
“পৃথিবিতে যাহা কিছু আছে চিরকল্যানকর,
অর্ধেক তাঁর গড়িয়াছে নারী, অর্ধেক তাঁর নর।”
কী সুন্দর একটি সত্য! এখানে নারীর অধিকার ও সম্মান যেমন সুরক্ষিত, তেমনি পুরুষের গৌরবেরও সামান্যতম ঘাটতি নেই। নারী-পুরুষ নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এ পৃথিবিকে গড়ে তুলেছে। শিশুর নির্ভরতা ও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ‘সংসার’ নামের আবাসের সৃষ্টি। এখানে দু’জনের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হয়। যথাসাধ্য পরিশ্রম করে যেতে হয় শুধুমাত্র সন্তানের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও ভালবাসার বিনিময়ে। অর্থ কখনই এর বিনিময় হতে পারেনা।
আমরা ছোটবেলায় মীনা কার্টুন দেখে শিখেছিলাম যে ছেলে-মেয়ে দু’জনের কাজই সমান কঠিন। একটি সংসারে ছেলেদেরকে বেশি কাজ করতে হয়, নাকি মেয়েদের- এ ধরণের প্রশ্ন শিশুসুলভ। সন্তান প্রতিপালন ও সংসারের দেখভালের দায়িত্বটি প্রকৃতিগতভাবেই মেয়েদের উঁপর। আর ঘরের বাইরের ঝক্কি-ঝামেলাপূর্ণ কাজগুলো ওই একই কারণে ছেলেদের। এখানে কোন তুলনা চলেনা। সারাদিন সংসার থেকে, ওই প্রিয় শিশুটির কাছ থেকে দূরে থেকে পুরুষটি যে অর্থ উপার্জন করছে- সে তো সংসারের জন্যই। নারীটি সংসারের জন্য ঘরের বাইরে মুক্ত বিচরণ থেকে যেমন বঞ্চিত হয়, পুরুষটিও বঞ্চিত হয় ঝামেলাহীন ওই নিবিড় ঘরটি হতে। এই ত্যাগের জন্য নারীকে পারিশ্রমিক দিলে, পুরুষকেও দিতে হবে।
গৃহী শব্দের অর্থ সংসারী, এবং বিপরিতার্থক শব্দ সন্ন্যাসী। যে পুরুষটি সংসারের প্রয়োজনে অর্থ উপার্জনের জন্য বাহিরে যায়, সে অবশ্যই সন্ন্যাসী নয়- গৃহী। লিঙ্গ পরিবর্তন করলে হয় গৃহিনী, যে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সংসারের দেখাশোনা করে থাকে। তাহলে কোন যুক্তিতে গৃহিনীটি স্বামীর কাছে পারিশ্রমিক দাবি করতে পারে? এটা কী একটি অসুস্থ চিন্তা নয়?
ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী কৃষ্ণা তিরাথ এই চিন্তাটিই করেছেন। এই মন্ত্রনালয়ের মতে সংসারের কাজের জন্য আয়ের একটা অংশ প্রতি মাসে স্ত্রীকে দিতে বাধ্য থাকবেন স্বামীরা, এতে করে নাকি নারীদের সামাজিক ক্ষমতায়ন বাড়বে। তাদের যুক্তি- যদি সন্তানকে যত্নের জন্য কোনো ক্রেইশে (কর্মজীবী নারীদের সন্তানকে পালনকারী প্রতিষ্ঠান) পাঠানো হতো, তাহলে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হতো। যদি বাইরের কেউ রান্না করত বা বাজার করত, তাহলেও অর্থ ব্যয় করতে হতো।
প্রথম আলো’র অনলাইনে দেয়া সংবাদটি পড়ে শুরুতে আমার হাসি পাচ্ছিল। পরমুহূর্তেই আশঙ্কায় নড়েচড়ে বসি। আচ্ছা – যে সংসারের রান্নাবান্না এবং সন্তানের কথা এখানে বলা হচ্ছে তা কী গৃহিনীর নয়! সে কি সংসারটির অর্ধেক অংশ নয়! সে কী তাহলে পুরুষটির ভৃত্য? মন্ত্রী কৃষ্ণা তিরাথ বোধহয় বুঝতেই পারছেননা যে তিনি নারীদের সামাজিক ক্ষমতায়ন বাড়াতে গিয়ে তাঁদের অসম্মান করছেন। এই ধরনের চিন্তা গৃহিণীদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। প্রেম-ভালবাসা কিংবা মমতার মত বিষয়টিকে তিনি অর্থের মানদণ্ডে নিয়ে এলেন যা কোন গৃহিনীরই কাম্য হতে পারেনা।
ভারতে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ ব্যাপারে কথা হওয়াটা একদিকে যেমন হাস্যকর, আরেকদিকে আশঙ্কাজনক। আমাদের দেশের নারী সংগঠনগুলো যদি এর বৃহত্তর নেতিবাচক দিকটি বুঝতে ব্যার্থ হয় তবে দুইদিন পর তাঁরাও আন্দোলনের তালিকায় এই অন্যায় ও অমানবিক সিদ্ধান্তটি যুক্ত করতে পারে যা খুবই দূঃখজনক। স্বামী-স্ত্রীর সুন্দর সম্পর্কটি কলুষিত হবে, সন্তান অর্থের বিনিময়ে মায়ের ভালবাসা পাবে। এতে ব্যাবসায়িক গন্ধ পাওয়া যায়, আর পাওয়া যায় প্রকৃত ভালবাসার মৃত্যুর আভাস।
আমাদের নারীরা অবশ্যই এই সত্যটি বুঝবেন। স্নেহ-মমতা, প্রেম-ভালবাসা কে স্থান দিবেন সবকিছুর উর্দ্ধে। প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে থেকে নিজেদের সূখ ও সম্মান অটুঁট রাখবেন- এই হবে আমাদের কামনা। ভালবাসার জয় হোক।
শাহ আবদালী বলেছেনঃ
ধন্যবাদ। কিন্তু আমারতো মনে হয় এদেশের এন.জি.ও গুলো কয়দিন বাদে এটাকে ইস্যু বানাবে।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
ভারতের মত সবই সম্ভবের দেশে এই প্রস্তাব গৃহিত হলে আমাদের দেশেও এর ছোঁয়া লাগবে। আমাদের মা-বোনেরা নেতিবাচক দিকটি সম্পর্কে অবগত থাকলে এন.জি.ও গুলো এটাকে ইস্যু করার সুযোগ পাবেনা।
মরুর প্রান্তে বলেছেনঃ
এই পদ্বতিটা যে সকল দম্পতি এখনো বিয়ে না করেই বাচ্চা নিয়ে ফেলেছে তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য হতে পারে, কারণ ভারতে এই ধরনের দম্পত্তি প্রচুর। কিন্তু আমাদের দেশে এই ধরনের কোনও দম্পত্তি পাবেন না। কাজেই এই উত্ভট পদ্বতিটা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
