চাঁদপুরের তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটার পলাশ সোম

রিফাত কান্তি সেন
Published : 29 Sept 2016, 01:04 PM
Updated : 29 Sept 2016, 01:04 PM

এখনো আপন নৈপুন্যে অনন্য চাঁপুরের উদিয়মান ক্রিকেটার পলাশ সোম। সুযোগ পেলে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন তিনি। চাঁদপুর সদরেই বেড়ে ওটা এক প্রতিভাবান ক্রিকেটার পলাশ সোম। ক্রিকেটকে ভালবেসে চষে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। দুর্ভাগ্য পর্দার অন্তরালের পলাশ সোম ভাল খেলে ও পৃষ্টপোষকতার অভাবে জাতীয় দলের হয়ে লড়ার সুযোগ পাননি।

১৯৮৮ সালে জোস্না রানী ও মানি চন্দ্র সোম এর ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন পলাশ সোম। চাঁদপুর সদরেই বেড়ে ওটা তার। স্কুল জীবন থেকে ই ক্রিকেটের প্রতি তার আশক্ততা। অনুর্ধ ১৩ ক্রিকেট দিয়ে তার খেলোয়ারী জীবন শুরু হয়।

স্কুল জীবন থেকে খেলাপ্রিয় এ ছেলেটি আজও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠ।চাঁদপুরের হয়ে খেলেছেন অনুর্ধ ১৩,১৫,১৮ চ্যাম্পিয়নশীপ,বিভাগীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্ট,তৃতীয় বিভাগ,দ্বীতিয় বিভাগ,প্রথম বিভাগ।২০০৮ সালে অনুর্ধ ১৯ স্কোয়াডে ডাক পেলে ও কোন এক কারনে বাদ পরে গিয়ে স্বপ্নটা,দুস্বপ্নে পরিনত হয় পলাশ সোমের।

একান্ত কথা হয় পলাশ সোমের সাথে

প্রতিবেদকঃ কেমন আছেন পলাশ সোম?

পলাশঃ ভাল,তবে দেশের হয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পেলে আরো ভাল থাকতাম।

প্রতিবেদকঃ ক্রিকেটের প্রতি ছোটবেলা থেকে ই তো আপনার ভাল লাগা।আপনার এই ক্রিকেটার হয়ে বেড়ে ওঠার গল্পটা যদি বলতেন?


পলাশঃ ১৯৯৯ সালে চাঁদপুর সরকারী কলেজ মাঠে প্রথম ক্রিকেটের হাতে খড়ি।এর পর ইন্টার স্কুল,তৃতীয়,দ্বীতিয়, প্রথম বিভাগ চাঁদপুরের হয়ে খেলেছি।খেলেছি অনুর্ধ ১৩,১৫,১৮.

প্রতিবেদকঃ আপনার অংশগ্রহন কৃত টুর্নামেন্ট, প্রতিযোগিতার নামগুলো বলুন।

পলাশঃ চাঁদপুরের হয়ে অনুর্ধ ১৩,১৫,১৮ খেলেছি।প্রথম বিভাগ,দ্বীতিয়, তৃতীয় বিভাগ খেলেছি।ইন্টার স্কুল টুর্নামেন্ট খেলেছি।খেলেছি চিটাগাং প্রিমিয়ার লীগ।এছাড়া চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কাপ থেকে শুরু করে সবক'টি টুর্নামেন্ট ওই সফলতার সাথে খেলে আসছি।

প্রতিবেদকঃ কোন কোন দলের হয়ে খেলেছেন?

পলাশঃ চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমী,চাঁদপুর অনুর্ধ ১৩,১৫,১৮ টিম,ক্লাব ক্রিকেটে ইন্দিরা রোড ঢাকা,কালীন্দি ক্রীড়া চক্র,শাহাজান সংঘ চিটাগাং, চাঁদপুর আবাহনি, মোহামেডন, গুয়াখোলা ক্রীড়া চক্র, শেখ রাসেল সহ ছোট বড় অনেক দলেই খেলেছি।

প্রতিবেদকঃ সেরা সাফল্য?সেরা মুহূর্ত?

পলাশঃ সেরা সাফল্য বলতে অনুর্ধ ১৮ বিভাগীয় পর্যায় ২০০৮,৯ সালে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ান, এবার দুবার ই আমি অধিনায়ক ছিলাম।৩ বছর ইন্টার স্কুল চ্যাম্পিয়ান।ন্যাশেনাল স্কুল টিমে খেলা।

সেরা মুহূর্ত, দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে গুলশানের অদিচি ক্লাবের বিপক্ষে একাই দশ জনকে উইকেট কিপার হিসেবে ডিসমিশাল করতে পারাটা খুবই আনন্দের ছিলো।

এছাড়া ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায় ৫ ম্যাচে করেছিলাম ৩৪৯ রান।

প্রতিবেদকঃ আপনার ক্রিকেটের স্কেল কি?

পলাশঃ ব্যাটিং,উইকেট কিপার,ফিল্ডিং।

প্রতিবেদকঃ কার অনুপ্রেরনায় এতদূর এগুলেন?

