রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের উচিত পুশব্যাক করা

রিয়েল আবদুল্লাহ আল মামুন
Published : 5 Sept 2017, 05:37 AM
Updated : 5 Sept 2017, 05:37 AM
মানুষ মাত্রই মানুষের জন্য। এ নিয়ে কত যে গান রচিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। মানুষ মানুষের জন্য গানটি গেয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তো বিখ্যাতই হয়ে রয়েছেন।
কিন্তু সে মানুষ যদি অন্য মানুষের ক্ষতির কারণ হয় তাহলে অবশ্যই সে মানুষ সহানুভূতি পেতে পারে না। এদের মধ্যে আছে চোর, ডাকাত, ধর্ষণকারী, হত্যাকারী প্রভৃতি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পটে আছে উদ্বাস্তু, বিশেষ করে মায়ানমার থেকে আগত উদ্বাস্তুদের দঙ্গল এখন তাদের অন্তর্গত।
এরা মানুষ হিসেবে ভয়ানক অসভ্য, মুসলিম নাম-ধারী এদের অধিকাংশই মোনাফেক শ্রেণীর। এরা আমাদের দেশে আশ্রয় পেয়ে অতীতের সব ভুলে গেছে। তাদের পরিস্থিতি কি ছিলো তারা সব ভুলে গেছে। বাঙালি আদর্শ ও সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। আর আমরা বলছি হিউম্যান গ্রাউন্ডের কথা তথা মানবতার কথা। আর তা বলে, আমরা আমাদের নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই ডেকে আনছি।
 
.
এদের জাতিগত বিভেদ পঞ্চাশোর্ধ বছর কালের। এই সমস্যা জিইয়ে রেখেই তথা এই সমস্যাকে কেন্দ্রীভূত রেখেই অংসাং সুকী নোবেল পান! তখন মানবতা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় বলতে পারেন কি? যখন সেনাবাহিনীর মদদে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয় তখন মানবতা কোথায় থাকে? আর মানবাধিকারের গলা উচিয়ে চলা কর্মীগন যখন শিয়ালের গর্তে লুকিয়ে থাকেন তখন মানবতা কোথায় থাকে? যদিও এই প্রশ্নগুলো থেকে যায় তারপরও কথা থাকে। এইসব মানবতা বা মানবাধিকার মায়ানমারের জন্য। আমাদের দেশের জন্য নয়।
প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার একটি আরাকান সভ্যতা-এখানের অধিবাসীদের বলা হয় রোহিঙ্গা। কথিত আছে এরা নাকি মুসলমান- কোন সূত্রে তাও ভাবনার বিষয়। আমার প্রশ্ন হলো মায়ানমারে সাতটি প্রদেশের মধ্যে একটি হলো আরাকান আর বাকী ছয়টিতে কি মুসলমান নেই। মানুষ বাস করে না। উনাদের কি আরাকানের মানুষদের জন্য দয়া হয় না? যেটুকু দয়া বাংলাদেশের মানুষের হয়? মায়ানমারের দাবী এরা নাকি বহু বছর পূর্বে অত্র চট্রগ্রাম-পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চল থেকে গিয়ে সেখানে বাসা বেঁধেছে, তাই তাদের জায়গা দেয়া যাবে না। এটাই নাকি কারণ যার জন্য আমাদের দেশের মুসলমানদের দরদে উতলানো বা ভেজান এই মুসলমান ভাইদের উপর অত্যাচার করছে। হানাহানি মারামারি খুন হত্যা ধর্ষণ সব করে এদের উদ্ভাস্তু বানিয়ে দিচ্ছে। আসলে কি তাই?
