চাঁদপুরের বৃদ্ধ রিক্সাচালক আবুল কালাম মালের জীবনের গল্প!

রিফাত কান্তি সেন
Published : 14 August 2016, 05:05 PM
Updated : 14 August 2016, 05:05 PM

দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে রিস্কা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন চাঁদপুর সদরের বৃদ্ধ রিক্সাচালক আবুল কালাম মাল। বয়সের ভারে নূইয়ে পরেছে মাথা,তবু শিড় দ্বারা টান করে ৭০ ছুঁই ছুঁই বয়সে ও রিক্সার প্যাডেল চেপে চলেছেন আবুল কালাম মাল।

চোখে মুখে ক্লান্তির ছোঁয়া, শক্তিও লোপ পেতে শুরু করেছে। হাতের রগগুলোও ফুলে উঠেছে। বয়সের ভারে চামড়াও বটতে শুরু করেছে। তবু জীবন সংগ্রাম অতিবায়িত করতে এ বৃদ্ধ বয়সেও রিস্কা চালিয়ে জীবন সংগ্রাম অতিবায়িত করছেন তিনি।

সংসার নামক বটবৃক্ষের তলায় পৃষ্ঠ আবুল-সংসারের ঘানি টানতে এ বৃদ্ধ বয়সেও রিক্সা চালাতে হচ্ছে। আবুল কালামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ময়ামায়া এলাকায়।তিনি জানালেন মহামায়া মালের বাড়ি তার গ্রামের বাড়ি।রাত্রি যাপন করেন চাঁদপুর সদরেই। তার পিতার নাম আবদুর গফুর মাল। দুই ছেলে তিন মেয়ের জনক আবুল কালাম। ঘরে বৃদ্ধ স্ত্রী। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েকে ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি করাতে ও চেয়েছিলেন। মেঝটা পড়ে না। দারিদ্রতার কবল ঘ্রাসে নিজে পড়ালেখা করেননি, দারিদ্রতা তার সন্তানদেরও পড়ালেখা করার সুযোগ দেয়নি!

প্রতিবেদক রিক্সায় উঠলে তাকে তার দুঃখের কথা গুলো বলতে শুরু করেন। শহরের মিশন রোডস্ত থেকে রিক্সায় উঠলে প্রতিবেদকের সাথে বৃদ্ধ আবুল তার জীবনের অসাহায়ত্বের কথাগুলো অনর্গল বলতে থাকেন। বাবা আমার ছবি তুলবেন, বাসা থিকা একটা পরিস্কার জামা পইড়া আসি! কিছু লাভ হইবো তো বাবা!

এমন করেই আবেগ পরিপূর্ন কথাগুলো বলছিলেন আবুল। আবুল কালাম প্রতিদিন শহরে রিস্কা চালিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ইনকাম করেন।এই টাকা থেকে ই রিস্কা ভাড়া ও প্রদান করতে হয়। এ টাকায়ই চলে তার সংসার। আবুল কালাম খুব গর্ব করে বলেন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করে রুজি করে খাই। সংসারে অভাব তবু খারাপ কাম করিনা বাপু। নূন আনতে পান্তা পুড়ায়-তবু হালাল রুজি কইরা চলি।অহন আর বয়সের ভারে রিস্কা টানতে পারি না বাপু।

হেদিন দেহেন না রিস্কা থিকা পইড়া হাত ছোলাইয়া ফালাইছি। ভালা-মন্দ খাইতাম পারি না।পোলা-পাইন গুলারে ও ভালা মন্দ খাওয়াইতাম পারি না। শইল্লে শক্তি ও নাই।মানুষ তো জোয়ান রিস্কা চালক খোঁজে।অহন তো আমার কদর কম! আমাদের চারপাশে যখন হাজারো চাটুকার-দূর্নীতিবাজদের আনাগোনা।

ঠিক তখন সত্তোরোদ্ধ বৃদ্ধ বয়সের আবুল কালাম রিক্সা চালিয়ে প্রমাণ করেছেন ভাল কাজ করেও জীবন চালিয়ে নেয়া যায়। হয়তো সংসারে অভাব। দু'বেলা ঠিকমত জোটে না দু'মুঠো খাবার।তবুতো সৃষ্টিকর্তা আবুল কালামদের মত মেহনতি মানুষেরদের জীবনযুদ্ধে আজও টিকিয়ে রেখেছেন। বিত্তবানদের উচিত এরকম বৃদ্ধ আবুল কালামদের পাশে দাঁড়ানো।