দেশ কি তবে ধর্ষকের তীর্থভূমি?

রাজু আহমেদ
Published : 13 August 2015, 04:22 AM
Updated : 13 August 2015, 04:22 AM

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের আলমারি থেকে বিবস্ত্র ছাত্রী উদ্ধার, স্কুলে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে দপ্তরীর কাছে শিশু ধর্ষিতা, সহপাঠীর সামনেই চাচা কর্তৃক ভাতীজি ধর্ষিতা..আরও বহু বহু-যারা ভাবছেন এগুলো ধর্ষকদের অভয়াশ্রম ও ধর্ষণের তীর্থভূমি ভারতের ঘটনার কথা বলছি তারা সম্পূর্ণ ভুল ভাবছেন । উপরোক্ত ঘটনাগুলো আজকের(১২/৮/১৫) বাংলাদেশের ঘটনা । আমাদের সোনার দেশটি দিনে দিনে নারীদের নিরাপত্তার বিপরীতে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হচ্ছে । যে পুরুষরা নারীদের নিরাপত্তার চাদর হবে তারাই আজ নারীদের কাছে মূর্তমান আতঙ্ক । কে কার কাছে নিরাপদ ? বাবার কাছে মেয়ে নয় কিংবা ভাইয়ের কাছে বোন । ণ্যূনতম বিবেক বোধটুকু খুইয়ে আজ আমরা পশুদের সারিতে দাঁড়িয়েছি । বন্য পশুর যেমন কোন বাছ-বিচার নাই তেমনি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষও আজ অধঃপতের চরম সীমায় পৌঁছেছে । হয়ত অধঃপতনের তীব্রতা আরও ভয়াবহ হবে কিন্তু ততোটা অনুমান করার সাহস আপতত জোগাতে পারছি না । দিনে দিনে পশুর চেয়েও জঘন্য জীবে মানুষ পরিণত হচ্ছে কেননা পশুরা আর যাই করুক অন্তত জোড়পূর্বক বলৎকার করে না । অথচ মানুষ দিন দিন পশুকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে চলছে আরও জঘন্য-ঘৃণ্য বিপর্যয়ের দিকে ।

ব্যক্তিগত বিশ্বাস, দেশে যতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তার মাত্র ৫-১০ ভাগও প্রকশ্যে আসে না । যা আসে তাতেই দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে ফেলে । নিত্যদিনের নতুন নতুন ধর্ষণের খবর পূর্বদিনের ঘটনার ভয়াবহতা-বিভৎসতা ভুলিয়ে দেয় । সকল ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসবে কিভাবে ? বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও অর্থের বিনিময়ে আইনের ফাঁক-ফোঁকড় গলিয়ে অপরাধী ঠিকই পাড় পেয়ে যায় এবং সমাজে বুক ফুলিয়ে চলে । অথচ ধর্ষিতা মেয়েটিকে মানুষের স্বীকৃতি দিতেই সমাজ নারাজ । রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোও যখন ধর্ষিতা মেয়েটিকে সহজভাবে নেয়না তখন জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া অসহায় মেয়েটির আর কি উপায় থাকে ? তাইতো মেয়েটি আপন কিংবা পর দ্বারা উপর্যপুরি ধর্ষিতা হয়েও বুকে পাথর চাপিয়ে তা লুকিয়ে রাখে । ধর্ষণের ব্যথা লুকিয়ে প্রাণে বেঁচে থাকা যায় কিন্তু ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়ে পরিবার-সমাজে বেঁচে থাকা নারীর জন্য সম্ভব কি ? আমরা যে পাল্লা দিয়ে ধর্ষকের চেয়ে ধর্ষিতাকে বেশি ঘৃণা করি !

এতদিন শুধু প্রাপ্ত বয়স্কাদের ধর্ষিতা হতে শোনা যেত কিন্তু ইদানীং ধর্ষণের যে ঘটনাগুলো আলোতে আসছে তাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ধর্ষিতা ছোট্ট শিশু-যে জানেই না ধর্ষণ কি । অথচ আপন কিংবা কাছের কিছু পুরুষাকৃতির জঘন্য মানসিকতার কুলাঙ্গার দ্বারা রক্তাক্ত হয়ে পৃথিবীর সকল পুরুষদের সম্পর্কে নেতিবাচক বিশ্বাস এবং চরম হিংসা নিয়ে তারা বেড়ে ওঠছে । কেউ কেউ আপন কিংবা রক্তের সম্পর্কের পুরুষগুলোকেও দানবের মত ভয় করতে শুরু করে এবং নিজেকে গুটিয়ে রাখে । যে বয়সে কোমলমতি কিশোরীর ধ্যান-জ্ঞানে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের ধারণা গঠিত হওয়ার কথা তখন তার মনে বাসা বাঁধে চরম ক্ষোভ, ভালোবাসার বিপরীতে তীব্র ঘৃণা ।

সমাজের গুটিকয়েক পশুর জন্য গোটা সমাজ আজ কলঙ্কের বোঝা বইবে কেন ? এক শিক্ষকের দায় আজ সমগ্র শিক্ষক সমাজকে বইতে হচ্ছে । শিক্ষক যখন ছাত্রছাত্রীদের সামনে পাঠ দান করেন তখন কলঙ্কিত শিক্ষকের সহকর্মী হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষক যেমন হীনমন্যতায় ভূগছেন তেমনি প্রতিটি ছাত্রী তার শিক্ষককে যদি কোনভাবে ধর্ষক শিক্ষকের আসনে বসায় তবে সেখান থেকে কি ধরণের শিক্ষা আসা করা যায় ? চাচা-ভাতীজির মত পবিত্র সম্পর্ককে যে কুলাঙ্গার অপবিত্র করেছে তাকে কি শাস্তি দিলে সেটা যথার্থ হবে তা ভেবে পাই না । বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে কিংবা তাদের মূখ দর্শন করানোর সময় নিজেকে ধর্ষকের স্বজাতির মনে হলে নিজেকে গুঁটিয়ে নিতে হয় । কতদিন আর এভাবে ? নৈতিক বিবেকবোধ জাগ্রত হওয়ার জন্য আর কতটা প্রহর গুনতে হবে ? ধর্ষককে আইন কিংবা রাষ্ট্র শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলেও আমরা যেন হাত গুটিয়ে বসে না থাকি । অন্তত ধর্ষকেদের সামাজিকভাবে বয়কট করে তাদেরকে একঘরে করে রাখাটা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবী । অন্তত নিজেদের সূস্থ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার খাতিরে আমরা কি এ কাজটুকু করতে পারবো না ?

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।

facebook.com/raju69mathbaria/