সাবধান – ভেজাল ঔষধে সয়লাব দেশটা

কাজী মাহমুদুর রহমান
Published : 17 Dec 2015, 08:21 PM
Updated : 17 Dec 2015, 08:21 PM

গত কয়েকদিন (০১.১২.২০১৫) আগে জরুরী প্রয়োজনে হঠাৎ আম্মাকে সহ চট্রগ্রাম যেতে হয়। আত্বীয়ের বাসা নাসিরাবাদে উঠতে হয়। তারাহুরে করে আম্মা প্রেসারের ঔষধ নিতে ভুলে যান। প্রতিদিন ওনার এনজিলক ৫০ (+) ১টি খেতে হয়। চট্টগ্রামে পৌঁছেই বিখ্যাত ও নামিদামি এক ঔষদের দোকান থেকে আম্মার জন্য প্রেসারের ঔষধ কেনা হয়। যথারীতি খাওয়ানো হয়। আমরা হাফছেড়ে বাচঁলাম মনে হলেও ঘটনাটা অন্যদিকে মোড় নিল। ঔষধ খাওয়ার প্রথমদিন থেকেই আম্মা প্রেসার জনিত বিষয়ে সন্তষ্ট হতে পারছিলেন না। যথারিতি দ্বিতীয় দিনে প্রেসারের সমস্যা সমাধান না হওয়াতে ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার বললেন ওনার প্রেসার ১৭০/৯০। ডাক্তারের পরামর্শে কয়েকঘন্টা পর আরো একটা অতিরিক্ত এনজিলক ৫০ (+)খাওয়ানো হলো। তাতেও কোন প্রকার কাজ হচ্ছে না। বিকালে আরো একটা খাওয়ানো হলো। কিন্তু কাজ হলো না। দিনে ৩টি ঔষধ খেয়েও যখন প্রেসার নরমাল হলো না তখন জরুরী ভিত্তিতে ঢাকা ফিরিয়ে আনা হলো। ঢাকা এসেই প্রথমে পূর্বে কেনা বাসার এনজিলক ৫০+ খাওয়ানো হলো। মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যে ওনার প্রেসার নরমাল হয়ে গেলো। খুবই অবাক হলাম। পরদিন বিষয়টি নিয়ে খতিয়ে দেখে যা পেলাম তা'হলো –

১) ঢাকার বাইরে যে সকল ঔষধ বিক্রি হয় তার অধিকাংশ নকল। কোন কোন ফার্মেসির ঔষধ বিক্রেতা মনে করেন সিলেট-চট্রগামের ৭০% ঔষধ নকল। কুমিল্লা অঞ্চলের এই নকলের হার ৯০%।

২) প্রতিটি স্ট্রাইপের ৫০% নকল ঢোকানো থাকে। তাতে ক্রেতার কাছ থেকে অসাধু উপায়ে ডাবল টাকা বেনেফিট গ্রহন করা হয়।

৩) ঔষধ কোম্পানিগুলো তাদের ঔষধের ভেজাল বা নিম্নমানের করচ্ছে কারণ ঔষধ বাজারজাত করার জন্য তারা প্রচুর পরিমান খরচ করে থাকে। যেমন ডাক্তারকে ছোট খাট গিফট, বাসার ফার্নিচার, কাপড়, গহনা, বাসার ইলেক্ট্রিক ইকুইপমেন্ট, কোন কোন ক্ষেত্রে ফ্লাট-গাড়ী কোম্পানিগুলো উপহার দিচ্ছে বলে শোনা যায়। এই সকল গিফ্টের প্রভাব ক্রেতার উপর বর্তায়।

৪) লোকমুখে শ্রুত যে, নামি দামি ঔষধ কোম্পানিগুলোর হাসপাতাল রয়েছে। এরা এই সকল ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ জনগনকে খাইয়ে ভবিষ্যতের রুগী কাস্টমার তৈরী করছে। এটা তাদের একধরনের ব্যবসায়িক স্ট্রাটাজিক কৌশল।

ঔষধ ও খাবার শিল্পের ভেজাল কোনদিন প্রতিরোধ হবে না যতদিন কঠোর আইন তৈরি না হবে। ভেজাল প্রতিরোধ আইনে ডেথ প্লান্টির ব্যবস্থা নাই। ডেথ প্লান্টি ছাড়া বাংলাদেশে এই আইনের কোন প্রভাব সমাজে পরবে না। অনেকটা ভেজাল ঔষধের মতো হয়ে যাচ্ছে। ঔষধ আছে প্রভাব নেই। আইন আছে সমাজে প্রতিক্রিয়া নেই। সেই সকল দেশের জন্য আইনে ডেথ প্লান্টি রহিত করা সম্ভব যে সকল দেশের জনগন ১০০ জনগন শিক্ষিত, সচেতন, দেশপ্রেমিক ও মানসিকভাবে সভ্য। যে দেশে এখনও এমন সংখ্যক জনগন রয়েছে যারা মনে করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়াটা ভুল হয়েছে, যে দেশে এক শ্রেনীর জনগন রয়েছে যারা বাপ-দাদার সম্পদ বিক্রি করে মালয়শীয়া, লন্ডন, কানাডাতে পাড়ি জমাচ্ছে বা জমানোর পরিকল্পনাতে মসগুল, সে দেশে কিভাবে আশা করা যায় খাদ্যে, ঔষধে বা বিল্ডিংয়ে ভেজাল প্রতিরোধ হবে ডেথ প্লান্টি ছাড়া। অন্তঃত আগামী ১০০ বছরের জন্য হলেও ভেজাল প্রতিরোধের জন্য মৃত্যুদণ্ড আইনে সংযোগ করা প্রয়োজন।