মরুর প্রান্তে, যারা বিয়ের আগেই সন্তান নিয়ে ফেলেন তারাতো আমাদের সমাজের নিয়মকে অস্বিকার করেই ফেলেছেন। তাদের জন্য আবার নিয়ম কীসের? ধন্যবাদ আপনাকে।
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
🙂 রাশেদ, আজকের জটিল জীবনের চিত্রটি কিন্তু ভালোবাসার বদলে অজস্র ভালোবাসাহীনতার কথাও বলছে রোজ-ই …রোজ-ই আমরা অনেক গৃহিনীর আত্মহনন সহ বঞ্চিত করবার বিস্তর উদ্বেগজনক বার্তা জানছি …সেইসব গৃহিনী সংসারযাত্রা শুরুর কালে নিশ্চয় সংসার-স্বামীর কাছে অনেক ভালোবাসা আদান-প্রদানের সুন্দর স্বপ্ন নিয়েই স্বামীগৃহে প্রবেশ করেছিলো …অথচ নিদারুণ নির্মম ভালোবাসাহীনতা তাকে ক্রমেই ঠেলে দেয় জীবন হতে আত্মহনন-এর দিকে …তার-ই প্রেক্ষাপটে ভারত-এর রাজ্যসভায় এই প্রস্তাব পাশ হওয়া মানে কিন্তু নারীর স্বগৃহে নিজের অধিকার পাওয়া মনে করি, যা তাকে বঞ্চনার শিকার বানাতে অক্ষম হবে। এদেশে এমন প্রস্তাব পাশের সম্ভাবনাটি ক্ষীণ, কেননা এইদেশে নারীর সমানাধিকারের প্রশ্নটি উঠলেই পরিবারের লোকজন কারও মুখে সমর্থনের বাক্য আসেনা, আইন করেও নারী সমানাধিকার পাবেনা মনে হয় পরিবারের সহযোগী ভূমিকা না থাকায়।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
নুরুন্নাহারশিরীন, আমাদের দেশে নারীদের বঞ্চিত হওয়া এবং আত্মহননের ঘটনা বিরল নয়। যে নারী মমতা ও ভালবাসা দিয়ে সংসার করতে আসেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে, তিনি কী ভালবাসা না পেয়ে অর্থ নিয়ে সূখে থাকতে পারবেন? কিছু সংখ্যক পিশাচ-পুরুষের জন্য নারীরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে ঠিক, কিন্তু অসংখ্য নারী স্বার্থহীন ভালবাসা নিয়ে সংসারও করছেন। এর মাঝে অর্থের বিনিময় ঢুকে গেলে আগামী প্রজন্মের কোন নারীর মাঝেই অকৃত্রিম ভালবাসা থাকবেনা। একটু চিন্তা করে দেখুন, এই প্রস্তাবটি পাশ হলে পুরুষরা নারীদের প্রতি আরো উদাসিন আর আগ্রাসী হয়ে যাবেনা কী? ঠিক যেমন মালিক হন কর্মচারিটির প্রতি? এক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে প্রজন্মকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়াটা মঙ্গলজনক হতে পারেনা। নারীদের বঞ্চনার সমাধানে অন্য কোন উপায় খোঁজা উচিৎ।
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
রাশেদ, সেই আবহমান কাল ধরেই এদেশের নারীরা নিঃস্বার্থ আর পরম ধৈর্যে সর্বংসহ ধরিত্রীর মতোই সয়ে যায় অনেক অবহেলা-কষ্টের ভার, সে কথা সংসারের অন্যরা তেমন করে জানার চেষ্টা করেনা, আমাদের কালের মায়েরা তেমন মায়ের উদাহরণ। আজকের বদলে যাওয়া সমাজে মায়েদের অবস্থানটি কতটা ভালোবাসাময় এবঙ কতটা কষ্টের তার হিসেব করলে “কিতাব মিছে” জাতীয় চিত্র মায়ের প্রতি স্বয়ং স্বামী সহ সন্তানদের বিস্তর অবহেলার পরিসংখ্যান হয়েই