ঘটনা খুঁজবে । অথচ তারা পাবে না। তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের না জানা কাহীনি লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেশ গড়ার জন্য বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।