খালেদার নতুন ভগবান, আ.লীগারদের কাঁপন আর দুইয়ের চাপে পিষ্ট জনগন

রাশেদুজ্জামান
Published : 6 Nov 2012, 06:29 PM
Updated : 6 Nov 2012, 06:29 PM

বিএনপির প্রধাননেত্রী খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে বিএনপি পন্থীরা বেশ উৎসাহিত। এমনকি ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারে অনেক নেতাই নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবীরা কেমন লাভ হলো তার হিসেব নিকেশে ব্যস্ত। আর আওয়ামীলীগ এবং আওয়ামী ঘেষা বামপন্থীরাও খালেদার ভগবান বদল মানে ভারতের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া নিয়ে খালেদার অতীতের ভারত বিরোধীতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের রাজনীতির ভোল পাল্টানোর কথা ইনিয়ে বিনিয়ে নানা ভাবে প্রচার করছেন। তারা প্রমাণ করতে চাইছেন যে খালেদা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই ভারত সফর করেছেন।
বিএনপি পন্থীরা সফরকে সফল আখ্যায়িত করে আগামীতে যে তারা ক্ষমতায় আসছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গেছেন বলেই মনে হচ্ছে। যেমন আজকেই বিডিনিউজ২৪.কম বিএনপি নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে শিরোনাম করেছে, 'ভারতসফরে আ. লীগের দলীয় নির্বাচনস্বপ্ন ছাই'।

আর আওয়ামীপন্থী লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা খালেদার অতীতের ভারত বিরোধীতার কথা বলছেন ফলাও করে। যেমন বিডিনিউজ২৪.কম ব্লগেই সুলতান মির্জা খালেদার ভারত বিরোধীতার ইতিহাস তুলে ধরেছেন।

খালেদার নতুন ভগবান নিয়ে আওয়ামীলীগার ও তাদের বুদ্ধিজীবীদের আশঙ্কা অমূলক নয়। তারা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু সাধারন একজন নাগরিক হিসেবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ভারত তোষণ কিংবা ভারত বিরোধীতায় আশাব্যঞ্জক কিছু দেখতে পাচ্ছি না। বরং যে আশঙ্কা সব সময় ছিল তা খালেদার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে এবং দুই ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের লেখা থেকে আরো পরিষ্কার হয়ে গেলো।

ভারত যে শুধু আ.লীগের উপর নির্ভর করতে চায় না তা প্রণব মুখার্জির সর্বশেষ সফরের তার একটি মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে কোন একদলের উপর নির্ভর করা যায় না।

অপর দিকে খালেদার ভারত বিরোধীতার কথা যেভাবে বলা হচ্ছে আদতে কি তা ভারত বিরোধী ছিল নাকি স্রেফ জনগণের মধ্যে ভারত বিদ্বেষীতাকে ভোটের রাজনীতিতে কাজে লাগানোর জন্যই বলা।

অতীত খুজলে দেখা যাবে যে, খালেদা বা বিএনপির ভারত বিরোধীতা স্বত্ত্বেও তারা ভারতের স্বার্থের পক্ষেই সব সময় কাজ করেছে। এমনকি ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির বিরোধীতা করলেও তা বাতিল করেনি। এথেকেই প্রমাণিত হয়ে বিএনপির ভারত বিরোধীতা লোক দেখানো রাজনৈতিক কৌশল মাত্র।

ভারতের স্বার্থ রক্ষায় আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যেমন ২০১০ সালে যখন হাসিনা-মনমোহন চুক্তি হল বিএনপি সে চুক্তির বিরোধীতা করেনি। এছাড়াও ভারতের স্বার্থে যেসব চুক্তি বিএনপি আমলে হয়েছে কিংবা আ.লীগের আমলে হয়েছে সেগুলোর বিরোধীতা তারা মাত্র লোক দেখানো ছাড়া করেনি। এই হল বিএনপির অবস্থা।

আ.লীগ সব সময় ভারতপন্থী হিসেবেই পরিচিত। ভারতের স্বার্থে সব সময় দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতেও দেখা গেছে। যেমন- ১০০ কোটি ঋণ, ট্রানজিট। ট্রানজিটের পুরো অবকাঠামো নির্মাণ হবে ভারতের কাছ থেকে নেয়া ঋণের টাকায়। এমনকি যত সরজ্ঞাম লাগবে সব ভারত থেকে আনতে হবে। এই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আ.লীগের জনগণের স্বার্থ রক্ষার নমুনা।

এবার মুল বিষয়ে আসা যাক। কথা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে ক্ষমতায় যাওয়াটাই এখানকার প্রধান দুই দলের লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তারা করতে পারে না এমন কোন কাজ নেই। খালেদা যেমন ভারতের কাছে যেতে পারেন, আওয়ামীলীগও তেমনি জামায়াতের সাথে জোট করতে পারে। এমনকি যে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করেছিল সেই স্বৈরশাসকদের সাথে নিয়ে সরকারও গঠন করতে পারে। হাসিনা একবার বলেছিলেন, তিনি গ্যাস রপ্তানি করতে চাননি বলে ক্ষমতায় যেতে পারেন নি। তা ২০০০ সালের কথা। সময় গড়িয়েছে। নিশ্চই হাসিনা মত বদছিলেনে এবং ১/১১ সরকারের সকল কাজের বৈধতা দেবার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অনেকেই তখন বুঝতে পারছিলেন যে আগামীতে আওয়ামীলীগই ক্ষমতায় আসছে। বাস্তবে হয়েছেও তাই।

এবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আওয়ামীলীগের দাদাদের সাথে খালেদার যোগাযোগ করার মধ্য দিয়ে আগামীতে ক্ষমতায় আসার পথ নিশ্চিত করছে বিএনপি। অনেকেই বলছেন একথা। তা বিএনপি নেতা কিংবা বুদ্ধিজীবী হোক অথবা আওয়ামীলীগ ও বাম বুদ্ধিজীবীরা তাদের আশঙ্কা দ্বারা এটাই প্রমাণ করছেন।

এসবের মধ্য দিয়ে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনগণের মতামত তাদের কাছে খুব প্রয়োজনীয় নয়। প্রয়োজন হচ্ছে দাদা কিংবা দাদার বড় দাদাদের সম্মতি। এই সম্মতি আদায় হলেই ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব। উভয় দলের নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা তা জানেন বলেই তাদের এত লেখালেখি আর চিৎকার।

ধিক এই রাজনীতিকে। যে রাজনীতি জনগণের নামে, জনগণের মতামত নেয়ার নামে বিদেশীদের কাছে হাত পেতে ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করে। যে রাজনীতিতে জনগণকে বারবার বোকা বানিয়ে নিজেদের আখের গোছাতেই আর দাদা ও বড় দাদাদের নানা স্বার্থ রক্ষার দাসখত দিয়ে ক্ষমতায় আসতে দ্বিধা করেন না।

১৯৭১ সালে মানুস যুদ্ধ করেছিল একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক সরকার ও সংবিধানের লক্ষ্যে। স্বাধীন ভূখন্ড পেলেও এদেশের রাজনীতিবিদরা দেশকে বারবার বিদেশীদের স্বার্থে বিক্রি করেছেন। সেই বাকশাল থেকে শুরু করে জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনা, খালেদা, ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন- হাসিনা সব সরকারই একই কাজ করে গেছে।

এদের সাথে সুশীল নামক আরেকটি গোষ্ঠী যুক্ত আছে যারা এই দুই দলের কামড়াকামড়িতে ভাগ না পেয়ে নিজেরা ভাগ পেতে মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। ইউনুস কে নোবেল দিয়ে তাকে নেতা হিসেবে তৈরির চেষ্টা এখনও বিদ্যমান।

আরো আছে কিছু বামপন্থী দল যারা লাল পতাকা ধারণ করে লাল পতাকারই বিরোধীতা করে। জনগণের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার পরিবর্তে শাসকশ্রেনীর ভ্যানগার্ড হিসেবে নানা রকম ইস্যু হাজির করে। বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি, জনগণের সংবিধান কিংবা সংবিধান সভার জন্য গণঅভ্যূত্থান তারই প্রমাণ।

চার দশক পেরিয়ে আজ তাই জাতি হিসেবে এখনও আমরা গড়ে উঠতে পারি নি। পারিনি নিজেদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সার্বভৌমত্ব সম্পন্ন একটি রাষ্ট্র কায়েম করতে। আজ আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, হায়েনার হাতে না কি শিয়ালের হাতে নিজেদের বর্গা দিব নাকি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য তৈরি করব। কেউ কেউ বলবে হায়েনার চেয়ে শিয়াল ভালো। কেউ কেউ শিয়ালের চাইতে হায়েনা ভালো। হায়েনা, শিয়াল কিংবা বিড়াল কেউই রক্ষক হতে পারে না। সবই ভক্ষক। ভক্ষকদের দিয়ে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা পায় না।

আজ সময় এসেছে নিজেদের চেনার, নিজেদের জানার মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার আদায় করা। এদেশের মানুষ কখনই অন্যায় অত্যাচার বেশি দিন নীরবে মেনে নেয় নি। বারবার বুকের রক্ত ঢেলে অধিকার আদায় করেছে। আর তাতে নেতৃত্ব দিয়েছে এদেশেরই মুক্তিকামী তরুন-ছাত্র-যুবরাই। এরাই বারবার দিশা দিয়েছে এদেশের রাজনীতিকে। আজ আবার সে সময় উপস্থিত। সকল প্রলোভন, মিথ্যের জাল, বড় বড় দলের ভাওতাবাজী উন্মোচন করে দিয়ে জনগণের নেতা হিসেবে দাঁড়াতে এই ছাত্র-যুব ও তরুন সম্প্রদায়কে।

খালেদা ভগবান পাল্টাও, হাসিনা ভয় পাও কিন্তু মনে রেখ এদেশের জনগণ কোনো বিদেশীর দাসত্ব মেনে নেবে না। জাতি রুখে দাঁড়াবেই। আর সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। বরফ গলছে। তরুনদের এই নিষ্ক্রিয়তা এক বড় ঝড়ে পূর্ভাবাস। তৈরি থাকুন জনগণের বন্ধু বেশী জনগণের শত্রুরা।

জনগণই ইতিহাসের নির্মাতা। জনগণের জয় অনিবার্য।