মানবআত্মা সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হয় “মানুষ মেরে”

আধারের বাসিন্দা
Published : 16 Oct 2011, 04:36 PM
Updated : 16 Oct 2011, 04:36 PM

"পৃথিবীর সকল মাংসাশী প্রাণীরা হিংস্র হয় ।" যে সকল প্রানী অন্য প্রাণীর মাংস বক্ষন করে তাদেরকে মাংসাশী প্রাণী বলা হয় । কয়েকটি মাংসাশী প্রাণীর উধাহারন হচ্ছে, মানুষ, বাঘ, সিংহ, নীলতিমি, হাঙ্গর, বাজপাখি, ঈগল ইত্যাদি । আর নিরামিষভোজী/সবজিভোজী প্রাণীগুলো শান্ত হয় । যেমন: গরু, হরিণ, রুই মাছ, দোয়েল, টিয়া ইত্যাদি ।

আমার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষ নিয়েঃ

প্রথমে ছোট্ট কয়েকটি উদাহরন দিয়ে শুরু করা যাক,

উধাহারনঃ ।১। আপনি রাস্তা দিয়ে হাটছেন এমতবস্থায় একজন লোক আপনার শার্টের কলার ধরলো এবং আপনাকে অশ্লীল বাক্যে গালাগালি করা শুরু করল । আপনি তার দৈহিক আকৃতির একটা মাপ নিলেন আপনি বুঝতে পারলেন তার সাথে আপনি শক্তিতে পারবেন । অথবা এই এলাকায় আপনার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে । তাই আপনি আক্রমন উদ্যেত ব্যাক্তিটির উপর চড়াও হলেন । এবং তাকে নাকে মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করলেন, যখন সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল আপনি স্বস্তি অনুভব করলেন এবং জয়ী হবার অনন্দে অনন্দিত হলেন ।

উধাহারনঃ ।২। সিনেমাতে নায়ক যখন গুন্ডাকে মারে তখন আমরা আনন্দ পাই । একটা মানুষ অন্য আরেকটা মানুষকে আঘাতে আঘাতে মেরে ফেলছে আমরা কিন্তু সেই কষ্টের দিকে নজর দেইনা । আমাদের খেয়াল কিন্তু আনন্দের দিকেই থাকে ।

উধাহারনঃ ।৩। জনপ্রিয় কম্পিউটার গেমসের বেশিরভাগ খেলাগুলোতেই মানুষ মারতে হয় । আর গেমসের মধ্যে আমরা মানুষ মারতেই বেশি পছন্দ করি । শেখানে যদি খুব সুন্দর আকৃতির পাখি দেয়া হত আমরা নিশ্চয়ই সেগুলো মেরে মজা পেতাম না ।

উধাহারনঃ ।৪। আপনি যুদ্ধের ময়দানে ছুরি দিয়ে যুদ্ধ করছেন, আপনার প্রতিপক্ষের মাথা যখন আপনি কেটে ফেলতে সমর্থ হবেন তখন আপনি নিশ্চয়ই তৃপ্ত হবেন এবং আনন্দবোধ করবেন । একটা বিশাল বোমা মেরে আপনি যদি প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে পারেন সেটা নিশ্চয় আপনি সারা জীবন মনে রাখবেন আর প্রতিবার মনে করে করে আপনি আনন্দ পাবেন ।

উধাহারনঃ ।৫। আপনার হাতে একটা বন্দুক আছে আর অনেক দূরে একটা পাখি বসে আছে আপনি যদি সেটা মারতে সমর্থ হন আপনি অবষ্যই আনন্দিত হবেন ।

উধাহারনঃ ।৬। আপনি যখন রাগ করবেন তখন কাচের জিনিস, মোবাইল আছার মেরে অথবা স্ত্রী-কে মেরে আপনি আনন্দিত হবেন ।

উধাহারনঃ ।৭। এডলফ হিটলার প্রায় ৬ মিলিয়ন ইহুদি(মানুষ) হত্যা করেছিল । চার্লস সূয়ীনি "ফ্যাট ম্যান" নামক বোমা নিক্ষপ করে আনুমানিক ৭৩০০০ (জাপানী)মানুষ মেরেছিল । চার্লস সূয়ীনিকে ২০০৪ সালের দিকে যখন তার অনুভূতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তখন সে বলেছিল ঐ ঘটনার কারনে এখনও তার ভাল ঘুম হয় ।