বাস্তবের জানান দিবে ভাই, তাইতো নারীরা তাদের স্বামীদের আয়-উপার্জনের মাত্র সামান্য একাংশ হাতখরচ পেলে হয়তো তা দিয়েও নিজের প্রয়োজন বাতিল করে সংসারের পেছনেই খরচ করবেন, তাতে কি এমন ভালোবাসার ঘাটতির কথাটি ভাবছেন ভাই, যা নারী তার একান্ত সংসার যাত্রায় অফুরান পাচ্ছেন আর স্বামীর আয়ের সামান্য পাওয়ার কথায় তাতে ঘাটতি পড়ে যাবেই আমার তা বোধগম্য না। অন্য উপায় আজকের নারীরা নিজেরাই খুঁজে যে নিচ্ছেন তারও ফলাফল কিন্তু তাদের জন্য তেমন সুখকর ঠিকানা রচছেনা, যদি না সেই নারীরা বিত্তশালী কোনও সংসার হতেই শুরু করেন প্রাতিষ্ঠানিক কোনও কাজ। অথবা বাণিজ্যিক বুটিক-বাটিক-রেঁস্তোরা-পার্লার ইত্যাদি। যা অন্যান্য মধ্যবিত্তের নারীর নাগালে নেই। নিম্নবিত্তের নারীদের অবস্থা ভাবাও কঠিন মনে করি। যাহোক, ভাই, এ নিয়ে তর্কে যাওয়া ঠিক না, কেননা এইদেশে নারীরা এক জীবনে তাদের স্বামীর আয়-উপার্জনের ভাগ পাবার সম্ভাবনা দেখিনা। ভালো থাকুন, সুখে থাকুন।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
🙂 নুরুন্নাহার শিরীন, আমাদের নারীদের কষ্ট, বঞ্চনা এবং ত্যাগ আমাকেও পীড়া দেয়। আমিও চাই পুরুষপ্রধান না হয়ে মানবপ্রধান সমাজ গড়ে উঁঠুক। এই লক্ষ পূরণ করতে গিয়ে যেন নারী পুরুষের আদিম ও নিঃস্বার্থ সম্পর্কের মৃত্যু না ঘটে। আজ যে পুরুষটি উপার্জনের সবটা গৃহিনীর হাতে তুলে দিচ্ছে, এই প্রস্তাব পাশের পর এমনটি হবে বিরল। ছাঁচে ফেলা পরিমানটি দিয়েই পুরুষটি ভারহীন হয়ে যাবে। যাই হোক, আপনারা অনেক অভিজ্ঞ, আমার দৃষ্টিভঙ্গিটিকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবার মত বোকা আমি নই। আমি জানি, আগামিতে যখন নারীরা সন্তান জন্ম দেয়া বাবদ স্বামীর কাছে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দাবি করবে- সেদিনও কেউ কেউ এর পক্ষে থাকবে। এর সুফল এবং কুফল বিবেচনার ভার সবার হাতে। ধন্যবাদ বোন, ভাল থাকবেন।
হৃদয়ে বাংলাদেশ বলেছেনঃ
@বোন শিরীন, অন্তর থেকে বলছি, আমি আপনার মতামত পড়ার অপেক্ষাতেই ছিলাম। কারন, আপনি আপনার সন্তানদের বড় করেছেন, অন্যদের অভিজ্ঞতার চাইতে আপনার অভিজ্ঞতা হবে ভিন্ন। পৃথিবীর তাবৎ নারীদের অবস্থা বাংলাদেশের নারীদের মতোই। পরিপাটি ঘর, সন্তানদের গড়ে উঠা, রান্নার স্বাদুতার কাজের ভিড়ে নারী হারায় তার নিজের সত্বা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ একেই মাতৃত্ব নাম দিয়ে খুব উদারতা দেখায়। (লব্ধমনোরথ অর্থী রাজদ্বারে যথা দ্বারীহস্তে দিয়ে যায় মুদ্রা দুই-চারি, মনের সন্তোষে: কচ ও দেবযানী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।) কিন্তু নারীর বঞ্চনা লাঘব করেনা। আশার কথা, তরুনতর নারীরা সে প্রথা ভাঙ্গতে শুরু করেছে। তাদের কপালে পড়ুক জয়তিলক।
ভালো থাকবেন।
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
