আইন শৃংখলার উন্নয়ন , যানজট নিরসন , দুর্নীতি দমন , এগুলো কী এত অসম্ভব কাজ ? সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এত ময়লা আর এত কঠিন দাগ , যে এত ঘষা মাজা করেও উঠানো যাচ্ছেনা , একটু চেষ্টা করে দেখি কোনো ফর্মুলা বাতলে দেয়া যায় কিনা। নিম্নে বিষদ আলোচনা করে দেখি ।
আইন শৃংখলার উন্নয়ন-
জনসাধারনের চলাচলের গতি বিধির উপর নজর রাখতে প্রত্যেককে ন্যাশনাল আইডি কার্ড সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দিতে পারেন সরকার , চাকুরজীবিদের / ব্যবসায়ীদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড ( ভোটার আইডি কার্ড ) যৌথ তথ্য সংবলিত প্রাতিষ্ঠানিক আইডেন্টিটি কার্ড প্রতিটি নাগরিক বাধ্যতামূলক ভাবে নিজ নিজ পোশাকে অথবা গলায় ঝুলিয়ে রাখবেন । কে, কোথায়, কেন, কবে, কার সাথে, কিভাবে, কি উদ্দেশ্যে, যাচ্ছেন এবং কোন এলাকায় তার বাসা ? কোথায় কর্মস্থল ? কোথায় তিনি যাচ্ছেন ? এসব সব সময় জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারলেও প্রয়োজনে পুলিশ যাতে সহজেই জন সাধারনের গতিবিধি মনিটর করতে পারেন এজন্য এই আইডি কার্ড সাহায্য করবে , ধরে নিলাম একজন পকেটমার , বা চোর আইডি কার্ডে তার পেশা লিখলো চাকুরী, কর্মস্থল লিখলো টংগী, পদ লিখলো সুপারভাইজার আর প্রতিষ্ঠানের নাম লিখলো এম এম ওয়াশিং প্লান্ট , অফিসের ফোন নং লিখলো ৯৮৮৮৭০০০০ ইত্যাদি , সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত পুলিশ টেলিফোন কোড অথবা কার্ডে লিপিবদ্ধ বর্ণনা পড়ে এবং অফিস টাইমে এলিফ্যান্ট রোডে কেন ? জিজ্ঞাসা করলে , পকেটমার বলবে , "স্যার আমি ছুটিতে আছি" (মিথ্যা কথা) , পুলিশ বা তদন্তকারী ঠিকই বুঝতে পারবে যাত্রীর মিথ্যা কথন এ কারণে সহজেই এরকম ভুয়া আইডি কার্ডধারী সনাক্ত করা সম্ভব হবে , বাসে , লঞ্চে , ট্রেনে , রিক্সায় কোন যাত্রীকে আইডি কার্ড ছাড়া বহন করা হলে তার জরিমানা উভয়পক্ষকেই গুনতে হবে । তখন বন্ধ হয়ে যাবে অবৈধভাবে ঘোরাফেরাকারীদের অবাধে বিচরণ , দুষ্কৃতিকারীরা নজর বন্দী হয়ে যাবে , সেই সাথে চোর ডাকাতরাও ভালো কোন কাজ খুঁজে নিতে বাধ্য হবে । আইডিকার্ড ছাড়া কেঊ রাস্তায় বেরুবেনা , ভুয়া আইডিকার্ডধারীকে যে কেউ দেখলে চিনে ফেলবে , কারন কোন সময়ে কোন ব্যাক্তি কোন স্থানে থাকতে পারে তা কিন্তু সহজেই অনুমেয় হবে ।
যানজট নিরসন-
সব মিনিবাস , এক তলা বাস, তুলে দিয়ে দোতলা বাস চালু করবেন সরকার , দোতলা রাস্তা তৈরী করতে তো কিছু দিন সময় লাগবে তবে ব্যাক্তি মালিকানায় একজন কে একটা রুট না দিয়ে অনেক মালিককে যথাক্রমে এক দুইটি করে একই রুটে, একই আকারের দোতলা বাস চালাবার অনুমতি দিবেন সরকার , যেখানে যার বাসা সেখানে তাদের ছেলে মেয়েরা পড়বে , চাকুরীর পোষ্টিং সেখানেই হবে যেখানে চাকুরীজীবির বাসা , সেই মহল্লায়ই তারা