আমি যতদূর জানি এরা এই অঞ্চলের স্বাধীনতা চায়। যার জন্য 'আরসা' গঠিত। এরা নিয়মিত একটা না একটা হামলা সেনাবাহিনীর তথা আইনশৃংখলা বাহিনীর উপর করে যাচ্ছে। আর মিশে যাচ্ছে সাধারণের ভেতর, যা মায়ানমারের শান্তি বিঘ্নিত করছে। আর মায়ানমার সরকার এদের স্বাধীনতা দাবী মেনে নেবে না এটাই স্বাভাবিক। একটি সার্বভৌম দেশের খন্ডাংশ যখন স্বাধীনতা দাবী করে তখন কে দিতে চায়? কিন্তু তাদের এই দাবী মায়ানমারের উন্নয়নের ও সুযোগ-সুবিধার প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যার জন্য আজ তাদের এই অবস্থা।
যেমন ১৯৭১ সনে আমাদের যৌক্তিক দাবীমূলে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা চাইলে পাকিস্তান সরকার যে ব্যবহার আমাদের সাথে করেছিলো। তাই-ই এখন সেখানে হচ্ছে। কিন্তু আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলাম। বলে আমাদের দেশ থেকে উদ্ভাস্তু ভারতে যেতে পেরেছিলো। যা আমরা ফিরিয়েও নিয়ে এসেছিলাম উইথ ইন এ শর্ট টাইম। তাদের দাবী কিন্তু যৌক্তিক ছিলো না। তবে এখন যদি তারা সংগঠিত হয়ে থাকতো তা হতো ভিন্ন কথা।
আমাদের পানি ফেলুয়া বাঙালিদের অলিন্দের ভেতর থাকে মানবতা। তাদের জন্য মায়ার সীমা নেই। কোন দেশে স্বাধীনতা ঘোষণা না হলে, সে দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ না লাগলে, সে দেশে কোন উদ্ভাস্তু হতে তৈরি হতে পারে না। তারপরও মানবতার কথা বিবেচনা করে পাঁচ লক্ষাধিক উদ্ভাস্তুর জায়গা সংকুলান বাঙালিরা করেছি। বর্তমান সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। যদিও বিভিন্ন সরকারের আমলে এদেশে উদ্ভাস্তু এসেছে।
বাংলাদেশের প্রকৃত জনসংখ্যা কত তা আমরা জানি না। দশ বছর আগে ছিলো পনের কোটি তো বর্তমানে আঠারো কোটি তো হবেই। জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু ভূমি বাড়ছে না। তার উপর উদ্ভাস্তুদের চাপ। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। সরকার যতই চাপা মারুক, বুঝতে হবে যে এদেশ এখনো উন্নয়নশীল দেশ। নিন্ম মধ্যম তো দূরের কথা মধ্যমের "ম'' পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি। যদি পারতো জীবন-যাত্রার মান আগের অবস্থায় রয়ে যেতো না। মানুষের চরিত্রের দিক কিছুটা হলেও পরিবর্তন হতো। খুন-ধর্ষণের মাত্রা কিছুটা হলেও কমতো। এ অবস্থায় আরোও আরোও উদ্ভাস্তু কিছুতেই অনুপ্রবেশ করতে দেয়া যায় না। কারণ তারা যাবার জন্য এখানে আসেনি। হয়তোবা তারা যাবেও না। আর আমাদের মায়া তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মায়াময়ী আমরাই তাদের প্রমাণ করছি এরা আমাদের অঞ্চলের নইলে এতো মায়া লাগে কেন? আর আমাদের মায়ার জন্যই এরা কেবল আমাদের দেশে আসতে চায়। অন্যদেশে যেতে চায়না। আর আমরা তাদের মায়া করে আমাদের দেশেই ঢুকাচ্ছি। যার জন্য বর্হিবিশ্বে নজর এরা পাচ্ছে না। মানবতা লঙ্ঘিত হলেও রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে মায়ানমার।
এই রোহিঙ্গাদের ন্যায্য দাবী পাইয়ে দিতে আমাদের উচিত তাদের জায়গা না দেয়া। যে পাঁচলক্ষ এদেশে আছে এদের পুশব্যাক করা। আর তা মিডিয়ার সম্মুখে তুলে ধরা। যাতে বিশ্ববাসীর বড় মোড়লবৃন্দ মায়ানমারের স্টুপিড সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। বিবেক এদের নাড়া দেয়।
 
.