@হৃদয়ে বাংলাদেশ, আমার বড়ভাই, হ্যাঁ, এই সমাজ কিন্তু নারীর সমানাধিকার দিতে নারাজ। বিত্তবান হউক আর বিত্তহীনের প্রায় এক-ই অবস্থান এ ক্ষেত্রে। মানে, ভাইবেরাদররা বড়ো বেজার মুখ করেন যখন বোনরা সমানাধিকারের কথা বলে অথবা দাবী করেই বসে ! যেন বা এমন দাবীটি অপরাধ ! ভালো থাকুন। সালাম, শুভেচ্ছা।
সৈকত বলেছেনঃ
@
পুরুষেরা যে সারাদিন বাইরে কাজ করে মরে তার কী করবেন।মানুষের সুখ মানুষকেই খুজে নিতে হবে। আমার বাপ চাচাদের দেখেছি আদর করে বউ বাচ্চার নামে জমি কিনেছে। কই সেগুলো নিয়ে ফটর ফটর কেউ করে না। (২ ফুফু ৫ খালা এবং মা সবারই জামাই উনাদেরকে জমি কিনে দিয়েছে ) যা নিয়ে কথা বলছেন তাতে পাশ্চাতে্যর মেয়েদের মত সিণ্ডেরেলা সপ্ন নিয়ে বসে থাকতে হবে। বিয়ের জন্য বর খুজে পাওয়া জাবে না। পরে লিভটুগেদার বারবে। এখন যেমন বাংলাদেশেও কিছু কিছু দেখা যায় তখন আরো বেশি দেখবেন।
নারীর স্বত্তা নারীকেই খুজে নিতে দিন।
আচ্ছা এই আইন কি ঘর জামাইয়ের জন্যও প্রযোজ্য। 😀 😀 😀
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
ভাই সৈকত, আপনার দূরদর্শী চিন্তাটির সাথে আমি একমত। এই সিদ্ধান্তের হাত ধরেইঃ
১. লিভ টুগেদার বৃদ্ধি পাবে।
২.বিবাহ বিচ্ছেদ বৃদ্ধি পাবে।
৩.পুরুষদের সংসারবীমুখতা বৃদ্ধি পাবে।
৪.নারীদেরকে পরবর্তি প্রজন্ম বেতনভুক্ত কর্মচারী-জ্ঞান করবে। এবং
৫.নারী-পুরুষের অঘোসিত প্রতিযোগিতা শুরু হবে।
ধন্যবাদ।
shamsul alam বলেছেনঃ
@নুরজাহান শিরীণ, ধন্যবাদ আপনার সঠিক মতামতের জন্য ।
নারীরা সমানাধিকার পাবেনা ততদিন পয্যন্ত যতদিন তারা শক্তিশালী / স্বাবলম্বি না হবে ।
মনে রাখবেন, “হরিণ নিরিহ বলেই বাঘ তাদের হত্যা করে এবং খায় ”
ধন্যবাদ সবাইকে ।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
আমার এক বন্ধু, জান্নাতুল ফেরদাউস নিশু লেখাটি পড়ে আমাকে ফোন করে। তার মতে- ‘গৃহিনীকে যদি অর্থ দিয়ে কাজ করাতে হয় তবে ছেলেরা বিয়েটাকে বিড়ম্বনা মনে করবে। অর্থ ব্যয় করলেতো বিয়ে ছাড়াই এমন অনেককে পাওয়া যাবে যারা ঘরের কাজ করে দিবে, সন্তানও দিবে। শুধু নিঃস্বার্থ প্রেম থাকবেনা।’
হৃদয়ে বাংলাদেশ বলেছেনঃ
@সৈকত, দারুন প্রশ্ন তুলেছেন। পুরুষ বাইরে কাজ করতে করতে “মরে” যায় আর উপার্জনহীনা নারী ঘরে কুঁচি দেয়া শাড়ি পড়ে, লিপস্টিক লাগিয়ে, সারাদিন টিভির সামনে বসে থাকে, এইতো? বাহ্। সন্তান উৎপাদন, তাদের লালন, ঘরদুয়ারের সব কাজ পুরুষদের পালিত জীন-পরীরা করে দিয়ে যায়।
আপনার বাপ-চাচারা প্রত্যেকে তাদের বউকে জমি কিনে দিয়েছেন, কী মহৎপ্রান মানুষ তাঁরা। তা সে সম্পত্তি/জমি ব্যবহার বা বিক্রয়ের স্বাধীনতা তাদের বউদের আছেতো? আমরাতো জানি এ সমাজে এরকম সম্পত্তির কাগুজে মালিক নারীরা, কিন্তু এ নিয়ে সিদ্বান্ত দেয়ার অধিকার হচ্ছে পুরুষদের। “মাইয়া মানুষ সম্পত্তির লেনদেন কি বুঝে?” তাইনা?
