বাঁকা চোখে: রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু কথা

রিয়েল আবদুল্লাহ আল মামুন
Published : 25 Jan 2018, 01:31 PM
Updated : 25 Jan 2018, 01:31 PM

বিপন্ন এই সভ্যতা সমাজ সংসারে বেঁচে থাকার জন্য বর্তমানে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক তা হলো নিরাপত্তা। বিশ্ব সৃষ্টিলগ্ন থেকেই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ সবচেয়ে বেশি মানুষের হাতেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে। মানুষের বেঁচে থাকতে হলে বা নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে চাই সুস্থ্য ও সুন্দর নিরাপত্তা। বর্তমান এই বিশ্বে সমসাময়িককালে এই দক্ষিণাঞ্চলে বা দক্ষিণ এশিয়ায় যে জাতিটি সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনাতায় ভুগে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে সে জাতিটি হলো রাখাইন জাতি বা রোহিঙ্গা জাতি।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। চুক্তির আওতায় আগামী দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হবে বলে বলা হয়েছে। খুব শিগগিরই এ প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তবে বলা হয়নি তাদের নিরাপত্তা কিভাবে হবে।

রাখাইন বিধ্বস্ত অঞ্চলকে বলা যায় অঘোষিত যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চল। মানবজাতির ইতিহাসে আধুনিক সময় কালে সবচেয়ে জঘন্যতম মানবহত্যার ইতিহাস হলো সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে ঘটে যাওয়া রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ। পুরো রাখাইন অঞ্চলের কোথাও কোন জনবসতির চিহ্ন নেই কেবল যারা এই রোহিঙ্গাদের হত্যার সাথে জড়িত ছিলো তাদের ছাড়া। এখানে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা ছাড়া তাদের সেখানে পাঠানো মানে তাদের সরাসরি আবার আগুনের নরকে নিক্ষেপ সমতূল্য বলে আমি মনে করি।

তবে আশার বিষয় হলো-রাখাইনদের নিরাপত্তায় তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা। যদিও তারা এতদিন অর্থাৎ হত্যাযজ্ঞ চলাকালে রহস্যজনক কারণে পুরোটাই নিশ্চুপ ছিলো। আশার কথা এই যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা।

উনারা সোচ্চার কন্ঠে বলেছেন, এ পরিকল্পনার অধীনে জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া ত্রাণ সহায়তা সংস্থাগুলো লাখ লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। (রয়টার্স)। একথা যে সত্য, যেখানে এতো হত্যাযজ্ঞ সেখানে তারা যে নাগরিক সুবিধা পাবে তা ভাবাটাই চির বোকামী।

অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সংস্থা তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলে তাদের নির্যাতন, নিরাপত্তাহীনতা এবং খাদ্যাভাবে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা রোহিঙ্গাদের রক্ষার বদলে বিপন্ন করবে। কারণ যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই সেখানে এই বিষয়গুলো যে মায়ানমার সরকার দেখবে না- তাই সত্য। কারণ তারা রোহিঙ্গা ফেরত নেবার কথা বলেছে তাদের জীবনের নিরাপত্তা ও চাহিদার কথা  তারা বলেনি। যা রোহিঙ্গা ফেরত নেবার আগে খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন বোদ্ধা মহল।    

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ওই চুক্তিও স্থগিত করার পক্ষে মত দেয় সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, এ প্রত্যাবাসন চুক্তির ফলে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং স্বার্থ হুমকির মুখে পড়বে।  

এ বিষয়ে বিবিসি কর্তৃক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে , বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন- যে সব রোহিঙ্গা ফিরে যাবেন তারা কোথায় থাকবেন এবং সেখানে তাদের নিরাপত্তা কতটুকু সেটাও দেখা হবে। কিন্তু তার আগে চাই নিশ্চয়তা। দেখা হবে বললে তা সঠিক বলা হয়না বলে আমি মনে করি।

তার সাথে আমিও বলি- রোহিঙ্গা ফেরত নেবার আগে জাতিসংঘের এ চুক্তিতে হস্তক্ষেপ আশু ও জরুরী বলে মনে করছি। আগে চাই বিধ্বস্ত এই অঞ্চলে জীবনের নিরাপত্তা। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ও চিকিৎসার নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে পাঠানো যাবে না এদের। মানবতার খাতিরে বাংলাদেশ যেমন এদের জায়গা দিয়েছে, আরেকটু সময় ক্ষেপন করা জরুরী মানবতার খাতিরেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মমতায় তাদের এদেশে স্থান করে আশ্রয় দিয়েছেন তার সফলতা আসতে হবেই। তার জন্য তাড়াহুড়ো করা যাবে না।

বিপন্ন মানবতাকে মুঠোয় নিয়ে তাদের বাঁচাতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে প্রভাব অবশ্যই পড়বে। বাংলাদেশকে ভাবতে হবে। এদের ফেরত পাঠানো হলে এরা যেনো ঘটনার পূনরাবৃ্ত্তিতে আবার এ  দেশে ফিরে না আসে।  শুভ হোক রোহিঙ্গাদের জীবন এবং সচল হোক বাংলাদেশের চলমান জীবন।