বাজার করবেন । প্রয়োজনে যিনি চাকরী করবেন তিনি বাসা নিতে বাধ্য থাকবেন কর্মস্থলের আশেপাশেই , আর যদি একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন জায়গায় শাখা থাকে যেমন গুলশান , বনানী, বাড্ডা, কাঁচপুর , কেরানীগঞ্জ ,ও সাভার , তাহলে এলাকা ভেদে জীবন যাত্রার মান অনুযায়ী একই পদের জন্য বিভিন্ন লোকে ভিন্ন ভিন্ন পরিমান বেতন পাবেন এবং তা নিশ্চিত করবেন ঐ কোম্পানীর মালিক ,আর সরকার এসব শর্তেই তাদেরকে ব্যবসা পরিচালনার অনুমোদন দিবেন । মানুষ যদি একই মহল্লায় অফিস স্কুল কলেজ বাজার হসপিটাল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তাহলে কি আর যানজট থাকবে ? একবার ভেবে দেখি ।
দুর্নীতি দমন –
পুলিশ অনেক টাকা ঘুষ দিয়ে অমুক স্থানে বদলী হয়ে আসেন যেখানে দিনে দুপুরে মার্ডার হয় , চোর- ডাকাত বেশী , তাই কামাইও বেশী । দেখি তো এবার যদি তারা দুর্নীতি না করেন তবে পূর্বেকার ঐ ঘুষ দেয়া টাকা তারা উঠাবেন কি করে ? একটা কাজ করা যাক , সরকার তাদেরকে ডেবিট কার্ড করে দিন , এবং তাতে বর্তমান বেতনের দ্বিগুন লোড করে দিন , সব খরচ উনারা কার্ড মেরেই করুক , নগদ টাকা তাদের দরকার নেই , যেমন বাধ্যতামূলকভাবে তাদের পকেট নেই , মানিব্যাগ নেই , অনেক টাকা বেতন পান তাই তারা পাবলিকের টাকা ঘুষ খাবেননা , ঘুষ দিয়ে চাকরী নিবেন না , বদলী নিবেননা, আর সেই টাকা উঠানোর কোনো ধান্দাও করবেন না । অন্য দিকে অনেক টাকা খরচা করে অমুক সাহেব উপজেলার চেয়ারম্যান হলেন, এমপি হলেন , কমিশনার হলেন, মেয়র হলেন, নমিনেশন নিলেন টাকা দিয়ে , পার্টিকে ডোনেশন দিলেন , নির্বাচন কমিশন বেধে দিলেন কত টাকা নির্বাচনে খরচ করা যাবে , ভোটারদের টাকা দিলেন , পোষ্টার ছাপালেন , সবাইকে ফুস খাওয়ালেন, ফিল্টার ওয়ালা বিড়ি-সিগারেট খাওয়ালেন , নির্বাচিত হলেন । পরে দেখা গেল সরকার উনাদের যা বেতন দিচ্ছেন , তাতে উনাদের পোশাচ্ছে না ! উনারা যে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে নির্বাচিত হয়েছেন , সে টাকাতো তাদের উঠাতে হবে!
এ জন্য নির্বাচন নিয়েও নতুন কিছু চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে । যেমন এমন নির্বাচন হতে পারে যে নির্বাচনের তেমন কোন পয়সা খরচ নাই , নোমিনেশনের জামানত নাই , মিছিল নাই মিটিং নাই , পোষ্টার নাই । নির্বাচনের প্রচারণা হবে , ভাষন হবে , সবই রেডিও- টিভিতে, ফেইসবুকে , ইন্টারনেটে , আর ভোট হবে মোবাইল ফোনে , ব্যবস্থা নিবেন সরকার , ভালো লোকেরা ভোট পাবেন , বিনে খরচে কম খরচে এমন ব্যবস্থা , জনগনের সেবা করার সুযোগ , হাতছাড়া করবেন কয়জন ? যেহেতু কম খরচে নির্বাচন তাই জনগনের জন্য বরাদ্দকৃত টিন , গম , রিলিফের চাল , দুম্বার গোস্ত , আরবের খেজুর , কাবিখা – কাবিটা'র টাকা পিছনের দরজা দিয়ে বেচে আর কারো নির্বাচনের খরচ উঠানোর প্রয়োজন হবে না ।