পহেলা বৈশাখ মানেই বাঙালির বর্ষবরণ

রিফাত কান্তি সেন
Published : 13 April 2017, 04:51 AM
Updated : 13 April 2017, 04:51 AM

'ভুলে পুরাতন, চলো জড়াই বুকে আগামীর সকাল, করি নতুনেরে আহব্বান! আজ নব প্রভাতের আরম্ভে, বৈশাখে মাতি উল্লাসে, গাই নবজীবনের গান।' কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বলেছিলেন, 'মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।'

পৃথিবীর খুব কম জাতিরই নিজস্ব নববর্ষ রয়েছে। বাঙালিরা সেই গর্বিত জাতি যাদের রয়েছে নিজস্ব নববর্ষ, রয়েছে নিজস্ব ভাষা, রয়েছে শক্তিশালী বর্ণমালা। আর একমাত্র জাতি যারা কিনা ছয়টি ঋতুকে বরণ করতে পারেন। বাঙালিদের সবচেয়ে বড় গর্ব করার কথা হলো বিশ্বে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যার কিনা রয়েছে ছয়টি ঋতু। ঋতু বৈচিত্রের খেলায় প্রতি বছরই বৈশাখ কে বরণ করে নেয় বাঙালিরা। বৈশাখ বাংলা মাসের প্রথম মাস, যা কিনা ঋতু বৈচিত্রে গ্রীষ্মকাল

বৈশাখ বরাবরের মত আসলেও সেই আমেজ এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না আধুনিকতা মানুষকে অনেকটাই যান্ত্রিক করে তুলেছে। মানুষ এখন আধুনিকতার মারপ্যাঁচে আঁটকে আছে। ইটপাথরের দেয়ালে নিজেকে অবরুদ্ধ করে এক ভিন্ন জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলেছে তারা

পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য সংস্কৃতির ধারক হিসেবে আজও বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় আগলে আছেপহেলা বৈশাখ এলেই ব্যবসায়ীদের ধুম পড়ে হালখাতা অনুষ্ঠানের পহেলা বৈশাখে রমনীরা নানা সাজে সজ্জিত হয়ে ঘুরে বেড়ায় আপন মনে রবীন্দ্রনাথ পহেলা বৈশাখ কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, 'এসো হে বৈশাখ এসো এসো' গানটির মাধ্যমে

পহেলা বৈশাখের আগের আমেজ এখন আর নেই বললেই চলে। আমরা অনেকটাই পরসংস্কৃতি নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। আমরা নিজস্ব সংস্কৃতিকে তেমন একটা প্রাধান্য দিচ্ছি না নানা অযুহাতে

পহেলা বৈশাখে আমরা ছোট বেলায় গাঁয়ের মেলায় যেতাম। সেখানে মাটির হাঁড়িপাতিল, খেলনা মিষ্টিমন্ডা কিনতাম। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মেলায় এসে আনন্দফুর্তিতে ফেটে পড়তাম পান্তাইলিশের প্রচলন থাকলেও গ্রামীণ মানুষের পান্তা ভাতের সাথে ইলিশের দেখা তেমন পেতো না। কেননা আকাশচুম্বী দরের কারণে ইলিশ কেনা হতো না অনেকেরই

তবে যা-ই হোক চওড়া দামে ঝাটকা ইলিশ দিয়ে পান্তা ইলিশ খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই উত্তম। কেননা ঝাটকা মাছ দেশের মৎস সম্পদের (ইলিশের) জন্য হুমকি স্বরুপ

বৈশাখী মেলায় হরেক রকমের মাটির তৈজসপত্র, খেলনা সাথে বুট, বাদাম, মুরুলি, জিলাপি সহ সুস্বাদু খাবারের পসড়া বসতো। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ মেলা দেখতে ছুটে আসতো। ফরিদগঞ্জের বিখ্যাত মেলা হতো আষ্টা মেলা। সেখানে আমরা বন্ধুরা দল বেঁধে যেতা। এ এক অনাবিল আনন্দ ছিলো তখন। বৈশাখকে বরণে শিশুদেরও বাঁধ ভাঙা উল্লাস আসে। তবে শহুরে শিশুরা মেলা বলতে বুঝে হয়তো কোন কর্নসার্ট নয়তো আধুনিক সব খেলনার পসড়া। আর গাঁয়ের শিশুরা মেলা বলতে বুঝে মেঠো প্রান্তরে ছুটে বেড়ানো, নাগর দোলায় ঘোরা, বাঁশি আর ছোটাছুটি মেলা প্রাঙ্গনে

বৈশাখ এলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে কুমোর সম্প্রদায়। মাটির জিনিসপত্র তৈরিতে তারা ব্যস্ত সময় পার করে। বৈশাখের মেলায় প্রদর্শিত হয় মাটির তৈরি খেলনা। বিশেষ করে ঘোড়া, হাতি, মাটির তৈরি ব্যাংক সহ মৃৎ শিল্পের নানা নিদর্শন

পহেলা বৈশাখ সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখশান্তি সমৃদ্ধি। সেই কামনায় এবারের মত বিদায়

ছবিঃ সংগৃহীত