ওয়ান ওয়ে পদ্ধতিতে মিলবে যানজটের সমাধান

কাজী মাহমুদুর রহমান
Published : 2 April 2018, 03:41 AM
Updated : 2 April 2018, 03:41 AM

ঢাকা শহরের যানজট কমাতে হলে একমুখী (ওয়ান ওয়ে) চলন চালু করতে হবে। তাহলে সকল সড়কের ক্রসিং সিগন্যালের সংখ্যা কমে যাবে। ফলে নগরবাসীর সময় বাঁচবে অনেক। বর্তমানে একটা সিগন্যাল থেকে গাড়ি স্টার্ট দিলেই পরবর্তী সিগনালের জন্য গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করতে হয়। ক্রসিং সিগন্যালের জন্য অধিকাংশ গাড়িকে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ মহানগরীর রাজপথ ওয়ান ওয়ে সিস্টেমে পরিচালিত হয়। এতে সময় যেমন সাশ্রয় হয় তেমনি শহরবাসী নিশ্চিতভাবে নিজেদের সময় ব্যবস্থাপনা করতে পারে।

এখন তো যানজটের কারণে বলা যায় না উত্তরা থেকে মতিঝিল কিংবা মতিঝিল থেকে মিরপুর যেতে কতক্ষণ লাগবে? ঢাকা শহরের ব্যাপ্তি এখন আর সদরঘাট-মতিঝিল-ধানমন্ডি-মহাখালিতে নেই, ঢাকা শহর এখন সদরঘাট থেকে গাজীপুর, কাচপুর ব্রিজ থেকে সাভার পর্যন্ত বিস্তৃত। অতএব নগর পরিকল্পনায় এই ব্যাপ্তি বেশ প্রভাব ফেলে। ওয়ান ওয়ে সিস্টেম যে কোনো মুহূর্তে চালু করা সম্ভব। কারণ-

১. একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ঢাকা শহরের সড়কগুলোর বড় একটি অংশ থাকে অব্যবহৃত। অবৈধ দোকানপাট, রিকশা গ্যারেজ, কিংবা ঢাকনাহীন ম্যানহোল, ময়লার ডাস্টবিন ইত্যাদি কারণে রাস্তায় চলাচল বন্ধ থাকে বা বিঘ্নিত হয়।

২. ফুটপাতগুলোর অবৈধ দখলের কারণে পথচারীরা গাড়ির রাস্তা, অর্থাৎ মূল সড়ক ব্যবহার করে। ফলে চালকদের জন্য পথচারী নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নিশ্চিন্ত মনে গাড়ি চালনা করা খুব মুশকিল হয়।

৩. ওয়ান ওয়ে তৈরির জন্য ঢাকা শহরের যে পরিমাণ রাস্তা আছে (এর মধ্যে অনেক রাস্তা দখল হয়ে আছে) তা যথেষ্ট।

রাজধানীতে ওয়ান ওয়ে সড়ক চালুর জন্য উত্তর ও দক্ষিণে ছয়টি প্রধান সড়ক রয়েছে। এগুলো হলো- বেড়িবাঁধ, মিরপুর রোড, রোকেয়া সরণি হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক, টঙ্গী হয়ে নতুন এয়ারপোর্ট রোড হয়ে মগবাজার রাস্তা, বিশ্ব রোড থেকে প্রগতি সরণি এবং পূর্বাচলের মিরের বাজার হয়ে কাচপুর-যাত্রাবাড়ী।

ইচ্ছে করলে এই সড়কগুলো ব্যবহার করে তিনটি একমুখী সার্কুলার সড়ক তৈরি করা যেতে পারে। প্রথমটি (যাওয়ার ক্ষেত্রে) আশুলিয়া থেকে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে-গাবতলী-হাজারীবাগ-লালবাগ-বকশিবাজার-সদরঘাট পর্যন্ত। (আসার ক্ষেত্রে) সদরঘাট-বকশিবাজার-নিউমার্কেট-আসাদগেট-টেকনিক্যাল হয়ে মিরপুর-১ নম্বর-চিড়িয়াখানা দিয়ে আশুলিয়া সংযোগ সড়ক পর্যন্ত।

দ্বিতীয় সার্কুলার সড়কটি হবে (যাওয়ার ক্ষেত্রে) আশুলিয়া সড়ক-ন্যাশনাল স্টাফ কলেজ- মিরপুর- ১২, ১০ হয়ে কাজীপাড়া-ফার্মগেট-শাহবাগ-দোয়েল চত্বর-ফুলবাড়ীয়া পর্যন্ত। (আসার ক্ষেত্রে) ফুলবাড়ী-গুলিস্থান-পল্টন-হাইকোর্ট-কাকরাইল-মগবাজার-সাতরাস্তা-মহাখালী-বনানী-এয়ারপোর্ট-আবদুল্লাপুর-আশুলিয়া সড়ক।

তৃতীয় সার্কুলার সড়কটি হবে (যাওয়ার ক্ষেত্রে) আবদুল্লাপুর-বেড়িবাঁধ দিয়ে পূর্ব দিকে গিয়ে উত্তর খান মাস্টার বাড়ি-উত্তর খান মাজার-দক্ষিণ খান বাজার-হলান-বারিধারা-বিশ্বরোড-রামপুরা-মালিবাগ-বাসাবো-যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত। (আসার ক্ষেত্রে) যাত্রাবাড়ী-পূর্বাচল উপশহর-বিশ্বরোড-উলুখোলা-মইনারটেক-উত্তর খান-মাস্টার বাড়ি।

করণীয়:

ক. চিড়িয়াখানা থেকে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কটি উন্নত করতে হবে।

খ. আবদুল্লাপুর থেকে বেড়িবাঁধ দিয়ে পূর্ব দিকের উত্তর খান মাস্টার বাড়ি হয়ে উত্তর খান মাজার-দক্ষিণ খান বাজার- হলান-বউরা হয়ে বারিধারা ৩০০ ফুট রাস্তা পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্ত ও সংস্কার করতে হবে।

সুবিধা:

ক. ওয়ান ওয়ে সিস্টেমে সড়কগুলোতে ক্রসিং সিগন্যাল না থাকায় গাড়ির গতি থাকবে স্বাভাবিক, ৮০-১০০ কিলোমিটার।

খ. একটু ঘুরে যাতায়াত হলেও সময় সাশ্রয় হবে।

গ. রাষ্ট্র্রের কর্মচারীদের গাড়িতে বসে সময় অপচয় হবে না।