রোহিঙ্গারা আজ এদেশে থেকে কোন পরিশ্রমের কাজ করছে না। সহজ আয়ের পথ হিসাবে এরা অলরেডি সামাজিক অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। এদের সঙ্গে মেলামেশা না করলে বুঝা যাবে না এরা এই জাতিটা কি ধরনের দুর্বৃত্ত মানসিকতার। এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ একটি ভয়ংকর সমস্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এরা ভীতু জাতি, কারণ এরা জঙ্গীবাদ পছন্দ করে। সহিংসতা পছন্দ করে। রুখে দাঁড়ায় না। এদের সমস্যা সমাধানের সামনে কোনো সহজ পথ রবে না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য সার্বিক লড়াই শুরু না করে। সেই লড়াই হবে অব্যাহত লড়াই এবং নিজেদের অস্তিত্ব টিকে রাখার লড়াই।
বাংলাদেশ আরও দশ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় দিলেও এর সমাধান হবে না। এরা একটা সময় আসবে চট্রগ্রামের স্বাধীনতা চেয়ে বসবে। তখন আর কোন পথ থাকবে না আমাদের্। কারণ তাদের সংখ্যা বাড়বে, তাদের মেরে ফেলাও যাবে না। আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ জঙ্গীদের কারণে (যাদের রুখে দিতে সরকার প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে) তারা আরোও প্রশিক্ষিত হবে। ফলে তাদের উৎখাতের আমাদেরও রক্তপাতে নামতে হবে না হলে পার্বত্য চট্রগ্রামের স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ বৈশ্বিক সূত্রমতে-পৃথিবীর সকল নাগরিকের বেঁচে থাকার জন্য বসবাসের অধিকার আছে। আমরা কি চাই ত্রিশলক্ষ শহীদের রক্তে যে দেশ পেয়েছি তা আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ুক? পাকিস্তানী আলোয় উদ্ভাসিত দরদী ভায়েরা আমার, আপনারা জেনে রাখুন- এই দেশে যারা আসে তারা আর যেতে চায় না। বাংলা মানুষের মন কেড়ে নিতে পারে সহজেই। আপনাদের জন্য উদাহরণ- পাকিস্তান তাদের বর্ডারে তালেবানদের আশ্রয় দিয়ে নিজেরা কতটা ভুক্তভোগী তা দেখতে পাচ্ছেন কি? কারণ রোহিঙ্গা ভায়েরাও জঙ্গিমদদে আশ্রিত। এদের বিগত কয়েকমাসের কর্মকান্ড লক্ষ করলেই তা দেখতে পাবো। এদের বেশির ভাগকেই জঙ্গীতে পরিণত করা হচ্ছে।
 
.
তাহলে আমাদের করণীয় কি? হ্যাঁ, যারা নো ম্যানস ল্যান্ডে এসে আশ্রয় নিচ্ছে এদের আর আশ্রয় না দেয়া। এদের পুশব্যাক করা। মিডিয়ার বারবার প্রকাশ করা। জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যাতে মিয়ানমার সরকার সৃষ্ট রক্তপাত বন্ধে পদক্ষেপ নেয়। প্রকৃত সত্য জানতে দেয়, বহিরাগত সাংবাদিক ঢুকতে দেয়। উগ্রবাদি সংগঠন 'আরসা' যদি সত্যই মায়ানমারের জন্য হুমকী হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া। অন্যদেশ বিশেষ করে ভারত আর চীনও যাতে উদ্ভাস্তুদের কিছু হলেও নেয় তা দেখা বা তার জন্য লবিং করা। মানবতা সবার সবদেশের সব মানুষের জন্য। একা বাংলাদেশ কেন তার দায়ভার নেবে।
রক্তপাত বন্ধ হোক। আর রাখাইন মুসলমান বা অন্য যে ধর্মেরই হোক তার জন্য একটু আশ্রয় হোক। তাদেরকে তাদের পৈত্রিকভূমি ফিরিয়ে দেয়া হোক।
আসুন এই স্লোগান তুলি-
আর চাইনা উদ্ভাস্তু এই দেশে
ফিরিয়ে নাও ফিরিয়ে নাও
ফিরিয়ে দাও তাদের ভূমি
শাসক তোমায় দিতে হবে হেসে হেসে।
আমরা চাই না ওভার পপুলেটেড এই দেশে ভয়ংকর কোন বিপর্যয় নেমে আসুক। এখনই সমস্যা গুলো ঘেটে দেখা হোক।
১. রাখাইন অঞ্চলে কি কোন গোপণ প্রজেক্ট তৈরি হচ্ছে কি না? বা হবার ব্যবস্থা হচ্ছে কিনা?
২.এদের স্বাধীনতা দাবী কি সত্যই অযোগ্য কি না?
৩.আরসা কি সত্যই উগ্রবাদিতা মানছে কি না?
৪.রাখাইনরা বাংলাদেশের থেকে ফিরে যাচ্ছে কি না বা ফিরে যাচ্ছে কবে?
৫. মায়ানমার কি সত্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে কি না?
৬.কবে বাংলাদেশ থেকে রিফুজিদের সরিয়ে নেয়া হবে?
৭.রাখাইনরা ফিরে গেলে পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্ট হবে না নিশ্চিত করা।
৮. পুশব্যাক কতটা জরুরী।
৯।দেখতে হবে আরসা এর এন্টি কোন বাহিনী আছে কিনা যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। যারা চায় না আরাকানের মানুষ শান্তিতে থাকুক।
তাহলে যদি কিছুটা শান্তি ফিরে আসতে পারে। আমরাও চাই এই অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসুক। তবে কোন শক্তির কাছে বাংলাদেশ মাথানত করুক চাই না। অতিদ্রুত রাখাইন সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশের মানুষ।