চাঁদপুরের এসবি খাল দখল এবং বিপর্যস্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা

রিফাত কান্তি সেন
Published : 18 August 2017, 06:17 PM
Updated : 18 August 2017, 06:17 PM


সারাদেশ ভয়ঙ্কর বন্যার কবলে।কিছু অঞ্চলে বন্যা কেটে গেলে; আবার অন্য অঞ্চলে বন্যার দেখা দেয়। এমনিতেই নগর কেন্দ্রিক জীবনে আমাদের ভোগান্তীর শেষ নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানী শহরসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো ডুবে থাকে পানিতে। জলাবদ্ধতার নগরীতে পরিনত হয় শহর। সেই ধাক্কা কুলিয়ে উঠতে না উঠতেই ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস। এ যেনো মেঘ না চাইতে 'বৃষ্টি'। এগুলোতো রাজধানি শহরের গল্প। ছোট শহর গুলোরও যে একই অবস্থা। আশ্চর্যের বিষয় হলো সকল জলাবদ্ধতার মূলেই কাজ করছে খাল ভরাট, নদীর নাব্যতা সংকট, সুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা। ইদানিং দেখছি পুরো শহরের বর্জ্যগুলোরও ঠাঁই হচ্ছে নদীর বুকে। চাঁদপুর দেশের একটি অন্যতম ব্র্যান্ডিং জেলা।


জেলা শহরটি ছোট হলেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা। দূর্ভাগ্য শুধু এ শহরটি ও সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। দেশের বৃহত্তম দুই নদী, পদ্মা-মেঘনার পাশ ঘেষা শহর চাঁদপুর। রয়েছে ডাকাতিয়ার ও নীরব ছোঁয়া। এমনিতেই ভয়ঙ্কর দু'নদী। তার উপর আবার সাগরে পানি নামার ট্রানজিটও এ নদীগুলো। নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে সে পানি খালে ঢুকতো এক সময়। আর এখন সে পানি ঢুকে যায় শহরে, লোকালয়ে। খাল থাকলেই তো; পানি খালে আসবে। না, না খাল আছে তবে সেটা চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এক সময় আমরা শুনেছি খাল কেটে মানুষ কুমির আনে, এখন দেখছি খাল ভরাট করে মানুষ জলাবদ্ধতা আনে। প্রকৃতি খালগুলো ভরাট করেনি। করেছে কিছু খাল খেকো নর পিচাশ।

চাঁদপুরের এসবি খাল।একসময় যে খাল শহরের পানিকে বুকে আগলে রেখে জলাবদ্ধতা দূর করতো। সে খালই এখন চ্যাপ্টা হয়ে, ময়লা-আবর্জনা পঁচানো পানিকে লোকালয়ে পাঠিয়ে দেয়।


এবার এক নজরে এসবি খাল সমন্ধে কিছু তথ্য জেনে নেই।

শ্রীরামদি – বিষ্ণুদি খাল। চাঁদপুর শহরের দুটি মৌজা। দক্ষিনে শ্রীরামদী এবং উত্তরে বিষ্ণুদী। দুটি মৌজাকে সংযুক্ত করেছে এসবি খাল। চাঁদপুর শহরের বুক চিড়ে খালটি মেঘনা নদী থেকে পানি নিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে সরবরাহ করতো। এ খাল দিয়ে এক সময়ে বড় বড় পালতোলা নৌকা চলাচল করতো বলে জানান এলাকাবাসী। খালের পানি ছিল খুবই স্বচ্ছ। এলাকার মানুষ এ খালে গোসল করতো, দৈনন্দিন কাজ করতো। চাঁদপুর শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল ছিল এসবি খাল। ভূমি দস্যুদের লালসার দৃষ্টি এবং খালের পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোর মালিকদের কু-দৃষ্টি পড়ে খালটির উপর। পৌরসভার নিস্ক্রিয়তায় আশির দশক হতে খালের দুই পাশ দখল হতে থাকে। খালটি রুপ নিতে থাকে নালায়। এছাড়া চাঁদপুর শহরের যত সুয়ারেজ লাইন আছে সব এই খালের সাথে সংযুক্ত। পৃথিবীর কোন দেশের সুয়ারেজ লাইন এমন খালে দেয় কিনা সেটা আমাদের জানা নাই। এতে খাল এবং ডাকাতিয়া নদী হয়ে পড়ে দূষিত। ১/১১ সেনা শাসকের পর মেয়র মহোদয় খালটি দখল মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়ে অনেকটা সফল হন। তবে পুরোপুরি সফলতার মুখ দেখা যায়নি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা) থেকেও মানববন্ধন করা হয়।


খালটির দখল হয়ে যাবার কারণে শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। শুষ্ক মৌসুমে খালের ময়লা পানির দুর্গন্ধ শহরের পরিবেশকে বিপর্যস্ত করছে। এখনো অনবরত দখল হচ্ছে নালাটি। এক সময় হয়তো খালটি বিলিন হয়ে যাবে ইটপাথরের অট্টালিকায়। বিষয়টি নিয়ে কথা হয চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা আবদুল হাই এর সাথে। তিনি বলেন,'বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অচিরেই আমরা ব্যবস্থা নেব সাধারণ জনগনকে পাশে নিয়ে।' তিনি আরো বলেন,' যারা খালটি দখল করে আছে তারা দেশের ভাল চায় না। তারা প্রভাব খাটিয়ে খালটি দখল করে আছে। অচিরেই যদি এর একটি বিহিত না করা যায় তবে খালটি বিলিন হয়ে যেতে পারে এবং জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপলাভ করতে পারে।'

এসবি খাল ফিরে পাক তার হারানো যৌবন। প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠুক প্রকৃতি। অভিশাপ থেকে মুক্তি পাক শহরবাসী- এটাই প্রত্যাশা।