বোটানিক্যালের বর্তমান অনিয়ম

মোহাম্মদ রাশেদ
Published : 31 August 2012, 09:02 AM
Updated : 31 August 2012, 09:02 AM

উৎপত্তিগত কারনে মানুষ সর্বদা অরণ্যের হাতছানি অনুভব করে। নগরায়ণের ধাক্কায় অরণ্য তথা উদ্ভিদ জগৎ ক্রমেই বিলুপ্তির পথে। ইট-পাথরের মাঝে আমাদের প্রান যখন হাঁপিয়ে ওঠে তখন আমরা মুহুর্তের জন্য হলেও ছায়া সুশীতল বৃক্ষে ঢাকা কোন স্থানে চলে যেতে চাই। শহরবাসীদের জন্য এই ধরণের স্থান খুব বেশি নেই। রমনা, চন্দ্রিমা উদ্যান অন্যতম। আমার প্রিয় বোটানিক্যাল গার্ডেন- সব ধরণের বৃক্ষের এক বিশাল সমারোহ। ছোটবেলা থেকেই আমি এই স্থানটির প্রতি মোহাবিষ্ট। অনেকেই হয়ত গিয়েছেন, কিন্তু জানেন কি- বোটানিক্যালের কিছু কিছু স্থান ব্যাচেলরদের জন্য নিষিদ্ধ?

প্রধান গেইট দিয়ে ঢুকে কৃত্রিম লেকের ডানদিকে গেলেই আপনাকে কিছু লোক আটকাবেই। ওই দিকটাতে তুলনামূলকভাবে বৃক্ষ একটু বেশি হওয়ায় অনেকেই যেতে চায়। কিন্তু লোকগুলো সর্বদা চোখ রাখে কোন মানুষ যেন যেতে না পারে। আপনি যদি একা কিংবা সমলিঙ্গের বন্ধুদের নিয়ে যান তবে আপনাকে যেতে দিবে না। আপনি টিকেট কেটে ঢুকেছেন, যেকোন স্থানে যাওয়ার অধিকার আপনার আছে- এ ধরণের কথা বলেও কোন লাভ হবেনা। লোকগুলো দলে ভারি হওয়ায় আপনার উপর জোড় খাটাবে, যেভাবেই হোক আপনাকে ওই দিকটা এড়িয়ে যেতে বাধ্য করবে।

এখন আপনি যদি আপনার প্রেমিক/প্রেমিকাকে নিয়ে যান তাহলে কোন বাঁধা নেই। কিছু মুহুর্ত প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে আপনারা যখন উঠতে যাবেন তখনই কেউ একজন আপনার সামনে এসে টাকা দাবি করবে। টাকার পরিমানটা হবে টিকেটের পাঁচ থেকে দশগুণ। আপনি দিতে অস্বীকার করলে ভালবাসার মানুষটির সামনে আপনাকে হেনস্থা হতে হবে। বাধ্য হয়েই আপনি টাকাটা দিয়ে দেবেন।

এই ধরণের স্থান বোটানিক্যাল গার্ডেনে অনেক আছে। সমগ্র উদ্যানটি ঘুরে দেখার জন্য সরকার দশ টাকা নির্দিষ্ট করলেও সব জায়গায় যাওয়া যাবেনা- এটা কেমন কথা? এই উদ্যানটি পরিচর্চার জন্য সরকার অনেক অর্থ বরাদ্দ করে চলেছে, যার জন্য জনগনের কাছ থেকে প্রবেশ ফি দশ টাকা রাখা হয়। আর কোন প্রকার বরাদ্দ ছাড়াই ওই লোকগুলো দল বেধে জনগনের কাছ থেকে বহুগুণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রের দুর্নীতির জন্যই আমাদের জাতীয় উদ্যান নামে খ্যাত বোটানিক্যাল গার্ডেনে দর্শনার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

এর আগেও হকারদের উৎপাতে বোটানিক্যাল গার্ডেনে দর্শনার্থীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে গিয়েছিল। কোন ছেলে-মেয়ে একসাথে দেখলেই হকাররা ছুটে আসত এবং বিশ-ত্রিশ টাকার সফ্ট ড্রিংস্ শত টাকায় কিনতে বাধ্য করত। কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কয়েক বছর আগে এই অনিয়ম বন্ধ হয়। এখন কর্তৃপক্ষের উচিৎ একইভাবে বর্তমান সমস্যাটির সমাধান করা।

কর্তৃপক্ষ, গার্ড কিংবা প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা- এটা অবিশ্বাস্য। দয়া করে আমাদের জাতীয় উদ্যানটিকে রক্ষা করুন। আমরা যেন নির্ভয়ে, নিঃসঙ্কোচে এখানে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটাতে পারি। যান্ত্রিক জীবনের এক ঘেয়েমি থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তির আনন্দ হতে আমাদের বঞ্চিত করবেননা।