আরেক মহান চিন্তাবিদকে তার বন্ধু ফোন করে বলেছেন, (সংসারে নারীর কর্মমূল্যের) টাকা দিলে বউয়ের দরকার কি? তাহলে পরিবার সৃষ্টি না করা বা ভাঙ্গার চিন্তাটা আসছে কার মাথায়?
আমার সৌভাগ্য যে বোন শিরীনের মন্তব্য অনুসরন করে এই পোস্টে এসে আধুনিক বেশধারী কিছু মধ্যযুগীয় মানুষের দেখা পেলাম!
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
@হৃদয়ে বাংলাদেশ, নারীর অধিকারের কথা এলেই সমগ্র পুরুষ জাতিকে ভিলেন বানিয়ে সামনে দাড় করানোটা এখন একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। আমি আমার লেখায় নারী-পুরুষের প্রতিযোগিতার কথাটা টানতে চাইনি। ভাই আপনারা যারা নারীদের বেতন দেওয়ার পক্ষে, তারা ধরি মাছ না ছুঁই পানি ধরনের পন্থা অবলম্বন করছেন। আপনি হয়ত স্ত্রীকে বেতন দিবেন, এমনকি আপনার কাছে একবারও মনে হবেনা যে, ভালবাসাকে একবিন্দু হলেও অপমান করা হয়েছে। আপনি মহাজ্ঞানী ও মহামানব।
ভাই,আপনি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেন। ধরুন এই বেতনের প্রস্তাবটি গৃহিত হল এবং গৃহিনীর ভালবাসা ও সেবা টাকায় পরিমাপ করা শুরু হয়ে গেল। আপনার কী মনে হয়না যে এর পরের প্রস্তাবটি হবে সন্তান জন্ম দেয়া বাবদ অর্থ দাবী? আপনি হয়ত এর সাথেও একমত হবেন, কারণ আমার মনে হয় আপনার মধ্যে একটা বিশ্বাস ঢুকে গেছে যে, মেয়েদের সকল অধিকার ছেলেদের কাছে লুকানো আছে- শুধুই ছিনিয়ে নিতে হবে।
যাইহোক, এভাবে চলতে থাকলে একসময় ছুটা বুয়ার মত অর্থের বিনিময়ে নারীদের দিয়ে সংসার সামলাতে হবে। আপনি যথেষ্ট জ্ঞানী, বলুনতো, এতে করে নারীদেরকে আপনি অর্ধাঙ্গী বানালেন, নাকী ভৃত্য? এটা নারীদের ক্ষমতায়ন, নাকী সম্মানহানী?
হৃদয়ে বাংলাদেশ বলেছেনঃ
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, মহাজ্ঞানী বা মহামানব নই। আমি নিজেকে একজন উদারমনস্ক আধুনিক মানুষ বলে বিশ্বাস করি। আমার স্ত্রীর সাথে আমার সম্পর্ক সন্মান ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে গড়া।
আপনি যে ফ্যাশনের উল্লেখ করেছেন, সেরকম কোন ফ্যাশন সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে একথা অবশ্যই বিশ্বেস করি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের তাদের যথার্থ অধিকার থেকে অবশ্যই বঞ্চিত করা হয়। তাই যদি নারীরা ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী পুরুষদের পশ্চাদ্দেশে লাথি দিয়ে তাদের সমাধিকার আদায় করে, আমি নারীদের বাহবা দেবো। আপনারা যাকে ফ্যাশন বলেন তাতো হচ্ছে আপনাদের ভীতি। ‘এইরে, “বেডি”রা বুঝি পুরুষদের চেয়ে বেশি পেয়ে ফেললো’। সেজন্যইতো দুজনের ভালোবাসার সৃষ্টি সন্তান লাভের সময় স্ত্রীকে টাকা দিতে হয় কি না ওই দুঃশ্চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে আছেন!!