এখন আমরা যদি মানব সৃষ্টির শুরুর দিকে তাকাই, ইসলাম ধর্ম মতে, আদাম(আঃ) এর প্রথম দুই পুত্রের মধ্যে একবার ঝগরা হয়েছিল এবং একজন অপরজনকে মেরে ফেলেছিল । তাহলে মানবের দ্বারা মানবের মৃত্যু সৃষ্টির আদিকালে ছিল, মধ্যযুগে ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ।

আচ্ছা এবার আশি একটু ভিন্ন প্রসংগে, মানব মৃত্যুতে মানবআত্না কখন কষ্ট পায় ।

উধাহারনঃ ।১। (প্রথম)ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন এবং আপনি দেখছেন এই এলাকার চরম প্রভাবশালী একদল লোক আপনার ভাইকে আঘাত করছে । কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে আপনি যদি কিছু বলতে যান তাহলে আপনার ভাইয়ের মত আপনার অবস্থাও একই রকম হবে । তাই আপনি বুদ্ধিমানের মত দাড়িয়ে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন । তার মানে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন ।

(দ্বিতীয়)কিন্তু ঘটনা যদি উল্টা হত । আপনি দেখতেন আপনাদের একজন পুরানো শত্রুকে আপনার ভাই মারছে তখন কিন্তু আপনি কষ্ট পেতেন না । বরং আনন্দ পেতেন ।

এখন আপনার প্রথম ঘটনা যদি আমরা একটু অন্যভাবে দেখি, এবার ধরুন প্রভাবশালি লোকগুলো আপনার ভাই এবং যেই লোকটিকে মারছে সে আপনাদের পুরানো শত্রু তাহলে নিশ্চয় আপনার আনন্দ হবে ।

দেখুন একই ধরনের ঘটনা কিন্তু আপনার অনুভূতির মধ্যে কতটা তফাত । একবার চরম কষ্ট আবার চরম আনন্দ । এখন আমরা যদি বিজীতের অনুভুতির চেয়ে বিজয়ীর অনুভূতিকে বেশি মুল্যায়ন করি তাহলে উক্ত প্রথম ঘটনাটি আনন্দের ছিল । তাই নয় কি?

আনন্দ এবং কষ্ট দুটোই পরস্পর বিপরীতমুখী অনুভূতি । এবং এর পরিমাপ করা হয় স্বার্থের নিমিত্তে । তার মানে একই ঘটনা আপনার পক্ষে হলে আনন্দদায়ক এবং বিপক্ষে হলে কষ্ট । এবং সমগ্র ফলাফলটা নির্ধারণ করে স্বার্থ ।

এখন কষ্টভোগকারী যদি স্বার্থের উপরে উঠে বিজয়ী পক্ষের একজন হিসেবে ভাবতে পারে তাহলে সে নিশ্চয়ই পুলকিত অনুভব করবে । কিন্তু এটা কখনও সম্ভব নয় । কষ্টভোগকারী এখন আনন্দভোগকারীকে আঘাত করতে চাইবে এবং সে যদি সফল হয় তবেই সে আনন্দ লাভ করবে ।

আর পৃথিবীর এই নিয়ম সেই আদিকাল থেকে চলে আসছে । শক্তিশালীরা দুর্বলদের মেরেছে, দুর্বলরা আবার শক্তিশালী হয়ে তার বাদলা নিয়েছে । আর এই ধারা এখনও কার্যকর রয়েছে এবং চিরদিন থাকবে ।

আর এই কঠিন এবং চরম বাস্তব অনুভূতিটি অন্য সাধারন অনুভূতি হাঁসি এবং কান্নার মতই । এতে পাপবোধ করার কিছুই নেই । আর এই চরম সত্য আনুভূতিকে অস্বীকার করাও সম্ভব না ।

[দ্রষ্টব্যঃ সময়মতো আরো তথ্য এবং যুক্তি এই পোস্টে যোগ করা হবে ।] সবাইকে ধন্যবাদ ।