শিল্পের সুফল কতটা পাচ্ছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা?

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ
Published : 4 April 2018, 01:01 AM
Updated : 4 April 2018, 01:01 AM

আলমগীর কবির বলেছিলেন, "বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই সেই কয়েকটি দেশের মধ্যে থাকবে যেখানে চলচ্চিত্র টিকে থাকবে, যদিও অন্য অনেক দেশে তা জাদুঘরে নির্বাসিত হবে।"

চলচ্চিত্র একটি দেশের সব থেকে বড় গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।  এই মাধ্যমে নিজস্ব সংস্কৃতি আর জাতি সত্তাকে তুলে ধরার সাথে সাথে সৃষ্টিশীল চিন্তাগুলো প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। তাছাড়া আন্তজার্তিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করে। এই চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয় সকল ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। তাই চলচ্চিত্রকে বাদ দিয়ে কোনো দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কল্পনা করা যায় না।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে।  এফডিসিকেন্দ্রিক ঢাকাই চলচ্চিত্র হাঁটি হাঁটি পা করে পার করে ফেলেছে কয়েক দশক।  এই কয়েক দশকে অসংখ্য ছবি নির্মিত হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারনে এই মাধ্যমটি এখন পর্যন্ত শিল্প হয়ে উঠতে পারেনি।  যদিও ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে 'শিল্প' হিসেবে ঘোষনা দেন।  তারপর মে মাসের তিন তারিখ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জানানো হয়, প্রতি বছর এপ্রিলের তিন তারিখ জাতীয়ভাবে চলচ্চিত্র দিবস পালন করা হবে।

এরপর ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছরের এপ্রিলের তিন তারিখ চলচ্চিত্র দিবস পালন করা কয়।  বিষয়টি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের জন্য আনন্দের বটে।  কারণ তারা চলচ্চিত্রে শিল্পের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন।  এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, আসলে কি চলচ্চিত্র শিল্প ঘোষনার ফলে শিল্পের কোন সুবিধা পাচ্ছেন নির্মাতা বা প্রযোজকরা? প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে অবশ্য জেনে নিতে হবে, শিল্প হিসেবে চলচ্চিত্রের কী কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা রয়েছে?

এখানে প্রধান দু'টি বিষয়ে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কথা। প্রথমত, ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ। দ্বিতীয়ত, কর অবকাশ সুবিধা। চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষনার এই আট বছরের চিত্র যদি দেখি তাহলে স্পষ্ট করে দেখা যাবে কোন প্রযোজক চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাংক ঋণ পাননি বা কোন ছবিকে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়নি।  শুধু তাই নয় এই খাতে  উল্লেখ করার মতো বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়নি।  সুতরাং, বলা যায় শিল্পের কোন সুফল পাচ্ছেন না নির্মাতা, প্রযোজকরা।

এই যে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপনে বিভাজন, রেষারেষি কিংবা শিল্পের সুবিধা না পাওয়া- এসবই প্রমাণ করে দেয় চলচ্চিত্র কেবল চলচ্চিত্রই রয়ে গেছে,  শিল্প হয়ে ওঠেনি আজও।  শিল্প ঘোষনার পরও যদি এই খাত শিল্পের কোন সুযোগ সুবিধা না পায় তাহলে অর্থ খরচ করে খাওয়া-দাওয়া, নাচগান করে দিবসটি উদযাপন করে কোনো লাভ নেই।  বরং দিন শেষে কিন্তু প্রাপ্তির খাতায় শূন্যই থেকে যাবে।

লেখার প্রথমে উল্লেখিত উক্তিটি আলমগীর কবির প্রায় তিন দশক আগে করেছিলেন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে আশাবাদী ছিলেন বলে হয়তো এমনটি বলেছিলেন।  তিনি যদি আজ এই দিনে বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি কথাটি বলার আগে অন্তত পাঁচবার ভাবতেন।

শেষ করতে চাই আশাবাদী হয়ে।  বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস গর্ব করার মতো। শুধুমাত্র অল্প কয়েকটি পদক্ষেপ পারে এদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের চেহারা বদলে দিতে।  চলচ্চিত্র আমাদের, তাই একে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টাই পারে চলচ্চিত্র শিল্পের স্থবির অবস্থা দূর করতে।