গ্রাম-শহর শিক্ষা বৈষম্যঃ বিস্ফোরণের অপেক্ষায়

রেযাউল্ক্রিমবাবুল
Published : 21 May 2012, 10:34 AM
Updated : 21 May 2012, 10:34 AM

বেশ ক'বছর ধরে পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর বার্ষিক প্রতিবেদনে একটা উদ্বেগ জনক তথ্য বার বার উঠে আসছে; সরকারি ক্যাডার সার্ভিসে শহর এবং গ্রাম/মফস্বল থেকে আসা প্রাথীর ব্যাবধান আশংকা জনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ক্যাডার ছাড়াও অন্যান্য সরকারি চাকুরীতে নিয়োগের অবস্থাও একই রকম। বেসরকারি চাকুরীতে নিয়োগের তথ্য এমনিই হবে। যদিও তেমন কোনও পরিসংখ্যান সম্পন্ন প্রতিবেদন কেউ তৈরি করে না। করলেও প্রচার পায় না।

কিন্তু এক সময় সচিবালয়ে ডজন ডজন অফিসার ছিল, যারা ছিল গ্রাম/মফস্বলের স্কুল/ কলেজ গুলো থেকে উঠে আসা মেধাবী ছাত্র; যাদের গাঁয়ে মাটির গন্ধ ছিল; যাদের মনে সেই মাটির প্রতি নিষ্পাপ প্রতিজ্ঞা/ কমিটমেণ্ট ছিল। এখন কমতে কমতে এই সংখ্যা দু'একজনের মধ্যে ঠেকেছে।

আমরা সবাই জানি এসব অসম শিক্ষা ব্যাবস্থার ফল। আমরা এও জানি জাতিয় শিক্ষা কারিকুলামে সর্ব স্থরে বাঙলা চালুর ফলে সাধারন গ্রামের স্কুল/কলেজ গুলো থেকে আসা ছাত্ররা শহরের ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতায় পেড়ে উঠে না। শহরের ছেলেরা পড়ে ইংরেজি প্রধান/ ইংরেজি ভার্সন/ ইংরেজি মাধ্যমের ভাল ভাল অবকাঠামো সমপন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। আর গ্রামে নাই কোনও কেজি, নার্সারি, টিউটরিয়াল, স্কলাসটিকা, এ লেভেল, ও লেভেল। আছে হাঁটু ভাঙা টুলের ছাপরার স্কুল…

…বুড়িগঙ্গার দুই তীর…

হেডমাষ্টারের কাঁধে চড়ে ভাঙ্গা সাঁকো
পেড়োয় গর্বিত সাইকেল।
ছাপড়ার ঘরবাড়ি মাড়িয়ে
রাস্তায় জড়ো হওয়া কাদা হাসে
সাইকেলের চাকা আর
মাষ্টারের জামার পরশে।

মাটির মেঝেতে হাটু ভাঙ্গা টুলের ইসকুল
টিনের ছিদ্রে আল্লা দেখে ভরসা পায়।
অশথের ছায়া আলো খোঁজে সাড়ি বেঁধে রোজ ভোরে
সোনার বাঙলা গাওয়া বাচ্চাদের চোখে।
সাঁঝের আগেই নেমে আসা আঁধারের খেদ মেটে
চারিদিকে মাটির পিদিমের ছায়াদের পেয়ে।

প্রতিদিন বিয়েবাড়ি বুড়িগঙ্গার এপাড়ে
ঝিকিমিকি লাল নীল বাত্তি চেয়ে দেখে
সাঁঝের ফাপা পেটের কেরোসিনের চেরাগ।
খেয়াঘাট পেড়িয়ে শহরের ওই ঝলমলে স্বর্গে
ঘুড়ে বেড়াবার লোভ বেড়ে ওঠে দিনে দিনে
ওপাড়ের ছাপড়াঘর, হাটুভাঙ্গা টুল আর মাটির পিদিমের।

এমনি একদিন গ্রামের মাটির পিদিম আমাদের আলোক-উজ্জল শহরকে জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে ধংস করে দিতে পারে, যদি এই বৈষম্য আমরা সময় থাকতে দূর করতে না পারি।