পলাশঃ প্রথমেই আমার মা,বাবা/ছোট মাসি (সাবিত্রী রানী ঘোষ) ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চাঁদপুর সংবাদ,নির্বাহী সম্পাদক সুদিপ্ত চাঁদপুর।আমার বড় ভাই (আশিষ কুমার সোম)সহ-সম্পাদনা সুদিপ্ত চাঁদপুর।

প্রতিবেদকঃ প্রিয় খাবার/রং/ভাল লাগা?

পলাশঃ খাবার বলতে খিচুড়ি খুব পছন্দের। প্রিয় রং লাল। ঘুরতে ভালবাসি।

প্রতিবেদকঃ শুনলাম আপনার দুইটি ক্লাব আছে যেখান থেকে তরুন ক্রিকেটার এবং দারিদ্র মানুষের কল্যানে কাজ করা হয়?

পলাশঃ হ্যা, আমার একটি ডি,এস্ক ক্লাব,আরেকটি অঙ্গিকার নামের ক্লাব রয়েছে।ঐ ক্লাবের সদস্যরা সামাজিক কাজ করে বেড়ায়।

প্রতিবেদকঃ আপনি রাজনীতি করেন শুনলাম তো রাজনীতিতে কেনো ঢুকলেন?

পলাশঃ বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসি তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করি।আমি চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ – সম্পাদক।

প্রতিবেদকঃ প্রিয় খেলোয়ার /দল?

পলাশঃ আফতাব,শচিন,অলোক-কপালী, গ্রীলকিষ্ট।দল -বাংলাদেশ।

প্রতিবেদকঃ ফুটবল খেলা দেখেন?কোন দল সাপোর্ট করেন? কোন ফুটবলার কে ভাল লাগে?

পলাশঃ দেখি,আর্জেন্টিনা, মেসি, নেইমার, রোনালদো।

প্রতিবেদকঃপ্রিয় ব্যক্তিত্ব?টিভি দেখেন?কোন চ্যানেল ভাল লাগে?

পলাশঃ ছোট মাসি -সাবিত্রী ঘোষ/শামীম স্যার আমার কোচ।

প্রতিবেদকঃ স্মরনীয় একটা মুহুর্ত বলুন।

পলাশঃ যখন অনুর্ধ ১৫ খেলছিলাম ঢাকা মেট্রো ব্লু এর বিপক্ষে চিটাগাং এ,সেদিন ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছিলাম। ৮২ রানের অপরাজিত ম্যাচে জিতেছিলাম।

প্রতিবেদকঃ সবচেয়ে খারাপ একটু মুহূর্ত?

পলাশঃ ঐ যে অনুর্ধ ১৯ দল থেকে ছিটকে পরা।সে ক্ষত আজ ও আমাকে কাঁদায়!আজ ও সেই কষ্ট আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

প্রতিবেদকঃ পাঠকের কাছে কি আপনার কিছু বলার আছে?

পলাশঃ আমি সকলের কাছে দোয়া চাই জেনো আমি দেশের হয়ে একদিন জাতীয় দলে খেলতে পারি।আমি মিডিয়া/রাজনীতিবিদ/ক্রীড়া সংগঠক সহ চাঁদপুরের সকল মানুষের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।নিজ প্রচেষ্ঠায় এতদূর এগিয়েছি। আমি আরো সামনে এগিয়ে যেতে আপনাদের সাহায্য প্রার্থনা করছি।


আলমারী ভরা ক্রেষ্ট আর ট্রফি,পুরস্কার জেনো পুরো ঘরটি ঘিরে রয়েছে পলাশ সোমের।সাফল্য অনেক, কিন্তু ব্যর্থতা ও তাকে আগলে রেখেছে। পৃষ্টপোষকতা, ভাগ্য কোনটাই তাকে ধরা দেয়নি! এতো ভাল খেলে ও জাতীয় দলের হয়ে না খেলতে পারার কষ্টটা তাকে আজও তাড়িয়ে বেরায়। তবে এবার তিনি সমস্থ প্রস্তুতি এবং নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলবেন। এর জন্য প্রয়োজন পলাশ সোমের জন্য কোন ভাল মানুষের পৃষ্টপোষকতা।

২০০৬ সালে এসএসসি পাশ করেন চাঁদপুর গণি মডেল হাই স্কুল থেকে। পুরানবাজার ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হলে ও খেলাধুলার পিছনে সময় দেয়ায় পড়ালেখা আর করা হয়ে উঠেনি।

চাঁদপুরের ছোট, বড় সকলেরই প্রিয় মুখ পলাশ সোম।জানালেন বড় ভাই,কাকা,মামারা যেমন আদর করেন তাকে তেমনি তিনি ও তাদের শ্রদ্ধা করেন,ছোটদের ভালবাসেন। এমন প্রতিভাবান ক্রিকেটার চাঁদপুরের জন্য গর্ব,এই গর্বকে চিরদিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে ক্রীড়ামদী মানুষের পৃষ্টপোষকতা, সাহায্য আর মাথায় হাত রেখে জানান দেয়া উচিত পলাশ এগিয়ে যাও চাঁদপুর বাসী নয় পুরো বাংলাদেশ আছে তোমার সাথে।