বিশ্বজুড়ে শতভাগ গৃহকর্মের জন্য যে গৃহবধু নিয়োজিত থাকে, তাঁকে তাঁর শ্রমমূল্য দেয়ার আওয়াজ উঠেছে। এই মূল্য দিলেই স্ত্রী বুয়া হয়ে যাবেন বা তাঁর সন্মান হারাবেন এটা শুধু মূর্খরা ভাববে। স্ত্রীকে তাঁর যথার্থ প্রাপ্য দিলে ভালোবাসার মাঝে দেয়াল উঠবে কেন? আপনারা যারা এই ভালোবাসার কথা তুলছেন, তারা ওই ঈদে একটা শাড়ি, মাঝে মাঝে বায়োস্কোপ দেখিয়েই ভাবেন যাক্, খুব ভালোবাসা দেখানো হলো। কিন্তু মনেমনে তো তাঁদের ‘বেডিমানুষ’ ছাড়া আর কিছু ভাবেন না! তাইতো নারীদের সমানাধিকারের কথা উঠলেই চান্দি গরম হয়ে যায় 🙂
আধুনিক হোন।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
শুধুমাত্র যুক্তিহীন কিছু কথার ফুলঝুরি এবং অন্যকে মূর্খ বলে নিজের অদুরদর্শী বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়ার প্রবনতাটা আমাকে সত্যিই আহত করেছে। আপনি আমার চেয়ে অনেক বড়-ক্ষমা করবেন, অন্তত যে আধুনিকতার দোহাই আপনি দিলেন তার বদৌলতে এতটুকু বোঝা উচিৎ যে নারীমুক্তি পুরুষ থেকে আলদা করে নয় বরং একাত্ম হয়েই করতে হবে। এর মাঝে অর্থের তারল্য নিয়ে এলে যে খেলা শুরু হবে তা পুরুষ থেকে নারীকে এবং নারী থেকে পুরুষকে স্বতন্ত্র করে দিবে, যার কুফল আমি আগেই বলেছি।
অনুগ্রহ করে আমাকে উপদেশ এবং কটুক্তি না করে যুক্তি দিন। শ্রদ্ধা রইল, ভাল থাকবেন।
আজিজ বলেছেনঃ
রাশেদ সাহেব, প্রথমেই বলে নেই, আপনার পোস্টটি পড়ে আমি মারাত্মক শকড হয়েছিলাম। মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছিল, বুয়েটে পড়া একটা ছেলে কিভাবে এরকম পশ্চাত্পদ চিন্তা করতে পারে? আমরা কী তাহলে এগিয়ে যাচ্ছিনা? চিন্তা চেতনা কী সেই বর্বর যুগেই আটকে গেছে?
হৃদয়ে বাংলাদেশ এর সাথে সম্পূর্ণ সহমত। অথচ দেখুন তিনি 50উর্দ্ধ একজন তরুণ। চিন্তা চেতনায়, জ্ঞানে প্রজ্ঞাতে কত এগিয়ে!!!
