ঐ শিশুগুলোই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে

রিফাত কান্তি সেন
Published : 13 Sept 2016, 06:35 PM
Updated : 13 Sept 2016, 06:35 PM

ভাবা যায় এক ঝাঁক উদ্যেম তরুণী দেশের হয়ে বুট পায়ে লড়ছেন। তাও আবার প্রীতি ম্যাচ নয়। খেলেছে সদ্য অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বের খেলায়। যেখানে প্রতিপক্ষ ইরান, চাইনিজ তাইপে, সিঙ্গাপুর, আরব-আমিরাত, কিরগিজস্তান!

কিন্তু তাতে কি বিধ্বংসী বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য। পাঁচটি ম্যাচে একটিও হার নেই। উলটো গোলের বন্যা ভাসিয়েছেন নারী ক্ষুদে ফুটবলাররা। কিরগিজস্তানকে তো এমন নাকানি -চুবানি দিলো যে গুণে গুণে দশটি গোল হজম করিয়েছে তাদের। শুধু কি তাই এই ছোট্ট কোমলমতি শিশুগুলোর ফুটবল কারুকার্যে বিস্মিত করেছে গোটা বিশ্বকে। লড়েছে কৃষ্ণা রানী, সানজিদা, তহুরা, তাসলিমার, শামসুন্নাহার, মার্জিয়ার মত টেলেন্টেড ক্ষুদে ফুটবলার।

ইতিহাস গড়ে দিয়ে বাংলার বাঘিনী আখ্যায়িত নারী ফুটবলাররা। আশ্চর্য হলো এই যে সাফল্যে এটা কোন ধনীর হাত দিয়ে আসেনি। এই সাফল্যে এসেছে পরিশ্রমি, শ্রমজীবী, দিনমজুর ঘরের মেয়েদের হাত ধরে। পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছে অঁজো পাড়া গাঁয়ের এই উদ্যেম তরুণীরা।

প্রথম আলোর সাংবাদিক, কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক প্রেস বক্সে বার বার বলছিলেন ঐ যে মেয়েগুলো দেখছেন এরা বেশীরভাগই দিনমজুর পিতার ঘরের সন্তান। অতি দরিদ্র ওরা। ওদের পৃষ্ঠপোষকতা করলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো তারা।

কৃষ্ণা রানীর জীবনের গল্পটা একটা অনলাইন পোর্টালে পড়লাম। যার হেডলাইন্স ছিলো— eibela.com/mobile/article/-মাত্র-এক-কক্ষের-সেই-পর্ণকুটিরে-তাদের-গাদাগাদির-করে-থাকেন-কৃষ্ণা-রানী-সরকার।


বাবা কৃষিকাজ করেন। কৃষ্ণা বাড়িও এক অজঁপাড়া গায়ে। ঢাকা থেকে বাসে টাঙ্গাইল হয়ে এলেঙ্গা নেমে গোপালপুরের গাড়ি ধরতে হয়। গোপালপুর বাজার থেকে অসমতল পথে সাত কিলোমিটার ভ্যানে চড়ে উত্তর পাথুলিয়া গ্রামে পৌঁছানো। এ গ্রামেই কৃষ্ণার বেড়ে উঠা।তাদের ঘরের চালা দিয়ে নাকি এখনো বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি ঢুকে ঘর ভিজিয়ে দিয়ে যায়।

কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে যেদিন আমাদের মেয়েরা দশ গোলের বন্যায় ভাসিয়ে পুরো গ্যালারী মাতিয়ে রেখেছে,ঠিক সেদিন আমাদের জাতীয় দলের ছেলেরা নাকি মালদ্ধীপ এর সাথে পাঁচ খানা হজম করেছে! ভুটানের সাথে তাকি তারুন্যনির্ভর দল ড্র করেছে।অতচ এদের সাথে এক সময় হেসে খেলে জিতেছে দেশ।

গ্রামের অনেকে বলাবলি করে মেয়েরা আর কি করতে পারে।অন্যান্য দেশের মেয়েরা যে ফিট।জিতে যাবে তারা। আর ঘটলো তার উলটো, আমাদের কিশোরীরা পাত্তা ই দিলো না বিপক্ষে দলগুলোকে।এক কথায় হেসে-খেলে উল্লাসের জয়। গ্যালারি ভর্তি হাজার-হাজার দর্শক।করতালিতে মুখরিত চারিপাশ।বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এ জেনো মানুষের জোয়ার বসেছিলো। কিছু লোক টিভি পর্দার সামনে মনযোগ সহকারে বসে আছি। গোলের খেলা ফুটবল,আর সে গোল যদি নিজের দেশের ক্ষুদে নারী ফুটবলাররা দেয় তখন আনন্দের শেষ থাকে না।

বাঁধ ভাঙা উল্লাসে ফেটে পরে গোটা জাতি। কিন্তু দূর্ভাগ্য যারা দেশের এত বড় সম্মান অর্জনে নিরলস পরিশ্রম করলো তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে ছিলো লাঞ্চনা! লোকাল বাসে চড়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে কিছু বখাটে মানুষের অকথ্য ভাষা শুনতে হয়েছে তাদের।এমন কি গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষে বেড়ে উঠা কলসিন্দুর গ্রামের তরুনীদের স্কুল কতৃপক্ষের কাছে হতে হয়েছে হেনস্ত।তাসলিমার বাবাকে তো সেই স্কুলের জোবেদ স্যার বেধড়ক পিটিয়েছে। এমন কি হুমকি-ধমকিও দিয়েছে।


ভাগ্যিস মিডিয়ার বদৌলতে প্রশাসনের নিকট পৌছেছিলো সেই বীরদের হেনস্তের কাহীনি।আর তাই জোবেদকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। দেশের ভাবমূর্তি যারা এতটা বাড়ালো বিশ্বের বুকে তাদের হেনস্ত অপমান কতটা সন্তোষ জনক? এসি বাস তো দূরের কথা একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে গেলে হয়তো এই বিশ্রী ভাষায় গালাগাল শুনতে হতো না তাদের।

আসলে নারীকে এখনো কিছু মানুষ পিছিয়ে রাখতে চায়।বর্তমান সরকার নারী,পুরুষের সমান অধিকার করে দিয়েছে। বঙ্গমাতা ফজিতুল্লানেছা গোল্ড কাপের আয়োজন করেছে।খেলাধুলার ব্যাপারে খুবই ততপর মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুনেছি বাফুফের সাথে তিনি ও সংবর্ধনা দিবেন এই ভয়ংকর, বুদ্ধিদিপ্ত, অপ্রতিরোধ্য বাঘিনীদের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি থাকবে তিনি যেন এসব শিশুদের আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে যা যা পদক্ষেপ লাগে তা হাতে নেন। ঐ গরীব শিশুগুলোর পরিবারের দিকেও নজর দিতে হবে।দিনমজুর পিতাদের পক্ষে এই দৃঢ়চেতা নারীদের সামনে এগিয়ে নেয়াটা দুঃসাধ্য হবে। বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহব্বান জানাবো আমাদের এ প্রতিভাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।