বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক বিস্ফোরণ ও রপ্তানি বাজারে বড় সম্ভাবনাময় খাত কৃষি

জহিরুল ইসলাম রাসেল
Published : 2 March 2016, 02:45 PM
Updated : 2 March 2016, 02:45 PM

প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের মোট জনসংখ্যার শতকার ৮০ ভাগ এবং শ্রমশক্তির ৬০ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে চাষযোগ্য জমির পরিমান কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন নেতিবাচক কারনে কৃষিজমির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় আশার আলো নিয়ে কৃষিকে বুকে ধারণ করে আসছে অসংখ্য শিক্ষিত মেধাবী তরুন। সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ ও আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা, গড়ে উঠছে নতুন নতুন কৃষি শিল্প। দারিদ্র্য বিমোচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৃষিশিল্পের উন্নয়নের বিকল্প নেই। আর এ চ্যালেঞ্জ নিয়েই তারা নেমে পড়েছে এক মহান যুদ্ধে। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে একে অপরের সাথে ভাগ করে নিচ্ছে তাদের অভিজ্ঞতা, পরামর্শ ও তথ্য উপাত্ত। তারা বিচরণ করছে শস্য, প্রাণিসম্পদ খাত সহ কৃষির সকল শাখায়। শস্যের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, গম, শাক-সবজি, আখ, ডাল ফসল ইত্যাদি। প্রাণিসম্পদের মধ্যে গবাদিপশু, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, হাঁস-মুরগী ও মৎস্য চাষ। ফুল, ফল, মসলা, মৌ, মাশরুম ও রেশমচাষ, বীজ উৎপাদন, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল পালন, ভেরা পালন, গাভী পালন, মহিষ পালন, ব্রয়লার, লেয়ার পালন, কোয়েল, কবুতর, হাঁস পালন, বাচ্চা উৎপাদন, মাছ চাষ, পোনা উৎপাদন, নার্সারি, বনায়ন, জৈবসার তৈরি, বায়োগ্যাস তৈরিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদনে ঘটতে যাচ্ছে নীরব বিপ্লব। আইনজীবি, সাংবাদিক, ডাক্তার, ব্যাংকার, প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ জড়িত হচ্ছে এই কৃষি সেক্টরে। যার ফলশ্রুতিতে কৃষি সেক্টর দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের পথে। সাম্প্রতিক কালে উদীয়মান এ সকল শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহনে রপ্তানি বাজারে প্রবেশের বড় সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে এই কৃষি সেক্টর, বলা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটতে যাচ্ছে। খামার ভরা গরু-ছাগল আর শস্যে ভরা ক্ষেতে জেগে উঠবে ক্ষেত খামারে সবুজ বাংলা। সামাজিক সুরক্ষা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে হবে দারিদ্র বিমোচন, লাঘব হবে বেকারত্বের অভিশাপ। গার্মেন্টস শিল্প ও জনশক্তি রফতানির মত কৃষিও হতে পারে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার।
বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক শিল্পের এ উজ্জল সম্ভাবনকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে এখন শুধু প্রয়োজন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, যুবকদের উৎসাহী করণ, প্রয়োজনীয় প্রশিণ, পর্যাপ্ত ঋণ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, অনগ্রসর ডেইরি, মৎস্য ও পোষাপ্রাণি খাতের সমস্যা ও এর প্রতিকার, কারিগরি উন্নয়ন। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ ও পারিবারিক কৃষিকে উৎসাহিত করতে হবে।

বর্তমানে কৃষির ভূবনে প্রবেশকারী শিক্ষিত নবীন সব কৃষি উদ্যোক্তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আগামীর কৃষি উন্নয়নের উজ্জল সম্ভাবনা। এই উদ্যোক্তারাই কৃষিশিল্পে বিপ্লব ঘটাইবেন, সেদিন আর বেশি দূরে নয়। এ ক্ষেত্রে এ সকল নবীন উদ্যোক্তাদের মনে রাখতে হবে, কৃষিতে হঠাৎ করেই লাভ করা সম্ভব নয়। এ খাতেও রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ নানা প্রতিবন্ধকতা। তবে আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা আর পরিশ্রম দিয়ে ধৈর্য্যের সাথে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই। একবার ব্যর্থ হলে ভেঙ্গে না পড়ে ওখান থেকেই আবার চেষ্টা করতে হবে। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। ঝুঁকি নেয়ার মানসিক শক্তি থাকতে হবে। আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। যে কোন কাজেরই ফলাফল যে সাথে সাথেই আসবে এটা ভাবা উচিত নয়, অপেক্ষা করতে হবে কারন পরিবর্তনে সময় লাগে। বন্ধুর অথবা পরিচিত কারো খামারে প্রচুর লাভ দেখে ক্যালকুলেটরে আয় ব্যয়ের হিসেব করে নয়, বাস্তবতা জেনে বুঝে শিখে শুরুটা করে দিন তারপরও শিখতে থাকুন, শিখতে থাকুন। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে চলতে থাকুন দুর্বার গতিতে। আপনার জন্য সাফল্যের রাস্তা খুলেবেই। এখনই সময় ক্ষেত খামারে তথা কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রতি গুরুত্বারোপের। সময় এখন শিক্ষিত কৃষকের। তারা সবাই ফেসবুকের মাধ্যমে আবদ্ধ হয়েছে একই ফ্রেমে। তাদের লেখনীর মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করে কৃষিকে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা। এই শিক্ষিত কৃষকের হাতেই গড়ে উঠছে সবুজ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ক্ষেত খামার। এর বদৌলতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা ঘুর্ণায়নে পাবে দুরন্ত গতি। আসুন, আমাদের বেচে থাকার উপাদান খাদ্যের একমাত্র উৎস এই কৃষি খাতের উন্নয়নে কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখি।