আমাগো কষ্টের কথা কি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছাইবো?

রিফাত কান্তি সেন
Published : 27 Jan 2017, 05:12 AM
Updated : 27 Jan 2017, 05:12 AM

খোলা আকাশের নীচে প্রচন্ড রৌদ্রকে উপেক্ষা করে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক। মাটিতে বসেই পাঠক্রম চলছে কোমলমতী এসব শিশুদের। আবার বৃষ্টি হলে যন্ত্রণাটা যেন মাত্রাতিরিক্ত।


ছবিটি কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠক্রমের চিত্র।

১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়। ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া স্কুলটিতে না লাগলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যালয়টি এগিয়ে যাচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে বোর্ড পরীক্ষাগুলোতে ভালো ফলাফল করে চলছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ছয়শ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণিতে তিনটি গ্রুপ বিভক্ত।

বিদ্যালয়টিতে তিনটি ভবন থাকলেও একটি জরাজীর্ণ। দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনটির উপরের তলায় দুইটি কক্ষে পাঠদান চলে। নিচের দুই কক্ষ শিক্ষক মিলনায়তন। পাশের পুরনো ভবনটিতে তিন শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হলেও গ্রুপ ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষকদের বিপাকে পড়তে হয়।

কারণ হিসেবে প্রধান শিক্ষক সমরেন্দ্র মিত্র বলেন, বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়শ শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য পাঁচটি কক্ষ বাধ্যতামূলক। এছাড়াও গ্রুপ বিষয়গুলো নেয়ার জন্য প্রয়োজন আরো কয়েকটি কক্ষ। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও মানবিকের শিক্ষার্থীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। পাশের যে কক্ষটি দেখছেন তার অবস্থা তো নিজের চোখেই দেখছেন কতটা নাজুক! এমন অবস্থায় ক্লাস করাটা খুবই দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিরুপায় হয়ে প্রচন্ড রৌদ্রের মধ্যেও শিক্ষকরা পাঠদান কার্যক্রম করছে। সত্যি এটা খুবই কষ্টের একটা বিষয়। শুধু ভবনের অভাবে একটি বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে না।

উক্ত বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও মানবিকের শিক্ষার্থীরা বলেন,আমরা একটু সুষ্ঠু পরিবেশে পাঠক্রম চালাতে চাই। রৌদ্র, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে আমরা নিদারুণ কষ্টে পাঠক্রম চালাই। আমাদের খুবই কষ্ট হয়। আমাদের দেখার কি কেউ নেই?

শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা সব সময় ভাল কিছু উপহার দেয় জাতিকে। কোন বইয়ে যেনো পড়েছিলাম, "একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার মেধাকে বিনষ্ট করে দাও।"


যে শিক্ষার্জনে এতো বৈরিতা সেই শিক্ষা কতটা মধুর হয় সেটাও তো প্রশ্ন জাগে। অঁজো পাড়াগাঁয়ের বিদ্যালয় কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়। ভবন সংকটে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা এখন পড়েছে বিপাকে। বিষয়টি নিয়ে যেমন এলাকার বিত্তবানদের ভাবা উচিত, তেমনি প্রশাসনেরও উচিত এগিয়ে আসা বিদ্যালয়টির অবকাঠামো মেরামতের জন্য।

তবে শিক্ষার্থীরা বলেন, "আমাগো প্রধানমন্ত্রী অনেক ভালা। যদি তার কানে আমাগো এই কষ্টের কথা পৌঁছাইতো তবে ঠিক আমরা একটি ভবন পাইতাম। আমাগো শিক্ষা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হইতো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাগো কথা হুনতো।"

প্রধানমন্ত্রীর কানে এ খবর পৌঁছাবে কি না তা জানি না, তবে বিত্তবান ও প্রশাসনের উচিত স্কুলের এসব কোমলমতী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। নির্মাণ করে দেয়া উচিত একটি ভবন।

শিক্ষা একটি জাতিকে উন্নতির শিখড়ে নিয়ে যেতে পারে, তাই সেই শিক্ষার্জনে অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা সত্যি মেধাবিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।