এক অসহায় নাগরিকের গল্প!

রিফাত কান্তি সেন
Published : 15 July 2017, 05:05 AM
Updated : 15 July 2017, 05:05 AM

মানুষের কাছে খোঁজাখুঁজি করেই সংসার চলে অলি কবিরাজের।প্রতিদিন কত মানুষের যে কত কথা হুনতে হয় তার ঠিক নাই! অহন আর ভিক্ষা করতে ভাল লাগে না।মাইনসের তে টেয়া চাইতে ও অহন লজ্জা লাগে।কেউ যদি একটা চারকি-বারকি দিতো আর ভিক্ষা করতাম না। ঠিক এমন করেই কথাগুলো বলছিলেন চাঁদপুর জেলার বালিয়া ইউনিয়নের অলি কবিরাজ। বয়স সাত চল্লিশ কি আট চল্লিশ।পায়ের গোড়ালির হাড় বাঁকা।পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন অতিবায়িত করছেন তিনি। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধি অলি জীবন যুদ্ধে পরাজিত এক সৈনিক।

এক সময় বাদাম বিক্রি করলে ও এখন আর সে ব্যবসা অতটা ভাল যাচ্ছে না। তাই মানুষের কাছে হাত পেতেই চলে তার সংসার। দারিদ্রতা তাকে রাস্তায় নামিয়েছে। তাই তো লোক-লজ্জার কথা চিন্তা না করেই হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন মানুষের কাছে। কেউ দেয় আবার কেউ কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েই ক্ষ্যন্ত থাকেন না।মাঝে মাঝে দু-চার ঘা বসিয়েও দেয় শরীরে।


'অলি' বিবাহিত জীবনে চার কন্যা সন্তানের জনক। জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি সমন্ধে ধারনা নেই বলেই অভাবের ঘরেও অতিরিক্ত সন্তানের জন্ম। অলির চার মেয়ের মাঝে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।অন্য একটি মেয়ের বিয়ের উপযুক্ত।এক মেয়ে গৃহকর্মীর কাজে নিযুক্ত। অভাবের সংসারে নিজে যেমন পড়ালেখা শেখেন নি,তেমনি নিজ সন্তানদের ও বিদ্যার আলোয়;আলোকিত করতে পারেননি!

অলির সংসার চলে স্কুল,কলেজে,হাট-বাজার ও শহরের মানুষের কাছে হাত পেতে। বহু মানুষের কাছে হাত পাতেন অলি।অনেকে দেয়,অনেকে আবার দেয়া-নেয়ার মাঝেও প্রার্থক্য খুঁজে বেড়ান। বয়স বাড়ছে, প্রতিবন্ধি জীবন নিয়ে যেখানে নিজে বেঁচে থাকতে কষ্ট,ঠিক সেখানে পরিবারের অন্য সদস্যদের জীবন বিপন্নের আসংখ্যা প্রকাশ করেছেন তিনি।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, জেলার ভিক্ষা বৃত্তি নিরসনে ওতপ্রাতে ভাবে কাজ করে চলেছেন।তারই ধারাহিকতায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে তালিকাও করা হচ্ছে। প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করেন,'আপনি কি ভিক্ষুক লিষ্টে নাম উঠিয়েছেন?'

তিনি বললেন, "না"। তিনি জানেনই না।পরবর্তীতে শাহাদাত হোসেন নামে একজন বলেন যে পাশের একটি দোকানে ভিক্ষুকদের লিষ্ট করা হয়। প্রতিবেদক ততক্ষনাৎ সেখানে পাঠিয়ে অলির ভিক্ষুক লিষ্টে নাম অন্তরভূক্ত করার ব্যবস্থা করেন। এক কপি ছবি আর ভোটার আইডি জমা দিলেই সম্পূর্ণ ভাবে ভিক্ষুক লিষ্টে নাম আসবে তার।

এক পর্যায়ে অলি বলেন,আমি আর ভিক্ষা করতাম চাই না! লেংড়া এই পা লইয়া আর কত খোড়াইয়া-খোড়াইয়া মাইনসের তে টেয়া চামু। তার চেয়ে বরং পুনর্বাসন করলে আমরা সুন্দর জীবন পামু। নয়তো আল্লায় আমারে উঠাইয়া লইয়া যাক।