নারীদের বেতন দেয়ার কথা আসছে কারণ আপনাদের মত আক্কেলহীন পুরুষদের বুঝিয়ে দেবার জন্য যে ওরা ঘরে বসে যে কাজ করে, তা পুরুষদের রাজা উজির মারার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়..আমাদের নারী-পুরুষ যখন দুজনেই চাকুরী করেন, তখন পুরুষ ঘরের কাজ কয়টা করে বলেন তো? একটু চিন্তা করুন যে আপনার বোন এবং আপনি দুজনেই ধরুন বুয়েটে পড়ছেন..ঘরে ফিরে আপনি কী কী কাজ করেন? আর আপনার বোন কী কী কাজ করে? কাজের মূল্যায়ন করা শিখুন রাশেদ সাহেব..শুভকামনা।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
আজিজ ভাই, আমার এই পোস্ট পড়ে আপনার মত কিছু অনুকরণের স্রোতে গা’ভাসানো মানুষ শক্-ড হবে আমি জানতাম। আপনার চিন্তাভাবনার সাথে সহমত হলেই একজন মানুষ আধুনিক, নতুবা বর্বর যুগের- এই প্রকার আন্তর্জাতিক মানদন্ড আপনাকে কে বানালো বলতে পারেন?
হৃদয়ে বাংলাদেশ’র সশ্রদ্ধ লেখাগুলো বিশ্লেষণধর্মী এবং আমিও তাঁর চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান-প্রজ্ঞাকে সম্মান করি। তাই বলে একটা মানুষের সকল চিন্তাকে অন্ধের মত সমর্থন করিনা।
সত্যের পথে নিরপেক্ষ হতে শিখুন। ভাল থাকবেন।
হৃদয়ে বাংলাদেশ বলেছেনঃ
@প্র্রিয় আজিজ (যদিও আজিজ মানেই প্রিয় :)) এবং প্রিয় লেখক। আপনাদের দুজনকেই ধন্যবাদ। আমি সত্যিই আপনাদের প্রশংসায় বিব্রত বোধ করছি।
আজিজ যে যুক্তিটি (ভাই-বোনের) দেখিয়েছেন তা খুবই প্র্যাগমেটিক। আশা করি লেখক তা নিয়ে ভাববেন। গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীদের কর্মমূল্য দেয়ার প্রস্তাবটি একটি প্রস্তাবনা মাত্র। তবে এ কথাটি তো ঠিক, পরিবারের দায়িত্ব পালনে ঘরের দিকটির মূল ভার (যা খুবই ভারী) নারীকেই বহন করতে হয়। তাই আমাদেরকে নারীদের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধাশীল ও সন্মানসূচক দৃষ্টিভঙ্গী অর্জন করতে হবে। তবেই না আমরা নিজেদের আধুনিক বলে পরিচয় দিতে পারবো।
আমি আপনাদের দুজনের বাদ-প্রতিবাদ উপভোগ করছি। তবে বয়োজ্যষ্ঠ মানুষ হিসাবে লেখককে অনুরোধ করবো তাঁর প্রত্যুত্তর যেন অসহিষ্ণুতার ধার ঘেষে না যায় এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে।
লেখক, একই সাথে আমার মন্তব্যের কোন বাক্য যদি আপনাকে আহত করে থাকে (সুনির্দিষ্টভাবে আপনাকে নয়, আমি আসলে গতানুগতিক পুরুষদের বুঝিয়েছিলাম) তাহলে আমি দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।
আপনারা ভালো থাকুন।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেনঃ
@হৃদয়ে বাংলাদেশ, আমি যে আমার প্রত্যুত্তরে কিছুটা অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছি তা স্বীকার করছি এবং ক্ষমাপ্রার্থি। আশা করি এটাকে আমার অনভিজ্ঞতার রেশ হিসেবে দেখবেন।
হৃদয়ে বাংলাদেশ বলেছেনঃ
রাশেদ, আপনার প্রতিক্রিয়াকে আমি অসহিষ্ণুতা নয়, তারুন্যের ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করেছি। আমাদেরও একসময় এই সর্বগ্রাসী এবং উদ্ধত যৌবন ছিলো। তাই আমি জীবনের পেছনে তাকিয়ে আজ মুচকি হাসি।
আপনার সর্বাঙ্গীন কল্যান কামনা করি।