সুষ্ঠু বিচার না হলে সাংবাদিকরা মার খেতেই থাকবে

রিফাত কান্তি সেন
Published : 29 Jan 2017, 01:35 AM
Updated : 29 Jan 2017, 01:35 AM


"মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ"- কথাটি যেনো প্রবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছে হলেই মারবেন, কাটবেন, হ্যান্ডকাপ পড়াইয়া চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াইবেন। "সাংবাদিক" নামটি শুনলে কেন যেনো পুলিশের দম ফাঁটে, কলিজায় ফোঁড়া ওঠে! ইচ্ছে হলেই কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের নির্যাতন! এটা কখনোই মানা যায় না। গত ২৬ জানুয়ারি শাহবাগে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন এটিএন নিউজ এর দুই সংবাদকর্মী।

বেধড়ক পিটিয়ে তাদের ক্ষান্ত হননি পুলিশ, সাথে ছিলো গালাগালও। ফলস্বরূপ একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পুলিশ প্রশাসন! এটা কোন ধরনের শাস্তি এবং কত বড় মাপের সেটা আমার ধারণা নাই তাই বলতেও চাই না।

কিন্তু পুলিশের এমন রেকর্ড নতুন কিছু নয়। পুলিশ চাইলে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে না। 'আইন সকলের জন্য সমান' এ কথাটি যেন মানতে নারাজ পুলিশ নিজেরাই।

সব পুলিশ খারাপ এমনটা নয়, তবে একটি নিছক পুলিশের সদস্য এমন অপতৎপরতার সাথে অহরহ জড়িয়ে পড়ছেন। এটা সত্যি লজ্জাজনক! 'পুলিশ জনগণের বন্ধু'- সেই বন্ধু যদি শত্রুর মত আচরণ করে তবে আমাদের সাধারণের কি উপায় হবে?

সব সাংবাদিক ভাল এমনটিও বলছি না, তবে যাদের উপর হামলা হচ্ছে তারা তো খারাপ না! কিংবা খারাপ কাজের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে তাদের বেধড়ক পিটিয়েছে পুলিশ- এমনও নয়! আমরা যারা লেখালেখি করি তারা তো ভাল কোন খবর পাওয়ামাত্র তা দেশবাসীর সামনে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরি। তাদের সাফল্যের গল্প শুনাই। কিন্তু তারা যদি আমাদের উপর এমন অমানবিক নির্যাতন চালায় তবে তো আমাদের একদিন লেখালেখি বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে।

আজ রাস্তায় ধরে পিটছে,কাল ঘরে গিয়ে পিটাবে,আমরা অসহায়ের মতো মার খেতেই থাকবো। সাংবাদিক সমাজের এখনও সময় আছে, একতাবদ্ধ হউন। আমাদের হাতে কলম, আর ওদের হাতে অস্ত্র। তবে অস্ত্রের চেয়েও কলমের শক্তি অধিক তা আমরা গত কয়েকযুগের আন্দোলন, সংগ্রাম, আর ত্যাগের বিনিময় জেনেছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তো সাংবাদিক বান্ধব প্রধানমন্ত্রী। তিনি তো বন্ধুর মতই জানেন সাংবাদিকদের। কিন্তু পুলিশ কতটা নৈতিকতার সাথে আমাদের ভালোবাসেন সেটা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু সাংবাদিক নয় ইদানিং পুলিশের কার্যক্রম গোটা দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। পুলিশের শত ভালো অর্জন গুটিকয়েক লোকের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হতে চলেছে। দেশে আইনের শাসন বিদ্যমান, যার বড় দৃষ্টান্ত সাত খুন মামলার আসামীরা মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত হয়েছেন।

পুলিশের অনেক সদস্য ভালো কাজ করে যাচ্ছেন, যাদের মধ্যে চাঁদপুরের এস পি শামসুন্নাহার, নঁওগার এস পি মোজাম্মেল, লক্ষ্মীপুরের এস পি, কুমিল্লার এস পি অনেক ভালো কাজ করেন। তবে প্রশ্ন দেখা দেয় পুলিশের নিম্ন পদগুলোর সদস্যদের কার্যক্রমে। তবে ক্লোজ না করে যদি বিচারের মাধ্যমে কঠিন শাস্তি প্রদর্শন করা হয় তবে অচিরেই পুলিশের মধ্যে সহনশীলতা ফিরে আসবে। পুলিশেরও ভাবা উচিত যে তারা কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়।

————-

রিফাত কান্তি সেন
বিভাগীয় ক্রীড়া সম্পাদক, দৈনিক সুদিপ্ত চাঁদপুর
নাগরিক সাংবাদিক, ব্লগডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
কলাম লেখ- এইবেলা ডট কম।