জামায়াত-শিবিরের দুই লাখ সদস্যের বিশেষ স্কোয়াড!!!

টাচ মাই ড্রিম
Published : 21 Nov 2012, 11:13 AM
Updated : 21 Nov 2012, 11:13 AM

মহাজোট সরকারের জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচিতে বাধা, মিথ্যা মামলা-গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জামায়াত-শিবির সারাদেশে ২ লাখেরও বেশি সদস্যের বিশেষ স্কোয়াড গঠন করেছে। ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত এ বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় ২০ হাজার সদস্য এখন ঢাকায় অবস্থান করছে বলে সূত্রের দাবি। স্কোয়াডের সদস্যরা দল ও দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও সূত্রের দাবি। এরই মধ্যে দলটির কেন্দ্র থেকে দায়িত্বশীল নেতারা স্কোয়াড ছাড়াও রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারের মুখোমুখি অবস্থান নিতে ৫ লাখ সদস্যকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এদের পরিচালনার জন্য অর্থও সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর এ অর্থের যোগান দিচ্ছে নামে-বেনামে পরিচালিত বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, জামায়াত নেতাদের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। অনুদান হিসেবে দেয়া এসব টাকা ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন শাখা-সংগঠনের নামে ব্যাংকে জমা হওয়ার পর তা চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। গত রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করেন। এসব নথিপত্র পর্যালোচনা করে শিবিরকে তাদের কর্মকা- সংঘটিত করার জন্য কোচিং সেণ্টার, ব্যাংক এবং চিকিৎসকদের কাছ থেকে অনুদান আদায়ের এসব তথ্য পায়। নথিপত্রে দেখা গেছে, শিবির পরিচালিত রেটিনা কোচিং সেণ্টার থেকে চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখায় সংগঠনের অ্যাকাউন্টে সম্প্রতি ১৫ দিনে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। এছাড়া রেটিনার টাকা অন্য একটি কোচিং-এর নামে শিবিরের অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার ঘটনাও সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে। শুধুমাত্র শিবিরের চট্টগ্রামের একটি শাখার অ্যাকাউন্টে গত পাঁচ মাসে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৮২ লক্ষ টাকা বলে জানা গেছে। এ ঘটনা উদঘাটনের পর গোয়েন্দা সংস্থার একটি টীম চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে। তারা ঢাকায় শিবিরের কোচিং সেন্টার থেকে কোথায় কোথায় টাকা যায় তার তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা একটি বিশেষ ব্যাংকের রাজধানীর বিভিন্ন শাখা, গাজীপুর ও সাভার শাখায় লেনদেনের নথিপত্র পেয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এ কারণে শিবির নিয়ন্ত্রিত কোটিং সেন্টারগুলোতে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। পিছনে যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। আত্মসমর্পণ করবে না জামায়াত। মরতে হয় লড়াই করেই মরবো। রাজনীতি মাঠে লড়াই করেই জামায়াত টিকে থাকতে চায়। জামায়াত একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। দেশে একমাত্র গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল জামায়াত। যে দলটি তাদের নেতা নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক উপায়ে।

আইন শৃংখলা বাহিনীর মতে চলতি মাসে রাজধানীসহ সারাদেশে বেশ কিছু স্থানে হামলা করেছে জামায়াত। দলটির নেতাকর্মীদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ আহত হয়। আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদের গাড়ি বহর হামলা চালানো হয়েছে। আগামী দিনেও তার চেয়ে আরো বড় ঘটনা ঘটানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে।

সূত্র জানায়, আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ঢাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এ বাহিনীর ২০ হাজার সদস্যকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াত শিবিরের এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কোয়াডকে মোকাবেলা করতে ঢাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর ২০ হাজার সদস্য সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। শুধু তাই নয়, জামায়াত শিবিরের শীর্ষ ও যুব নেতাদের গতিবিধির ওপর কড়া নজর রাখছে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। জামায়াত-শিবিরের এ অবস্থা বুঝতে পেরেই বড় ধরনের নাশকতা এড়াতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও সংগঠনটির কোনো মিছিল বের হতে দিচ্ছে না পুলিশ। এদিকে জামায়াত শিবিরের ব্যাপারে হিংসাত্মক কর্মকা- প্রতিহত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের অবস্থান গ্রহণের পর জামায়াত শিবিরের ঝটিকা আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষে মহল্লায় মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে। জামায়াত শিবিরের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জনমত গঠনেরও চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে আরো দুই লক্ষাধিক সদস্যের স্কোয়াড প্রস্তুত করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের ৩০ হাজার, রাজশাহী ৩০ হাজার, সিলেটে ২০ হাজার, বৃহত্তর খুলনায় ১২ হাজার, রবিশালে ১০ হাজার, রংপুরে ১০ হাজারের বিশেষ বাহিনীর সদস্যকে তৈরি করা হয়। ঢাকায় যাদের আনা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় করার জন্য এরা প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানা জানা গেছে। শুধু নিজের শক্তি ছাড়াও বহিঃবিশ্বের সঙ্গে আরো সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য, চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। শিবিরের একটি সূত্র বলছে, লন্ডনসহ পশ্চিমা বিশ্বে বিভিন্ন ডিগ্রি নিতে যাওয়ার প্রায় দুই হাজার শিবির কর্মী বহিঃবিশ্বে আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগে কাজ করছে। এক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধ মামলায় আটক জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর লন্ডন প্রবাসী দুই ছেলে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে গ্রেফতার হওয়া মীর কাশেম আলীর নিয়োগ করা একাধিক লোক কাজ করছে। আর এ কারণে প্রভাবশালী একটি দেশের ঢাকায় অবস্থানরত রাষ্ট্রদূত সংলাপের মাধ্যমে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করার প্রস্তাব করেছেন বলে সূত্রের দাবি।
জাতীয় সংসদে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জোরালো বক্তব্য দিয়েছে মহাজোটের এমপিরা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য হলে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়াও ঘাদানিক, সেক্টর কমা-ারস ফোরাম জামায়াতের সহিংস কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে মাঠে নেমেছে এবং দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক সময়ের সহিংস কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, এটা তাদের (জামায়াত) নিজস্ব কর্মসূচি। এটাকে বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোটের উপর চাপানোর অপচেষ্টা করছে সরকার। সরকার তাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে দিচ্ছে না বলেই বিকল্প ভাবে তারা মাঠে নামছে বলেও দাবি করেন তিনি। এ ব্যাপারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম একটি অনলাইন মিডিয়াকে বলেন, জামায়াত শিবির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছে। দেশে একটি অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই পরিকল্পিতভাবে পুলিশ আমাদের উপর হামলা চালাচ্ছে। স্কোয়াড বাহিনী বুঝিনা, সরকার এই বিতর্কিত বিচার বন্ধ না করলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবো।

সুত্রঃ স্টাফ রিপোর্টার :

অনলাইন সংস্করণ
ঢাকা, বুধবার, ২১ নভেম্বর ২০১২, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪১৯, ৬ মহররম ১৪৩৪