হেরে যাওয়া মানুষের পাশে কেউ হাঁটে না!

রিফাত কান্তি সেন
Published : 30 Dec 2016, 10:20 AM
Updated : 30 Dec 2016, 10:20 AM

ভাবছিলাম কিছু লিখবো না।কিন্তু না লিখলে যে মনের ভাব প্রকাশ করা হবে না।এসব লেখা ছাপবে না কোন পত্রিকা।


আজ অনেক শিশু পি,ই,সি-জে,এস,সি,জে,ডি,সি পরীক্ষায় পাস করেছে।পত্রিকা গুলো খুললে কাল আনন্দের খবর পড়া হবে।খুশি,উল্লাস সবই থাকবে।শুধু থাকবে না ফেল করা,অকৃতকার্য, হেরে যাওয়া শিশুগুলোর গল্প!


আমরা অনেকেই ব্যস্ত পাস করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে। অনেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলবে অমুক ছেলেটা-মেয়েটা পাস করতে পারে নাই! ডাব, ভূয়া শিক্ষার্থীসহ তকমা লাগানো শত অহেতুক মন্তব্য। কিন্তু কেউ প্রশ্ন করবো না কেনো শিশুগুলো এভাবে ঝড়ে পড়লো?ওরা কি পাস করতে পারতো না? ওরা কি দেশের সম্পদ নয়?

আমাদের ঐ মানুষগুলোর বড় অভাব সমাজে। যারা মানুষকে উৎসাহ দিবে, একটু হাল ধরতে উদ্ভুদ্ধ করবে। একটু মাথার উপর হাত রেখে বলবে, তুমি পারবে! রাতে একটা ছেলে বাজারে হাঁটছিলো।ছেলেটা বাবা সহ মাছে'র ব্যবসা করে আবার বিদ্যালয়ে ও যায়। আমাকে দেখে লুকাচ্ছিলো।আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম কিরে কী খবর?

ছেলেটা নিচের দিকে চেয়ে বললো ১৭ থেকে ২৭শে চলে গেছে রোল নং। একটা বিষয় ফেল করেছে। সে এবার সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টমে। বললো, স্যার আমি অজ্ঞা বিষয় ধরা খাইছি, ইংরেজি। বললাম, আর সব বিষয় তো পাস করেছিস। খুব আগ্রহ নিয়ে বললো, হ স্যার।

[বিঃদ্রঃ আমি ফরিদগঞ্জে'র কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালিন একজন শিক্ষক ছিলাম কয়দিন আগে।]

হঠাৎ করে তার বাবাও আসলো সামনে। বলে উঠলো, হলাডারে প্রেইভেট হরান দরকার কেন স্যার? আর লগে এতটু সময় দেয়। গরীব মানুষ তো! মাছ বেছি কোন রকমে সংসার চলে। আই যাইয়ুম স্কুলো,স্যার গো লগে দেহা করিনা ডরে। কিছু যদি কয়!


আমি হেসে দিয়ে বললাম, আপনার ছেলে তো 'মেধাবি'। ১৩ বিষয়ের মাঝে ১২ বিষয় পাস করেছে। মাত্র তো একটি বিষয়ে ফেল সে।একটু সচেতন হোন।বাসায় পড়ে কিনা একটু নজর দিন।ভাই প্রাইভেট পড়ুক আর যা ই করুক বাসায় পড়তে হবে। স্ট্রাগল করে ছেলেটা বড় হচ্ছে এটা।এটা ব বিশাল একটা ব্যাপার। ছেলেটা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছিলো আমার কথা। বললাম, সামনে তো এইটের জেএসসি। বাসায় একটু ভাল করে পড়, তুই পারবি!

তার বাবাকে বললাম, আমি খুব খুশি হয়েছি আপনার ছেলে স্কুল জীবন থেকে স্ট্রাগল করছে শুনে। মনে রাখবেন ছেলেকে শিক্ষিত করতে পারলে আপনার সম্মান বেড়ে যাবে।
হাসি দিয়া কইলো, স্যার পোলায় হিসাব হিক্কা গেছে। আই তো হড়ালেহি হারি না। হোলায় মাছের হিসাব কইত্তো হারে।

বললাম, দেখলেন তো খুব গর্ব নিয়ে কথাটা বলতে পারছেন।

ভাল থাকবেন। আর স্কুলে আসবেন। আমি প্রধান শিক্ষককে বলে ভাল সুযোগ করে দেয়ার চেষ্টা করবো।

এভাবেই একটি উৎসাহ বদলে দিতে পারে একটি শিশুর ভবিষৎ। আমি জানি সে ভাল ছাত্র নয়! কিন্তু আমি এও জানি ও ভাল মানুষ। ভাল ছাত্র আর ভাল মানুষ এক কথা নয়।

ছেলেটা পড়ালেখায় খারাপ হতে পারে, কিন্তু অন্যদিক থেকে তো সে ক্লাসের সবার থেকে এগিয়ে।সে এই ছোট বয়সে মাছের ব্যবসা সমন্ধে জানে।

আমি বিশ্বাস করি মানুষ'কে একটু উৎসাহ দিলে সব সম্ভব। আমি নিজেই তার উদাহরণ। অনেক পত্রিকা যখন আমার লেখা ছিটকে ফেলে দেয় তখন এই বিডিনিউজ২৪ এর ব্লগ পাতায় ঠিকই এক হতভাগ্য লেখকের সামান্য লেখা ছাপা হয়।

ভুলে যাবেন না টমাস আলভা এডিসনের সেই বিখ্যাত কাহিনী। স্থুল,বুদ্ধিসম্পূর্ন হয়েও মায়ের একটু উৎসাহে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হতে পেরেছিলো। সেদিন মা যদি স্কুলের শিক্ষকের সেই অবমাননা জনক চিঠি পড়ে শুনাতো তবে হয়তো আজকের এই টমাস আলভা এডিসনকে বিশ্ব পেতো না। অবহেলা নয়,শিশুকে উৎসাহ দিন,আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষৎ।

ছবিগুলো বিডিনিউজ২৪ এবং ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত।