জেলা প্রশাসক শব্দটির প্রতি এতো মোহ কেন?

রেযাউল্ক্রিমবাবুল
Published : 9 July 2012, 10:10 AM
Updated : 9 July 2012, 10:10 AM

'জেলা প্রশাসক' আহ! কি অভিজাত একটি নাম। কি মোহময় একটি শব্দ। কি অলৌকিক ক্ষমতাবান একটি পদমর্যাদার নাম! সব মন্ত্রনালয়ের, সব বিভাগের সব কাজের তিনিই সর্বেসর্বা। যেন আরেকজন মূর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

দেশ স্বাধীন হয়েছে চল্লিশ বছর পেড়িয়ে গেলো। ব্রিটিশরা গেলো পঁয়ষট্টি বছর আগে। একটি মুক্ত স্বাধীন জাতি হিসাবে আমরা নিজেদেরকে নিজেরা শাসন করি। বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি একটি গন-প্রজাতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর দাড়িয়ে আছে। সকল ক্ষমতার মালিক এখানে জনগন।

জনগন এখানে নিজেদের প্রতিনিধির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কিংবা সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে। একটি প্রতিনিধিত্বশীল ক্ষমতা কাঠামোর দ্বারা জনগনের ক্ষমতা কার্যকর থাকে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার নামের প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরে স্থরে জনগনের এই প্রতিনিধিত্ব মূর্তিমান হয়ে উঠে। সরকার, মন্ত্রিসভা, জাতীয় সংসদ এসব প্রতিষ্ঠান জনগনের দ্বারা নিয়োজিত হয়ে রাষ্ট্রের কেন্দ্রে কার্যকর থাকে।

কিন্তু জনগনের দোর গোড়ায় থাকা ইউনিয়ন পরিষদেও জনগনের প্রতিনিধিত্ব বিদ্যমান। এর ওপরের থেকে কেদ্র পর্যন্ত আছে একটা জগাখিচুড়ি মার্কা প্রশাসন। আছে একটা জোড়াতালির উপজেলা। তার ওপরেই সর্বময় ক্ষমতা সুবিন্যস্ত আছে একজন ডিসি (ডেপুটি কমিশনার) অথবা জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ে।

বাস্তব অর্থে একজন জেলা প্রশাসক তাঁর জেলার সর্বময় ক্ষমতা ও কতৃত্ব প্রয়োগ করে থাকেন। এই যেন এক আধুনিক সামন্ত প্রভু, ঔপনিবেশিক বড় লাট। জনগনের প্রকৃত ক্ষমতা প্রয়োগ হচ্ছে সিভিল সারভেন্ট বা জনতার কর্মচারী বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দ্বারা।

বাঙালীর মন কি এখনো পড়ে আছে সেই সামন্ত ঔপনিবেশিক কাঠামোর মধ্যে? সবচাইতে মেধাবী, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্ররাই সিভিল সারভেন্ট হয়ে প্রজাতন্ত্রের সেবার শপথ নিয়ে চাকুরিতে যোগদান করে থাকেন। তারপর সেই বাছাইকৃত উচ্চশিক্ষিত ক্যাডারগুলো আধুনিক, সেবামুলক, গণমুখী, কল্যানমূলক জনপ্রশাসন ব্যবস্থার কথা ভুলে গিয়ে নিজেরা সামন্ত প্রভুর মতো প্রশাসন পরিচালনা করেন।

হয়ে উঠেন জেলা প্রশাসক, বড়লাট। উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম সব কিছুই তাঁর অধীন প্রতিষ্ঠান। তিনিই সব কিছুর হর্তাকর্তা বিধাতা। সরকার বিনা বাক্য ব্যয়ে তাঁর ওপর সব কিছু অর্পণ করে, তার মাধ্যমে সব কিছু প্রয়োগ করে নির্ভার হয়। আর এই পদ লাভের জন্য শুরু হয় রাজ্যের তামাশা। সে আরেক কাহিনী।

জনগনের ক্ষমতা কিভাবে আমরা প্রকৃত অর্থে, বাস্তব সম্মত উপায়ে, দৃশ্যমান ভাবে, কার্যকর ভাবে জনগনের কাছেই ফিরিয়ে দিতে পারি তার কোনও ভাবনা এই স্বাধীন গণ প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশে কি আছে?