পাথুরে নদীর জলে (থানচি ট্যুর- দ্বিতীয় পর্ব)

রেজাউল মাসুদ
Published : 15 March 2016, 06:55 PM
Updated : 15 March 2016, 06:55 PM

 বান্দরবান এমনই একটা জেলা যেখানে একবার এলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যায়,বারবার আসতেই হয় এ ভালবাসার কাছে। বান্দরবান বেড়াতে আসা কোন সাধারণ বিষয় নয়, লাইফ টাইম এক্সপেরিয়েন্সও একটা। এখানকার মানুষ, পরিবেশ, ভাষা,আচার ব্যবহার, ঘরবাড়ী, নদীনালা, গাছপালা সবই মুগ্ধ করবে, ঘুরতে ঘুরতে যে কেউ হয়ে যাবে অদ্ভুৎ সুন্দর প্রকৃতির একটা অংশ। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিশাল ভান্ডার নিয়ে বসে আছে অপরূপ এই বান্দরবান।

মাঝির সাথে কথা বলতেছিলাম, ওরা জানায় স্রোতের বিপরীতে নৌকা  নিয়ে যুদ্ধের মত চলা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, সাঙ্গুতে চলতে হলে এর চেয়েও অনেক বড় ঝুকি বাঁধা বিপত্তি একের পর এক বিপদ অতিক্রম করতে হয়। নৌকাগুলোও তাই আলাদা নকশা করে তৈরী। এজন্যই সাঙ্গু বাংলাদেশের অন্য সকল নদী থেকে আলাদা আর বৈচিত্র্যময়। নদীর দুপাড়েই কেবল সবুজ আর সবুজ, কোথাও শুধুই বাদাম ক্ষেত, আবার কোথাও তামাক অথবা কেবলী রবি শস্য, তারই উপরে পাহাড়ের ভাজে ভাজে আদিবাসী জনগোষ্ঠী পাড়া, সহজ সরল আদিবাসী ছেলেমেয়েগুলো আমাদের দিকে অদ্ভুৎ আর উৎসুক দৃষ্টি নিযে দেখছিল মনে হচ্ছিল তাদের চোখে আমরা শহুরে বাবু, একটু ইশারা আর হাসিতে ওদের বিশ্বস্ত আর অকৃত্রিম চাহনীগুলো বেশ মায়া লাগছিল।

সাঙ্গু নদী কোথাও গভীর কোথাও হাটু পানি, বলার অপেক্ষা রাখেনা পুরো নদীটাই পাথুরে। সাঙ্গু বেয়ে যত সামনে যাচ্ছি, টের পাচ্ছি নদীও গ্রাজুয়েলী উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। বড় পাথরে সাঙ্গুর উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ২২০ ফুট জেনেছিলাম। স্রোতের গতিবেগ এখনও অনেক বেশী,স্রোতের সাথে পানির গর্জনও বিশাল এককথায় ভয়ঙ্কর,লাবিবার জন্য তাই লাইফ জ্যাকেটও নিয়েছিলাম। শীতকালে পানি অসম্ভব টলটলে আর স্রোতও তুলনামূলক কম, কিন্ত বর্ষায় রূপ নেয় মারদাঙায়, তখন প্রচন্ড স্রোতে থাকা পানির নীচে অদৃশ্য পাথরে ধাক্কা লেগে অনেক সময় নৌকা উল্টে দুর্ঘটনা প্রাণহানিও ঘটে। তারপরও বহমান সাঙ্গুর পথ বান্দরবানের প্রাণ।

আমাদের নৌকা তিনটা সময়ের ঘড়ি ধরে প্রচন্ড বেগে ছুটে চলছিল, রেমাক্রীতে এগারোটা নাগাদ পৌছে যাই, এখান থেকে পাথুরে রেমাক্রী খাল ধরে আড়াই ঘন্টা পাহাড় নদী ঝরনা পেরিয়ে পায়ে হাটার রোমাঞ্চকর পথেই এক অদ্ভুৎ স্বর্গরাজ্য নাফাকুমে পৌছে যাব। আধা ঘন্টা সেখানে অবস্হান করার প্লান আছে, গোসলও করতে পারি। আবার একই পথে রেমাক্রীতে ফিরে বিকালে চারটার মধ্যেই নৌকাযোগে থানচির পথে যাত্রা করতে হবে, কেননা সন্ধ্যের আগেই ভয়ঙ্কর আর রিস্কি রাজা পাথর এলাকা অতিক্রম করতে না পারলে রেমাক্রীতে হয়তবা থেকেই যেতে হবে।

 

 

চলবে……